যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আদালতের নির্দেশনা জানেন না অনেকেই

কর্মক্ষেত্র বা উন্মুক্ত স্থানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া নির্দেশনা সম্পর্কে জানেন না বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 May 2018, 03:28 PM
Updated : 7 May 2018, 03:35 PM

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ: আইনের প্রয়োগ ও কার্যকারিতা’ শীর্ষক গবেষণার প্রতিবেদন সোমবার প্রকাশ করা হয়।

ঢাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন।

যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ২০০৯ সালে হাই কোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব- যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

সচেতনতা বৃদ্ধি, কমিটি গঠন ও আইন প্রয়োগের বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জানাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিও নির্দেশনা ছিল উচ্চ আদালতের।

এছাড়া যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটলে বিদ্যমান আইনে এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিচার নিশ্চিত করার কথাও বলা আছে নির্দেশনাটিতে। সেখানে আরও বলা আছে, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে যতদিন না একটি পৃথক ও পূর্ণাঙ্গ আইন গ্রহণ করা হয় ততদিন পর্যন্ত গণপরিসরে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ের সমস্ত কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গবেষণায় ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রের ব্যক্তিদের মতামত নেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষণায় অংশ নেওয়া সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ জন শিক্ষার্থীর ৮৪ শতাংশই যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সংক্রান্ত কোনো কমিটির কথা জানেন না এবং ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা সম্পর্কে জানেন না।

এছাড়া বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সংস্থা, পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান, সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত ২০ জনের বক্তব্যও নেওয়া হয় গবেষণায়। এদের মধ্যে ৬৪ দশমিক ৫ শতাংশ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না এবং ১৪ শতাংশ নির্দেশনাটি সম্পর্কে জানলেও তাদের এ বিষয়ে কোনো পরিষ্কার ধারণা নেই।

এ বিষয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পরিচালক ড. আবুল হোসেন বলেন, “কোর্টের নির্দেশনা পুরোপুরি মানা গেলে কর্মক্ষেত্রে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্যাতন নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে। সরকার এ বিষয়ে কাজ করছে। মানুষ কিংবা পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজের ব্যাপকতা হয়ত কম। তবে আমরা কাজ করছি। নির্যাতন প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”

গবেষণায় বলা হয়, সচেতনতার অভাবেই মূলত ২০০৯ সালের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই এ সম্পর্কে সর্বস্তরে বিশেষত, কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া দরকার। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় সেজন্য সরকারি উদ্যোগে একটি তদারকি কমিটি থাকা উচিৎ। ওই কমিটিতে সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, ট্রেড ইউনিয়ন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা থাকবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো গণপরিসরে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি পৃথক ও পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করা।

অনুষ্ঠানে সমাজকর্মী খুশি কবির বলেন, ‘কোর্টের নির্দেশনাটা মানা খুবই দরকার। এটি মানা হলে আমাদের দেশে নির্যাতনের মাত্রা কমে যেত। তবে বাস্তবতা হলো স্বীকৃত বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন নির্যাতন হলে তার বিচার হয় না। ছাত্রীদের নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আবার অভিযোগ আসলে তার বিচার হয়না। অনেকে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে চান। তাই হাই কোর্টের নির্দেশনা সবাইকে মানতেই হবে।”

গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের আগে একই অনুষ্ঠানে ‘নাসরীন স্মৃতিপদক ২০১৮’ দেয় অ্যাকশনএইড। বাংলাদেশের প্রয়াত নারীনেত্রী নাসরীন পারভীন হক স্মরণে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ ২০০৭ সাল থেকে এই পদক দিয়ে আসছে। চারটি বিভাগে এবার চারজন ‘নাসরীন স্মৃতি পদক’ পেয়েছেন ।

যৌন হয়রানী ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত স্থাপন বিভাগে এবার পদক পেয়েছেন খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার তালতলা গ্রামের ভারতী বিশ্বাস। ‘ভিন্ন রূপে পুরুষ’ (গৃহস্থালী সেবামূলক কাজে নিয়মিত অংশগ্রহণ) বিভাগে পদক পেয়েছেন জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার গাবের গ্রামের বালক চন্দ্র বিশ্বাস। শিশুবিবাহ প্রতিরোধে সোচ্চার বিভাগে পদক পেয়েছেন কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার মহিষকুন্ডি গ্রামের টিপু সুলতান।

এছাড়া নারীর ক্ষমতায়নে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিশেষ বিভাগে পদক পেয়েছেন নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার চকসুবল গ্রামের ঘোড়সওয়ারী তাসমিনা খাতুন।