এক নজরে খুলনা সিটি করপোরেশন ভোট

খুলনা সিটি করপোরেশনের ভোটাররা প্রথমবারের মত দলীয় প্রতীকে ভোট দিয়ে নতুন মেয়র নির্বাচন করতে যাচ্ছেন মঙ্গলবার।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2018, 02:06 PM
Updated : 15 May 2018, 03:38 AM

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাত মাস আগে এ নির্বাচনকে ঘিরে সব মহলের নজর এখন খুলনার দিকে। প্রধান দুই দলের প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি বাকযুদ্ধ ভোটের মাঠে ছড়াচ্ছে উত্তাপ।

১৯৮৪ সালের ১০ ডিসেম্বর সিটি করপোরেশন হওয়ার পর এটি হবে খুলনার পঞ্চম নির্বাচন, যার আয়োজনে সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ের ফর্দ ঠিক করেছে নির্বাচন কমিশন।

সর্বশেষ ২০১৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত তালুকদার আব্দুল খালেককে পরাজিত করে খুলনার মেয়র হয়েছিলেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনি।

আওয়ামী লীগের খালেক এবার দলের প্রতীক নৌকা নিয়ে লড়বেন। তার বিপরীতে বিএনপির প্রাতীক ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

মেয়র পদে আরও তিন প্রার্থী থাকলেও স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘদিন দেশ শাসন করা এ দুটি দলের প্রার্থীদের নামই স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে বেশি আলোচিত হচ্ছে।

খুলনার ভোটে প্রায় ৫ লাখ ভোটার পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন ভোট দিয়ে। এর মধ্যে মাত্র ৩ হাজার ভোটার ইভিএমে ভোট দেবেন, বাকিরা রায় জানাবেন প্রচলিত ব্যালট পেপারেই।

নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, “সামনে জাতীয় নির্বাচন। তাই সবার কাছে আমরা এ বার্তা দিতে চাই- সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কমিশন সর্বোচ্চ প্রস্ততি নিয়েছে; সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ভোট করতে চাই আমরা।”

নির্বাচনের জন্য ভোট কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে ব্যালট বাক্স।

 

খুলনা সিটি নির্বাচন ২০১৮

>> সময়: ভোট চলবে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত

>> ভোটার: ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৬ জন; ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন নারী

>> পদ: একজন মেয়র, ৩১ জন কাউন্সিলর এবং ১০ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরকে নির্বাচিত করবেন তারা।

>> কেন্দ্র ও ভোটকক্ষ: ২৮৯টি ভোট কেন্দ্রের ১৫৬১টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ হবে 

>> ইভিএম: ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ২০৬ নম্বর কেন্দ্র এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ২৩৯ নম্বর কেন্দ্রে ভোট হবে নতুন ইভিএমে।

>> গণনা শেষে ফল ঘোষণা হবে সোনাডাঙ্গা বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে। 

 

প্রার্থী সংখ্যা

# মেয়র পদে ৫ জন

# সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন

# ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন

# মেয়র পদের প্রার্থীরা সবাই বিভিন্ন দল মনোনীত। বাকি দুই পদে নির্দলীয় ভোট হচ্ছে।  

মেয়র হতে চান ৫ জন

দল

প্রার্থী

প্রতীক

বিএনপি

নজরুল ইসলাম মঞ্জু

ধানের শীষ

আওয়ামী লীগ

তালুকদার আব্দুল খালেক

নৌকা

জাতীয় পার্টি

এস এম শফিকুর রহমান

লাঙ্গল

সিপিবি

মিজানুর রহমান বাবু

কাস্তে

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

মুজ্জাম্মিল হক

হাত পাখা

সিইসি কে এম নূরুল হুদা ৩১ মার্চ খুলনা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয় ১২ এপ্রিল পর্যন্ত। ১৫-১৬ এপ্রিল হয় যাচাই-বাছাই। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ২৩ এপ্রিল। সেদিনই শুরু হয় আনুষ্ঠানিক প্রচার।

কর্মী বাহিনী

>> খুলনায় রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইউনুচ আলী।

>> তার সঙ্গে ১০ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, ১২ জন সহায়ক কর্মকর্তা, ২ জন পর্যবেক্ষক সমন্বয়কারী, ২৮৯ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।

>> সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং অফিসার মিলিয়ে ৪ হাজার ৯৭২ জন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন এ নির্বাচনে।

নজর রাখবেন যারা

নয়টি সংস্থার তিন শতাধিক সদস্য, কেন্দ্রীয়ভাবে সাড়ে তিন শতাধিক ও স্থানীয়ভাবে আরও অন্তত পাঁচশতাধিক সাংবাদিক  এবং  ইসির ২০ জন ‘নীরব পর্যবেক্ষক’ এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে থাকবেন।

ভোটের আগের দিন সোমবার খুলনার বিভিন্ন স্থানে টহলে বিজিবি সদস্যরা।

নিরাপত্তা

# প্রতিটি কেন্দ্রে সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর ২২-২৪ জন করে সদস্য থাকবেন। এছাড়া ৬০ জন নির্বাহী হাকিম থাকবেন এবং ১০ জন বিচারিক হাকিম ভোটের দায়িত্ব পালন করবেন।

# পুলিশ-এপিবিএন-আনসার ব্যাটালিয়ান নিয়ে ৩১টি মোবাইল টিম, ১০টি স্ট্রাইকিং টিম; র‌্যাবের ৩২টি টিম এবং ১৬ প্লাটুন বিজিবি থাকবে নিরাপত্তার দায়িত্বে।

# সরকারি বি এল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের কলা ভবন (৩৭ নম্বর কেন্দ্র), পায়োনিয়ার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশ (১৮৩ নম্বর কেন্দ্র) এবং পিটিআই প্রশিক্ষণ ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় (২৪২ নম্বর কেন্দ্র) সিসিটিভি থাকবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এসব ক্যামেরায় সরাসরি নজর রাখা যাবে পরিস্থিতির ওপর।

বাজেট

সাড়ে তিন কোটি টাকার ভোট হচ্ছে খুলনায়। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় ব্যয় হবে প্রায় দেড় কোটি। আইন-শৃঙ্খলা খাতে ব্যয় বরাদ্দ রয়েছে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা।

২০০৮ বনাম ২০১৩

খুলনা সিটির শেষ ভোট: ২০১৩ সালের ১৫ জুন

ভোটের হার: মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৬ জন ভোটারের মধ্যে ৩ লাখ ২ হাজার ৫১৯টি ভোট পড়ে। ভোটের হার ছিল ৬৮ দশমিক ৭০ শতাংশ।

ফলাফল: ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী বিএনপির মহানগর কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি বিজয়ী হন প্রায় ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে। তিনি পান এক লাখ ৮০ হাজার ৯৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বিদায়ী মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক পান এক লাখ ১৯ হাজার ৪২২ ভোট।

প্রস্তুত ভোটের সরঞ্জাম

২০০৮ ও ২০১৩ সালে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট- চার সিটিতে একসঙ্গে ভোট হয়। এবার খুলনায় আলাদাভাবে ভোট হচ্ছে।

নবম সংসদ নির্বাচনের চার মাস আগে ২০০৮ সালের ৮ অগাস্ট চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হন।

সিলেটে কারাবন্দি বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান ৮৩ হাজার ৩৩৯ ভোটের বিপুল ব্যবধানে বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আ ফ ম কামালকে হারিয়ে পুনর্র্নিবাচিত হন।

বরিশালে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পান শওকত হোসেন হিরণ। ৫৮৮ ভোটের ব্যবধানে তিনি হারান পিডিপির এস শরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টুকে।

রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন যুবদলের মহানগর সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে ১৩ হাজার ৮১০ ভোটের পেছনে ফেলে বিজয়ী হন।

বিএনপি নেতা ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র মনিরুজ্জামান মনি ২৫ হাজার ৮৩৬ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে খুলনায় মেয়র হন আওয়ামী লীগ নেতা তালুকদার আব্দুল খালেক।

দশম সংসদ নির্বাচনের ছয় মাস বাকি থাকতে ওই চার সিটি কর্পোরেশনের ভোটে ভরাডুবি হয় ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীদের।   

সিলেটে বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী প্রায় ৩৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে, বরিশালে আহসান হাবিব কামাল ১৭ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে, রাজশাহীতে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ৪৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে ও খুলনায় মনিরুজ্জামান মনি প্রায় ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হন।

সংসদের আগে

কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে খুলনার ভোট হবে তৃতীয় সিটি করপোরেশন নির্বাচন। গেল বছর ৩০ মার্চ কুমিল্লা ও ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটির ভোট হয়।

ঢাকা উত্তর সিটির ভোট ফেব্রুয়ারিতে করতে না পারায় ব্যর্থতার সমালোচনা রয়েছে ইসির। গাজীপুর সিটির ভোটও আটকে থাকার পর নতুন তারিখ ঠিক হয়েছে ২৬ জুন। খুলনার পর বাকি থাকছে চার সিটির ভোট।

গাজীপুরের ৪ সেপ্টেম্বর, সিলেটের ৮ অক্টোবর, রাজশাহীর ৫ অক্টোবর ও বরিশালের ২৩ অক্টোবর মেয়াদ ফুরোচ্ছে।

চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর- ২৮ জানুয়ারির মধ্যে হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এজন্যে আগামী জুলাইয়ের মধ্যে পাঁচ সিটির ভোট শেষ করার কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন সিইসি নূরুল হুদা।