শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা নামে এই দুই ব্যক্তিকে রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদকের কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন দুই ‘ব্যবসায়ীকে’ জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে কমিশনের সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান সহযোগিতা করেছেন।
ফারমার্স ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পে-অর্ডারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের এক ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির’ ব্যাংক হিসাবে চার কোটি টাকা জমা দেওয়ার বিষয়টির অনুসন্ধানের জন্য ২৫ এপ্রিল ওই দুই ‘ব্যবসায়ীর’ ঢাকার উত্তরার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এবং টাঙ্গাইলের স্থায়ী ঠিকানায় নোটিস পাঠিয়ে তলব করা হয়েছিল।
দুদকের তলবি নোটিসে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ওই ব্যক্তির নাম উল্লেখ না থাকলেও পদত্যাগী সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাই যে সেই ব্যক্তি, সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে সে খবর আসে। জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই দুজনের আইনজীবী বিচারপতি সিনহার সঙ্গে লেনদেনের কথাই বলেন।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় বাতিলের পর ক্ষমতাসীনদের ক্ষোভের মুখে থাকা বিচারপতি সিনহা গত বছরের অক্টোবরে ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর সেখান থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। তিনি আর ফেরেননি।
তিনি যাওয়ার পর সুপ্রিম কোর্ট এক বিবৃতিতে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচারসহ গুরুতর ১১ অভিযোগ তোলে।
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে গুরুতর এই অভিযোগ তদন্তে তখন দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধের রাষ্ট্রীয় সংস্থা দুদকের কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ তখন বলেছিলেন, “যদি পাই, যারই হোক না কেন, আমরা দুর্নীতির অনুসন্ধান করব।”
তার সাত মাস পর দুদক শাহজাহান ও নিরঞ্জনকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নেয়।
ওই দুজনের আইনজীবী আফাজ মাহমুদ রুবেল দাবি করেন, ঢাকার উত্তরায় বিচারপতি সিনহার বাড়ি কেনা বাবদ ওই চার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছিল।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের পাঁচ কাঠা জমির উপর ৫১ নম্বরের ছয়তলা বাড়িটির মালিক বিচারপতি সিনহা। তিনি ছয় কোটি টাকার মূল্যে বাড়িটি বিক্রি করেন টাঙ্গাইলের বাসিন্দা রনজিত চন্দ্র সাহার স্ত্রী শান্ত্রী রায়ের কাছে।
নিরঞ্জন সাহা শান্ত্রী রায়ের স্বামী রনজিতের চাচা; আর শাহজাহান রনজিতের বন্ধু। তাদের সবার বাড়ি টাঙ্গাইলে।
ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে তাদের আরেক আইনজীবী নাজমুল আলম বলেন, “নিরঞ্জন ও শাহজাহান ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে দুই কোটি করে চার কোটি টাকা ঋণ নেন। এতে থার্ড পার্টি হিসেবে শান্ত্রী রায়ের বিভিন্ন জমি মর্টগেজ হিসাবে ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। এই ঋণ থেকেই বাড়ির চার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়।”
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ফারমার্স ব্যাংক যাত্রা শুরুর চার বছর না যেতেই নানা অনিয়মের ধুঁকছে। চাপের মুখে ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও ছাড়তে হয়েছে মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে।
শাহজাহান ও নিরঞ্জন সাহার কাছে জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তারা প্রথমে কিছু বলতে চাননি।
পরে শাহজাহান বলেন, “আমরা ফারমার্স ব্যাংক থেকে দুই কোটি টাকা করে চার কোটি টাকা লোন নিয়েছি, এই লোনের জন্য আমাদের ডাকা (দুদক) হয়েছে।”
কেন এই ঋণ নিয়েছিলেন- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “লোন নিয়ে রনজিত বাবুকে দিয়েছি; তিনি আমার ফ্রেন্ড।”
তবে সাবেক প্রধান বিচারপতির সঙ্গে রনজিত বা রনজিতের স্ত্রী শান্ত্রী রায়ের বাড়ি বিক্রির ‘লেনদেনের’ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন শাহজাহান।
অন্যদিকে নিরঞ্জন সাহা বলেন, “রনজিত বাবু আমাদের দিয়ে লোন উঠিয়ে নিয়েছে। এই জন্য আমরা টাকাটা দিয়েছি।”
শাহজাহান ও নিরঞ্জনের পেশা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, তারা ব্যবসায়ী নন। ‘রনজিতের ইচ্ছায়’ ওই ঋণ নেওয়া হয়।
এদিকে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, “শাহজাহান ও নিরঞ্জন ভুয়া টিন নম্বর ও ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে দুই কোটি টাকা লোন নিয়েছে। এই লোনের জন্য তৃতীয় পক্ষ শান্ত্রী রায়ের সম্পত্তি ব্যাংকে জামানত রাখা হয়।”
তবে জামানত রাখা সম্পত্তি সঠিক আছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।