ভোট দিচ্ছে খুলনা

প্রথমবারের মত দলীয় মার্কায় সিল দিয়ে সিটি করপোরেশনের নতুন নেতৃত্ব বেছে নিচ্ছেন খুলনার ৪ লাখ ৯৩ হাজার ভোটার।

মাসুম বিল্লাহও সুবীর রায়বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2018, 02:00 AM
Updated : 12 Nov 2021, 05:31 AM

মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে এ সিটি করপোরেশনের ২৮৯টি ভোট কেন্দ্রে একযোগে ভোট শুরু হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউনুচ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবেই সব শুরু হয়েছে। এখনও কোনো অভিযোগ, কোনো বিশৃঙ্খলার খবর আমাদের কাছে নেই। দুটি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হচ্ছে। সেখানেও সব ঠিকঠাক চলছে বলে খবর পেয়েছি।”

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে দাবি করে ভোটারদের নিঃশঙ্কচিত্তে ভোট দিতে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। 

বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরে দেখা যায়, ভোট শুরুর আগেই ভোটাররা হাজির হয়েছেন ভোটের লাইনে। দিনের শুরুতে নারীদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের উপস্থিতি আরও বাড়বে বলে আশা করছেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা।   

এ নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নাজমুল কবির মহেশ্বর পাশা নিউ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে ভোট শুরুর আগে থেকেই আমি ১৫টি কেন্দ্র ঘুরে পরিস্থিতি দেখেছি। নির্ধারিত সময়েই ভোট শুরু হয়েছে। কোথাও কোনো সমস্যা নেই।”

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাত মাস আগে এ নির্বাচনকে ঘিরে সব মহলের নজর এখন খুলনার দিকে। ক্ষমতায় এবং ক্ষমতার বাইরে থাকা প্রধান দুই দলের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনও এ নির্বাচনে নিজেদের প্রমাণ করতে চায়।

সরকারের জনপ্রিয়তা ‘তলানিতে’, খুলনায় ভোটে তা প্রমাণের চ্যালেঞ্জ বিএনপির সামনে। অন্যদিকে জনগণের সমর্থন অটুট আছে বলে দাবি করে আসা আওয়ামী লীগের সামনেও তা দেখানোর চ্যালেঞ্জ।

আর জাতীয় নির্বাচনের বছরে নির্বাচন কমিশন নিজেদের দক্ষতা, নিরপেক্ষতা প্রমাণের চ্যালেঞ্জের সামনে।

নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, “সামনে জাতীয় নির্বাচন। তাই সবার কাছে আমরা এ বার্তা দিতে চাই- সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কমিশন সর্বোচ্চ প্রস্ততি নিয়েছে; সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ভোট করতে চাই আমরা।”

এক নজরে খুলনা সিটি নির্বাচন

>> ওয়ার্ড: সাধারণ ওয়ার্ড ৩১টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১০টি।

>> প্রতিদ্বন্দ্বী: মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন।

>> কেন্দ্র ও ভোটকক্ষ: ২৮৯টি ভোট কেন্দ্র, তাতে ভোট কক্ষ ১৫৬১টি।

>> ভোটার: ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৬ জন ও মহিলা ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন।

>> ইভিএমে ভোট হবে দুই কেন্দ্রে। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ২০৬ নম্বর কেন্দ্র ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ২৩৯ নম্বর কেন্দ্রে ১০টি ইভিএম থাকবে। দুই কেন্দ্রে ভোটার আছেন তিন হাজারের মত।

খুলনায় বিএনপি এবার গতবার তাদের বিজয়ী প্রার্থীকে বদল করে ধানের শীষ তুলে দেয় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জুকে। অন্যদিকে গতবার হারলেও তার আগের বার জিতে আসা সাবেক মন্ত্রী বর্ষীয়ান তালুকদার খালেককেই রেখে দেয় নৌকার মাঝি হিসেবে।

সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের পাশাপাশি তালুকদার খালেক মেয়র থাকাকালে খুলনার উন্নয়নকেই প্রচারে সামনে এনেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা, যদিও তার আচরণ নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ।   

অন্যদিকে বিএনপি সরকারের কর্মকাণ্ডের জবাব এই ভোটের মাধ্যমে দিতে খুলনাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তবে বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান মনির সেভাবে কাজ না করার সমালোচনা নিতে হয়েছে তাদের।

এই নির্বাচনে বিএনপি শুরু থেকেই সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে আসছিল; কিন্তু তাতে সাড়া পায়নি ইসির। পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলে শেষ দিনেও সেনা মোতায়েনের দাবি তুলে যান মঞ্জু।

অন্যদিকে বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদের হোতা’ আখ্যায়িত করে তালুকদার খালেক বলছেন, খুলনার রায় আওয়ামী লীগের পক্ষেই যাবে।

মেয়র পদে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক, কাস্তে প্রতীকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) মিজানুর রহমান বাবু ও হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুজ্জাম্মিল হক প্রার্থী থাকলেও দৃশ্যপটে সেই নৌকা ও ধানের শীষই।

মেয়র হতে চান ৫ জন

দল

প্রার্থী

প্রতীক

বিএনপি

নজরুল ইসলাম মঞ্জু

ধানের শীষ

আওয়ামী লীগ

তালুকদার আব্দুল খালেক

নৌকা

জাতীয় পার্টি

এস এম শফিকুর রহমান

লাঙ্গল

সিপিবি

মিজানুর রহমান বাবু

কাস্তে

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

মুজ্জাম্মিল হক

হাত পাখা

খুলনা-২ (সদর-সোনাডাঙ্গা) ও খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর-খান জাহান আলী) সংসদীয় আসনের এলাকা নিয়ে গঠিত খুলনা সিটি করপোরেশন।

ভোটাররা জানান, মুসলিম লীগের ধারাবাহিকতায় ঐতিহ্যগতভাবে খুলনা-২ আসনে বিএনপির সংখ্যাগরিষ্ঠ আর শ্রমজীবী মানুষ অধ্যুষিত খুলনা-৩ আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ।

এবারের নির্বাচনে ৫৩ হাজার নতুন ভোটার এবং মোট ভোটারের প্রায় ২০ শতাংশ বস্তিবাসীদের ভোট ফলাফলের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব রাখতে পারে বলে মনে করেন অনেকে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর একটি মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির অধীনে কুমিল্লা ও রংপুর সিটির ভোটের চেয়ে খুলনা সিটি নির্বাচনের গুরুত্ব এখন অনেক।

“এখন আরও চারটি সিটি ভোট বাকি; তারপর সংসদ নির্বাচন। দলীয় প্রতীকে হওয়ায় খুলনার ভোট দেখেই মানুষের কাছে মেসেজ যাবে পরের ভোট কেমন হবে। কমিশনের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ এটি।”

খুলনার নির্বাচন সংক্রান্ত আরও খবর