শেষ সময়ের প্রচারে সরগরম খুলনা

ভোট সামনে শেষ মুহূর্তের প্রচারে এখন সরগরম খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকা; ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা, নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাইছেন তারা।

মাসুম বিল্লাহও সুবীর রায়, খুলনা থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2018, 04:45 PM
Updated : 12 May 2018, 04:49 PM

মেয়র প্রার্থীরা ওয়ার্ড ভাগ করে একেকদিন একেক ওয়ার্ডে প্রচার চালালেও এলাকায় বেশি উত্তাপ ছড়াচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা।

শনিবার খুলনা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থী এবং তাদের কর্মী-সমর্থকদের জনসংযোগ ও মিছিল করতে দেখা গেছে, অনেক প্রার্থীর নামে গান গেয়েও চাওয়া হচ্ছে ভোট।

মঙ্গলবার নগর পিতা বাছাই করতে ভোট দেবেন খুলনা নগরবাসী; ভোটের দুই দিন আগে রোববার আনুষ্ঠানিক প্রচারের শেষ দিন নির্ধারিত আছে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায়।

নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি এগোনের কথা জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউনুচ আলী বলেছেন, রোববার ‘যে কোনো সময়’ নগরীতে ১৬ প্লাটুন বিজিবি নামবে।

এবারের নির্বাচনে খুলনায় পাঁচজন মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি ৩১ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।

তাদের একজনকে নগর পিতা নির্বাচনের পাশাপাশি ৩১ জনকে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ১০ জন মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচন করবেন নগরবাসী; সেখানে মোট ভোটারের সংখ্যা চার লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন।

মেয়র পদে দলীয় প্রতীকের নির্বাচনে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের বিপরীতে রয়েছেন ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

শনিবার সকালে নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন তালুকদার খালেক। সকাল ৮টা থেকে নগরীর মতিয়াখালী ব্রীজ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন তিনি।

এরপর শিপইয়ার্ড, মতিয়াখালী মৌজা, মোল্লা বাড়ি, লবণচরা, জিন্নাহপাড়া, হঠাৎ বাজার, বান্ধা বাজার, বোখারী পাড়া, মোক্তার হোসেন রোড সংলগ্ন এলাকায় সাধারণ ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চান তিনি।

এ সময় এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ঠিকাদারকে নির্মাণাধীন ইসলামপাড়া মেইন রোড রোববারের মধ্যে চলাচলের উপযোগী করে দিতে বলেন খুলনা নগরে দুই টার্ম আগে মেয়রের দায়িত্ব পালন করা তালুকদার খালেক।

গণসংযোগকালে ভোটারদের নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি তার সময়ে হওয়া নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন তিনি।

অন্যদিকে শনিবার সকালে নগরীর মিয়াপাড়া, মৌলভীপাড়া, দোলখোলা, টি বি বাউন্ডারী রোড, টুটপাড়া এলাকায় গণসংযোগ করেন বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

এ সময় সাধারণ ভোটারদের হাতে হাতে লিফলেট তুলে দিয়ে ভোট চান খুলনা-২ আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য।

সকালে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার ও হয়রানির অভিযোগ তুলে ভোটের তিন দিন আগেও সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানান বিএনপির প্রার্থী মঞ্জু।

তিনি বলেন, “একটি অর্থবহ, অংশগ্রহণমূলক ও ভীতিহীন নির্বাচনের জন্যই আমি বারবার সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বলেছি।

“আমাদের বক্তব্য খুব সুস্পষ্ট, দেশের নাগরিকদের ভোটাধিকার ছোট কোনো বিষয় নয়, নাগরিক অধিকার রক্ষার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। তা না হলে ১৫ তারিখ পর্যন্ত যা হবে তার দায় নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে।”

শুক্রবার বিকাল থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত বিএনপির ২১ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তার অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার খালেক বলেন, “বিএনপি এমন কথা প্রথম থেকেই বলে আসছে। জনগণ তাদের সেই কথায় এখন গুরুত্ব দেয় না।”

সকালে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের শিপইয়ার্ড এলাকায় নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি বলেন, “অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশনার যা যা প্রয়োজন করবে, তাতে আমার কোনো আপত্তি নাই। কোনো স্পেসিফিক বাহিনীর নাম আমি বলতে পারব না।

“আমার মনে হয়, আমি অসন্তুষ্ট হওয়ার মতো কিছু দেখি নাই। আমি একটা কথা বলছি, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদ এবং অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ সব কিছু, যা যা প্রয়োজন তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন। এ ব্যাপারে আমার কোনো আপত্তি নাই।”

এদিকে বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগের নগর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তালুকদার আব্দুল খালেকের প্রধান এজেন্ট শেখ হারুনুর রশীদ।

তিনি বলেন, “তালুকদার আবদুল খালেকের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু পাগলের প্রলাপ করছেন। সাম্প্রতিককালে তিনি বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন।”

শুক্রবার রাতে নগরীর কয়েক জায়গায় ১০টি বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে উল্লেখ করে এর পেছনে বিএনপি সমর্থকদের দায়ী করেন হারুন।

নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক দিতে বিএনপি প্রার্থীর দাবির বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়া আর কোথাও বিদেশি পর্যবেক্ষণ থাকে না। তবুও এ ধরনের হাস্যকর দাবি যদি কেউ করে তবে নির্বাচন কমিশন সেটা বিবেচনা করুক।”

বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউনুচ আলী বলেন, “আমরা আগেও বলেছি, যদি কারও বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট বা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, এর বাইরে কাউকে যেন হয়রানি করা না হয়, বিরক্ত করা না হয়। এক্ষেত্রে নির্বাচন পরিচালনার স্বার্থে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে।”

এছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে না বলে নির্বাচন কমিশনের যে অবস্থান, তা আগের মতো থাকবে বলেও জানান তিনি।