স্যাটেলাইট নিয়ে মূর্খের মতো কথা হচ্ছে: মোস্তাফা জব্বার

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অর্থায়ন, মালিকানা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ‘মূর্খের মতো’ কথা বলছেন বলে মন্তব্য করেছেন টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2018, 02:41 PM
Updated : 17 May 2018, 03:19 AM

বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটটি নিয়ে কয়েকটি প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষাপটে সোমবার ঢাকার ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে এই মন্তব্য করেন তিনি।

মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইটের মালিকানার সঙ্গে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক নেই। আর এ বাণিজ্যিক পরিচালনার সব কাজও উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে হবে।

গত শনিবার ভোররাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে সফলভাবে উৎক্ষেপিত হয় বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যিক কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১’।

বিটিআরসির নেওয়া তিন হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পের আওতায় ফরাসি প্রতিষ্ঠান তালিস এলিনিয়া স্পেস এই স্যাটেলাইটটি তৈরি করে, এর উৎক্ষেপণ হয় যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের মাধ্যমে।

এই স্যাটেলাইটের মালিকানা ‘দুই ব্যক্তির কাছে চলে গেছে’ বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর; তবে তাদের পরিচয় তিনি প্রকাশ করেননি।

এই প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। এর বাণিজ্যিক পরিচালনাও নির্দিষ্ট কারও হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে বলে কথা উঠছে।

মহাকাশের পথে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

মালিকানার প্রশ্নে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “এটি স্পষ্ট করে বলা দরকার, এই স্যাটেলাইটের মালিক বাংলাদেশের জনগণ। এই স্যাটেলাইটের মালিক রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের পক্ষে সরকার এটি পরিচালনা করবে।

“এখানে অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে এর মালিকানা থাকার, কোনো সম্পর্ক থাকার কারণ নেই। অনুগ্রহ করে ভুল বুঝবেন না।”

স্যাটেলাইট টিভি সার্ভিসের লাইসেন্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কেউ একটা লাইসেন্স কোনো কাজ করার জন্য পেয়ে যায়, তার সঙ্গে স্যাটেলাইটের সম্পর্ক নেই। স্যাটেলাইট বহু ধরনের সেবা দেবে।”

আগামী তিন মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক কাজ শুরুর আশা প্রকাশ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, “আমাদের কক্ষপথে তার অবস্থান নিশ্চিত করার পর বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত হবে। কক্ষপথে স্থাপন করার জন্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কাজ করছে।

“উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বাজারজাত করার দায়িত্ব দেওয়া হবে। সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, লাইসেন্স দেওয়ার জন্য সব কাজ বিটিআরসি এবং মন্ত্রণালয় করবে, কোনো গোপনীয়তা থাকবে না।”

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, “এই স্যাটেলাইটের লাইসেন্স দেবে বিটিআরসি, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে। স্যাটেলাইট বিভিন্ন ধরনের সেবা দেবে, সব চেয়ে বড় সেবা হচ্ছে টিভি স্টেশনগুলো বিদেশি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে যে ব্যান্ডউইডথ নেয়, সেই ব্যান্ডউইডটা এখন এখান থেকে নেবে।”

স্যাটেলাইট টিভি সার্ভিসের লাইসেন্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ডিটিএইচ বা ডাইরেক্ট টু হোম, যেটা নিয়ে কথা উঠেছে, অনেকগুলোর সেবার মধ্যে ডিটিএইচ একটি সেবা। দুটি কোম্পানিকে এই লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, স্যাটেলাইটের মালিকানার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।”

এই কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে বিপুল রাজস্ব আয়ের আশা করছে সরকার। বলা হচ্ছে, স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলছেন, এই যোগাযোগ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মূলত তিন ধরনের সেবা পাওয়া সম্ভব। এগুলো হল- সম্প্রচার, টেলিযোগাযোগ ও ডেটা কমিউনিকেশন।

বাংলাদেশ এতদিন বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়া করে সম্প্রচার ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিষয়ে গবেষণার কাজ চালিয়ে আসছিল; বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বাংলাদেশকে গুণতে হয় ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

স্যাটেলাইটের মালিকানা কথার জবাবে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তাফা জব্বার বলেন, “যারা এ ধরনের অপপ্রচার করছে, বিশেষ করে আমাদের কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের বড় বড় নেতারা মূর্খের মতো কথা বলেছেন।

“আমি মনে করি, তাদের নিজেদের জ্ঞান অর্জন করা দরকার যে একটি রাষ্ট্রের স্যাটেলাইট কোনো ব্যক্তির কাছে যেতে পারে না। ব্যক্তিগত স্যাটেলাইট হলেও বিষয় ছিল।”

‘রাষ্ট্রের স্যাটেলাইট কোনো ব্যক্তির কাছে দিয়ে দেওয়া হয়েছে’- এ ধরনের অপপ্রচার করাকে রাষ্ট্রের বিরোধিতা বলে মন্তব্য করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, “আশা করি, ভবিষ্যতে তারা এ ধরনের মন্তব্য করে নিজেদের মর্যাদাহানি করবে না।”

‘মহাকাশ বিজয়ে’ আতসবাজি উৎসব

মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের অর্জন উদযাপনে মঙ্গলবার সারাদেশে আতশবাজি উৎসব করবে সরকার।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই দিন সন্ধ্যা ৭-৮টা রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, হাতিরঝিল এবং দেশের সব জেলা সদরে এই উৎসব হবে।