তিনি বলেছেন, “নগরীর ৩০টি কেন্দ্র থেকে আমার পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। এসব কেন্দ্র সরকার দলীয় সমর্থকরা দখল করে নিয়েছে। মারপিট করা হচ্ছে। মহিলাদের আটকে রাখা হয়েছে। খুব খারাপ অবস্থা নগরীতে।”
মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে খুলনা সিটি করপোরেশনের ২৮৯টি ভোট কেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ৪ লাখ ৯৩ হাজার ভোটার এ নির্বাচনের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের নতুন নেতৃত্ব বেছে নেবেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মঞ্জু সকাল ৮টায় নগরীর মিয়াপাড়ার নিজ বাসা থেকে বেরিয়ে ছেলেকে নিয়ে টুটপাড়ায় বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করতে যান।
সেখান থেকে নিজের ভোট দিতে সকাল সাড়ে ৮টার পর নগরীর ২৭ ওয়ার্ডের রহিমা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রে আসেন ধানের শীষের এই প্রার্থী।
বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলার ৪ নম্বর ভোট কক্ষে ভোট দেওয়ার পর ব্যালট বাক্সের সামনে হাসিমুখে দুই আঙুল তুলে জয়ের চিহ্ন দেখানো মঞ্জু বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের ফল আমি মেনে নেব। কিন্তু ভোট ডাকাতি এবং এ ধরনের দখলের নির্বাচন আমি কোনোভাবে মেনে নেব না এবং জনগণও মেনে নেবে না।”
২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনি যাকে হারিয়ে খুলনার মেয়র হয়েছিলেন, সেই তালুকদার আবদুল খালেক এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী। আর গতবারের বিজয়ী প্রার্থীর বদলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবার ধানের শীষ তুলে দিয়েছে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর হাতে।
এছাড়া লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক, কাস্তে প্রতীকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) মিজানুর রহমান বাবু এবং হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুজ্জাম্মিল হক এবার মেয়র পদে লড়ছেন।
কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে মঞ্জু সাংবাদিকদের বলেন, “নানান ধরনের দুঃসংবাদে খুবই চিন্তিত। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে অভিযোগ আসতে থাকে ভোট কেন্দ্রে আমাদের পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। পোলিং এজেন্টরা গেলে তাদেরকে মারপিট করে তাদের কাগজপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।”
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা গেলে পরিস্থিতি পাল্টালেও পরে ‘একই রকম চিত্র ফিরে আসছে’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউনুচ আলীকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
“আমি নির্বাচন কমিশনকে বলব, এই নির্বাচন জনগণ চায় নাই। জনগণ চেয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। যেখানে সকল পক্ষই সমান সুযোগ পাবে। ভোটকেন্দ্রে থাকবে। … আমি মনে করি, এখনো সময় আছে, নির্বাচন কমিশন ও সরকার এমন একটি ইলেকশন উপহার দেবেন খুলনাবাসীকে, জাতিকে।”
বিএনপির প্রার্থী বলেন, “আমি আশা করব, যেসব জায়গায় আমার পোলিং এজেন্টদেরকে বের করে দেওয়া হয়েছে, সেসব জায়গায় আবার আমার পোলিং এজেন্টদের প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হোক।”
তবে যাই হোক, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার ঘোষণা দিয়ে মঞ্জু বলেন, “আমি দেখাতে চাই -বিশ্ববাসীকে, দেশবাসীকে- যে বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় না। সেই চিত্র দেখানোর জন্য অপেক্ষা করব। আমি তারপরও বলব, দেশে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক। দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হোক।
“যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ হচ্ছে ব্যালট; অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এছাড়া এক দলের নির্বাচন, এক দলের কর্তৃত্ব আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে।”
ভোটারদেরকে কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়ে মঞ্জু বলেন, “সবাই ভোটকেন্দ্রে যান। আমার কর্মীদের বলেছি, ভোটকেন্দ্রের সামনে যাওয়ার জন্য। পোলিং এজেন্টদেরকে বলব, তাদেরকে বের করে দেওয়ার পরও যেন তারা আবার ফিরে যান, চেষ্টা করেন।
“ভোটারদের প্রতি আহ্বান, দিনব্যাপী ভোট... আপনি আপনার ভোটটি দিতে যান। আপনি গেলেই ভোট অবাধ-সুষ্ঠু হবে। তা না হলে ভোট ডাকাতরা সুযোগ পাবে, ভোট ডাকাতি করতে।”
১৩, ১৫, ১৯, ২১, ২২, ২৫, ২৯, ৩০, ৩১, ৩৫ নম্বর কেন্দ্রগুলোতে সরকারি দল ‘প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আমি এখন সেসব জায়গায় যাব, এবং দেখব যে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় কি-না। আমি সারাদিনই থাকব। এরপরই আমি আমার পরবর্তী বক্তব্য দেব।”
নগরীর ৩০টি ভোট কেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টদেরকে বের করে দেওয়া এবং নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগও করেন তিনি।
“আমার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৩০টির মতো সেন্টারে আমার পোলিং এজেন্টদের মারপিট করে বের করে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে ধানের শীষের ভোটারদের বলে দেওয়া হচ্ছে, তোমাদের ভোট আজকে হবে না, তোমরা ফিরে যাও।”
আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ওয়ার্ড ২২ নম্বর এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কোনো কেন্দ্রেই বিএনপির পোলিং এজেন্ট ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন মঞ্জু।