খুলনায় এক কেন্দ্রে ভোট বন্ধ, বিএনপিপ্রার্থীর ক্যাম্প ভাঙচুর  

ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পক্ষে ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করার অভিযোগ ওঠার পর খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

মাসুম বিল্লাহও সুবীর রায়বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2018, 06:39 AM
Updated : 15 May 2018, 06:41 AM

মঙ্গলবার সকাল ৮টায় ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী মেহের আলী রোডের ইকবাল নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (একাডেমিক ভবন) কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউনুচ আলী জানান, কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার বেলা ১২টার দিকে ওই কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে দিয়েছেন।

আরও অন্তত ৫টি কেন্দ্রের বাইরে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে ভাঙচুর ও গোলযোগের খবর পাওয়া গেছে।

সকাল ৮টায় ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে এ সিটি করপোরেশনের ২৮৯টি ভোট কেন্দ্রে একযোগে ভোট শুরু হয়। এর ঘণ্টাখানেক পর ইকবাল নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারদের ব্যালট পেপার সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ভোটারদের লাইনে অপেক্ষায় থাকা নুরুল ইসলাম বেলা ১০টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  “আমাদের বলা হচ্ছে ব্যালট পেপার নেই। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি। দেখি কতক্ষণ লাগে!”

ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পক্ষের লোকজন ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকরা। 

এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ভোটগ্রহণ বন্ধ কেন জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার খলিলুর রহমান বলেন,  “ব্যালট পেপার দিতে দেরি হচ্ছে। এখন দিচ্ছি।”

তিন ঘণ্টায় ২০ শতাংশ ভোট বাক্সে পড়েছে বলে ধারণা দিলেও তখন পর্যন্ত ব্যালটের কয়টি মুড়ি শেষ হয়েছে- সে প্রশ্নে স্পষ্ট কোনো উত্তর দিতে পারেননি প্রিজাইডিং অফিসার।

কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বেলা ১১টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার কাছে ব্যালট নেই। প্রিজাইডিং অফিসার সরবরাহ করলে দেব।”

ওই কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্ট কাকলী খান বলেন, “আমরা সকাল থেকে ভোট নিচ্ছিলাম। ১০টা পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবেই ভোট হয়। ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসে ৪/৫টি ব্যালটের মুড়ি নিয়ে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে চলে যায়।”

ভেতরে যখন এই পরিস্থিতি, কেন্দ্রের বাইরে তখন বিএনপির নির্বাচনী ক্যাম্পে ভাঙচুরও করা হয়।

এ ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী শমসের আলী মিন্টু বলেন, “যুবলীগ নেতা জাকির হোসেনের নেতৃত্বে, আওয়ামী লীগ নেতা এস এম কামাল হোসেনের উপস্থিতিতে এই ভাঙচুর হয়। পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে, বিজিবিও দেখা গেছে, তারা কিছু করেনি।”

এ বিষয়ে খুলনার সহকারী পুলিশ কমিশনার আল বেরুনী বলেন, “নির্বাচনী ক্যাম্প আচরণবিধি লঙ্ঘন ঠিক হয়নি। আমরা খোঁজ নিচ্ছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

জালভোটের অভিযোগ ওঠার ঘণ্টাখানেক পর প্রিজাইডিং অফিসারের কক্ষ বন্ধ পাওয়ায় সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকদের বাকবিতণ্ডা হয়।

পুলিশের উপস্থিতিতে কেন্দ্রের ভেতরে বিএনপির কর্মীরা হট্টগোল করে। কাছেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা যায়।

সোনাপোতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে বিএনপির নির্বচনী ক্যাম্পে পড়ে আছে ভাঙা চেয়ার

বেলা ১১টার দিকে সোনাপোতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে বিএনপির নির্বচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়।

স্থানীয় যুবদল নেতা আবুল বাশার ও বিএনপিপন্থি আইনজীবী নেতা অ্যাডেভোকেট আক্তার জাহান রুকু অভিযোগ করেন, স্থানীয় যুবলীগ নেতা জাকিরের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন এসে কেন্দ্রের বাইরে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে চেয়ার ভাঙচুর করে এবং কর্মীদের গালাগাল করে।  

দরুল উলুম মাদ্রাসার সামনে, আবদুল গণি বিদ্যালয় কেন্দ্রের কাছে এবং নিরালা আবাসিক এলাকায় আরও কয়েকটি কেন্দ্রের বাইরে বিএনপি প্রার্থীর ক্যাম্পে ক্ষমতাসীনরা ভাঙচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বাশার।

খুলনা সিটি নির্বাচনে ইসির পর্যবেক্ষক  দলের প্রধান সমন্বয়কারী ইসির যুগ্মসচিব আব্দুল বাতেন বলেন, “আমি অন্তত ২০টি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। সেখানে কেউ অভিযোগ স্বীকার করছে না। কিন্তু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার তথ্য গণমাধ্যম ও নানা সোর্সে পাচ্ছি। যেখানেই অভিযোগ পাচ্ছি, ছুটে যাচ্ছি।”

ভোটের ৩ ঘণ্টার পরিস্থিতি জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, “ভোটার উপস্থিতি রয়েছে। ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে নির্ভয়ে ভোট দিতে অনুরোধ করা হচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা উল্লেখযোগ্য কোনো অনিয়ম বা অভিযোগ এখনও দেখেননি।

‘দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া’ ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে বলে মন্তব্য করে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউনুচ আলী বলেন, “৫/৬টি কেন্দ্রের অভিযোগ এসেছে আমাদের কাছে। আমরা এ বিষয়ে কথা বলেছি। ১১২, ১১৩, ১১৫ নম্বর কেন্দ্রে এবং অন্য কেন্দ্রেও লোক পাঠিয়েছি। ইতোমধ্যে সে সমস্যাগুলোর সমাধান হয়েছে।”