‘অ্যাপোলো-১১’ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু-১’: ইতিহাস মিলেছে যেখানে

মানবজাতির চন্দ্রবিজয়ের প্রায় অর্ধ শতাব্দী পরে প্রথম নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। দুই প্রথমের ঘটনার মধ্যে বহু বছরের দূরত্ব থাকলেও একটি জায়গায় গিয়ে তা ঘুচে গেছে।

আইরিন সুলতানাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2018, 08:34 PM
Updated : 12 May 2018, 02:46 AM

১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অ্যাপোলো-১১’ নামের মহাকাশযানটি চন্দ্রাভিযানে রওনা হয়েছিল যে স্থান থেকে, ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের সেই ‘৩৯-এ’ লঞ্চ কমপ্লেক্স থেকেই কক্ষপথে ছুটল বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১’।  

এই লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯-এ থেকেই স্যাটার্ন-ভি রকেট নিল আর্মস্ট্রং, এডউইন ই অলড্রিন জুনিয়র, মাইকেল কলিন্সকে বহনকারী ‘অ্যাপোলো-১১’ মহাকাশযানটিকে নিয়ে ছুটেছিল চাঁদের দিকে।

সে সময় ৩৯-এ লঞ্চ কমপ্লেক্সটি ছিল নাসার অধীনে। ২০১৪ সালে নাসার কাছ থেকে ২০ বছরের জন্য সেটি ইজারা নেয় স্পেসএক্স।  

একই লঞ্চ প্যাড থেকে ১৯৬৯ সালে উঠেছিল অ্যাপোলো-১১ (নাসার ছবি)

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটকে নিয়ে মহাকাশের জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার কক্ষপথে ম্পেসএক্সের যে রকেটটি নিয়ে যায়, সেই ব্লক-৫ সংস্করণের ফ্যালকন-৯ এরও প্রথম গ্রাহক বাংলাদেশ।

ফ্যালকন-৯ রকেটের ব্লক-৫ সংস্করণটিকে সর্বাধুনিক দাবি করছে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কোম্পানিটি।

এর আগের রকেটগুলো দুইবারের বেশি উৎক্ষেপণে ব্যবহার করা সম্ভব হত না, তবে জ্বালানিসাশ্রয়ী ব্লক-৫ দিয়ে ১০ বার উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে বলে তাদের দাবি।

২০১০ সালে ফ্যালকন ৯ ব্যবহারে নাসাকে প্রথম গ্রাহক হিসেবে পায় স্পেসএক্স। ২০১৩ সালে একটি জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠাতে নাসার মতো লুক্সেমবার্গভিত্তিক স্যাটেলাইট অপারেটর এসইএসও স্পেসএক্সকেই বেছে নেয়।

তবে নাসা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ফ্যালকন ৯ এর উন্নয়ন নিয়ে আরও কাজ করে স্পেসএক্স। ফলাফল হিসেবে আগের চেয়ে রকেটটি এখন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের জন্য ফ্যালকন ৯ ব্লক ৫ রকেটকে কীভাবে বেছে নিল বাংলাদেশ- এ প্রশ্নে স্পেস নিউজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, “সত্যি বলতে কী, এটা ঘটে গেছে।”

শুরুতে উৎক্ষেপণের জন্য মূল রকেট হিসেবে আরিয়েন স্পেসের আরিয়েন ৫ কে নির্বাচিত করেছিল বঙ্গবন্ধু-১ তৈরিকারী ফরাসি প্রতিষ্ঠান তালিস এলিনিয়া।

তবে গত বছর পরিবহনকর্মী আন্দোলনের ফলে ওই সময় আরিয়েন ৫ থেকে ব্রাজিল ও সাউথ কোরিয়ার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ পরিকল্পনা গুটিয়ে নেয় আরিয়েন স্পেস।

ওই ঘটনার পর তারিখ জটিলতায় পড়ে আরিয়েন স্পেস গত বছর ১৬ ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু-১  উৎক্ষেপণও নিশ্চিত করতে পারেনি।

আরিয়েন ৫ রকেটটি একই সাথে দুটি স্যাটেলাইট বহন করে থাকে, যার একটি এর উপরের অংশে এবং তুলনামূলক ছোট স্যাটেলাইট থাকে রকেটের নিচের অংশে। এতে করে উৎক্ষেপণ খরচ কমলেও দুটি আলাদা দেশের বা প্রতিষ্ঠানের স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে উৎক্ষেপণ তারিখের সমন্বয় জরুরি। তা না হলে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের তারিখ নির্ধারণে দেরি হতে পারে।  

রকেটের সঙ্গে যুক্ত বঙ্গবন্ধু -১

এ নিয়ে জয় বলেন, “আমাদের স্যাটেলাইটের আকার অনুযায়ী এটা আরিয়েনের কেবল নিচের অংশে যুক্ত করা যেত। এদিকে তারা ডিসেম্বরে আমাদের কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ দিতে পারেনি। এজন্য আমাদের বিকল্প ব্যবস্থায় যেতে হয়েছে।”

বঙ্গবন্ধু-১ এর মহাকাশ অভিযানে ফ্যালকন ৯ ব্লক ৫ সংস্করণের সংযোগ নিয়ে তিনি বলেন, “উৎক্ষেপণের জন্য স্পেসএক্স আমাদের ব্লক ৫ দিতে চাইলে আমরা তাতে রাজি হই।”