স্যাটেলাইট নিয়ে ‘এলিট ক্লাবে’ বাংলাদেশ

ষাট বছর আগে মানুষের মহাকাশ যাত্রা শুরুর পর ১৭শর বেশি কৃত্রিম উপগ্রহ উড়েছে পৃথিবী থেকে, তার একটি এখন লাল-সবুজ রঙের।

আইরিন সুলতানাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2018, 08:51 PM
Updated : 11 May 2018, 10:30 PM

অর্থনীতির অগ্রযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে এবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে এগিয়ে যাওয়ার নজির হিসেবে শনিবার প্রথম প্রহরে মহাকাশ পানে রওনা হয় বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১।

২০১৭ সালের ইউনিয়ন অফ কনসার্নড সায়েন্টিস্টসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মহাকাশের কক্ষপথে ঘুরছে ১৭শ’র বেশি স্যাটেলাইট। 

তাদের তথ্যভাণ্ডারে স্যাটেলাইট মালিকানা ও পরিচালনাকারী ৫৫টি দেশের নাম পাওয়া যায়। তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলছেন, কৃত্রিম উপগ্রহের মালিক হিসেবে বাংলাদেশ ৫৭তম দেশ।

বিশ্বের ১২টি দেশের রয়েছে নিজস্ব স্যাটেলাইট লঞ্চ প্যাড, যা দিয়ে তারা নিজেদের ও অন্যান্য দেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে পারে তারা।

কাঙ্ক্ষিত জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিটের পথে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট

বাংলাদেশের সেই সুযোগ না থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেইপ কেনাভেরালের লঞ্চ প্যাড থেকে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ হল জাতির জনকের নামাঙ্কিত কৃত্রিম উপগ্রহটি।

তিন হাজার ৫০০ কেজি উৎক্ষেপণ ভরের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে পাঠাতে নেওয়া প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।

মহাকাশে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহটি পাঠিয়েছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, ১৯৫৭ সালে পাঠানো তাদের ওই উপগ্রহটির নাম ছিল ‘স্পুটনিক-১’, যার ওজন ছিল মাত্র ৮৩ দশমিক ৬ কেজি।

এরপর মহাকাশ নিয়ন্ত্রণে শুরু হয় দুই পরাশক্তির লড়াই; প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাতে না পারলেও ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো-১১ নিয়ে প্রথম চাঁদে মানুষ পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র।

সোভিয়েত বিলুপ্তির পর বর্তমানে আটশ’র বেশি স্যাটেলাইট পাঠিয়ে অন্য সব দেশের চেয়ে বহু এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র। চীন ও রাশিয়ার মালিকানায় ২০১৭ সাল পর্যন্ত পাঠানো স্যাটেলাইট সংখ্যা ২০৪টি ও ১৪২টি। পরিসংখ্যানে পিছিয়ে থাকলেও জাপান ও যুক্তরাজ্যও রয়েছে মহাকাশে।

বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত ২টা ১৪ মিনিটে ফ্লোরিডার লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে ফ্যালকন-৯ ব্লক ৫ রকেটের সফল উৎক্ষেপণ হয়

কৃত্রিম উপগ্রহের সংখ্যায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত এগিয়ে যাচ্ছে তরতরিয়ে। অন্ধ্র প্রদেশে তারা তৈরি করেছে সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার, যেখান থেকে গত এক বছরে ৩১টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হয়েছে। পাকিস্তানেরও রয়েছে কৃত্রিম উপগ্রহ।

কাজের ধরন ও আকারের ভিত্তিতে যে কয়েক ধরনের স্যাটেলাইট দেখা যায়, যেমন ওয়েদার স্যাটেলাইট, কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট, নেভিগেশন স্যাটেলাইট, আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট, অ্যাস্ট্রোনমিকাল স্যাটেলাইট, মিনিয়েচারাইজড স্যাটেলাইট।

বাংলাদেশ এতদিন বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়া করে সম্প্রচার ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিষয়ে গবেষণার কাজ চালিয়ে আসছিল; এখন নিজস্ব মালিকানায় স্যাটেলাইট পাঠাল।

তবে ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ‘ব্র্যাক অন্বেষা’ নামে একটি ন্যানো স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হয়। সেটিও উৎক্ষেপণ হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে।

স্যাটেলাইট নিয়ে মহাকাশের পথে রকেট

২০১৩ সালে ন্যানো স্যাটেলাইট তৈরি শেখানোর একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে জাতিসংঘের অফিস ফর
আউটার স্পেস
 অ্যাফেয়ার্স। এশিয়ার উদীয়মান দেশগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে নেওয়া এ প্রকল্পের অংশ হিসেব ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী এক কেজি ওজনের এই স্যাটেলাইটটি তৈরি করে। এই স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশন বিশ্ববিদ্যালয়টির মহাখালী শাখায়।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়ায়। জয়দেবপুরের গ্রাউন্ড স্টেশনটি মূল স্টেশন, বেতবুনিয়ায় স্টেশনটি ব্যাকআপ হিসেবে রাখা হয়েছে।

শুক্রবার যাত্রা শুরু করা স্যাটেলাইটটি ৩৬ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে স্থাপিত হবে মহাকাশের ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের অরবিটাল স্লটে।

স্যাটেলাইট সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশন থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এজন্য দুই মাস সময় লাগতে পারে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে।