এসএসসি: ফাঁস হয়েছে ১২ বিষয়ের প্রশ্ন, পরীক্ষা বাতিল হচ্ছে না

সদ্য শেষ হওয়া এসএসসি পরীক্ষার ১৭টির মধ্যে ১২টি বিষয়ের এমসিকিউ অংশের ‘খ’ সেটের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2018, 09:58 AM
Updated : 3 May 2018, 01:19 PM

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেন, “পরীক্ষার আগে ওই এমসিকিউ প্রশ্ন পেয়েছে পাঁচ হাজারের মত পরীক্ষার্থী। এ কারণে কোনো পরীক্ষা বাতিল করা হবে না।”

মন্ত্রী জানান, সোশাল মিডিয়ায় ক্লোজড গ্রুপের মাধ্যমে পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিট আগে এমসিকিউ প্রশ্ন ফাঁস হত বলে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে।

এসব গ্রুপে ১০ থেকে ১০০ জনের মত সদস্য ছিল এবং ৪০ থেকে ৫০টি গ্রুপে প্রশ্ন শেয়ার হয়েছে ধরে নিয়ে তদন্ত কমিটি মনে করছে, ফাঁস হওয়া প্রশ্ন সব মিলিয়ে পাঁচ হাজারের মত পরীক্ষার্থীর হাতে গেছে।

তাছাড়া এসএসসির সৃজনশীল অংশের কোনো প্রশ্ন ফাঁস না হওয়ায় পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না বলে মত দিয়েছে তদন্ত কমিটি।

গত ১ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার তত্ত্বীয় এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ ব্যবহারিক পরীক্ষা হয়। আগামী ৬ মে এ পরীক্ষার ফল প্রকাশের কথা রয়েছে।

পরীক্ষার সকালে বিভিন্ন ফেইসবুক পেইজ ও গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ছে প্রশ্নপত্র

তদন্ত কমিটির চার সুপারিশ

# শুধু ১২টি বিষয়ের ‘খ’ সেট এমসিকিউ প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় ৫ হাজারের মত শিক্ষার্থী প্রশ্ন ফাঁসের সুবিধা পেয়েছে। ফলে ২০ লাখ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা পুনরায় গ্রহণ করে তাদেরকে ভোগান্তিতে ফেলা সমীচীন হবে না। ফলে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধন্ত যুক্তিযুক্তি হবে না।

# প্রশ্নপ্রত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং তদন্তে প্রশ্ন ফাঁসের সুবিধাভোগী সকল পরীক্ষার্থীকে চিহ্নিত করে ফলাফল বাতিলসহ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

# কোনো পরীক্ষার্থীর বিরুদ্ধে পরীক্ষার আগে প্রশ্ন পাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে এবং প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে যারা জড়িত- তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

# মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৩০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করে সন্দেহজনক মোবাইল নম্বরগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং লেনদেনকারীর পেশা যাচাই করে দেখতে হবে।

গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ধারাবাহিকতায় এবারও এসএসসিতে অধিকাংশ বিষয়ের প্রশ্ন পরীক্ষার আগের রাতে বা পরীক্ষার সকালে ফাঁস হয় এবং সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে হলে বসা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি নানাভাবে কড়াকড়ি আরোপ করেও এসএসসিতে প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

এই প্রেক্ষাপটে এসএসসি চলার মধ্যেই গত ৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় মনিটরিং এবং আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির জরুরি সভায় ‘প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই কমিটি’ নামে ১১ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়।

ওই কমিটির প্রধান মো. আলমগীর ১৮ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের কিছু প্রমাণ তারা পেয়েছেন এবং সেসব পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ তারা করতে যাচ্ছেন।

অবশ্য শেষ পর্যন্ত কমিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেখানে পরীক্ষা বাতিল না করার সুপারিশ এসেছে।

বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ বলেন, এসএসসি পরীক্ষার সময় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে ১৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, ৩২টি মামলা হয়। পরে আরও ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

“গ্রেপ্তাররা জানিয়েছে, অনেকে মিথ্যা প্রচার করেছে। কিছু লোক সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টা করেছে। গ্রেপ্তার হওয়া অনেকে জেলে আছে, আরও অনেকে চিহ্নিত হয়েছে। তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হবে।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পরীক্ষায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় যত্রতত্র বসানো পরীক্ষা কেন্দ্র বন্ধ করতে হবে।

“বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানের কমিটি (পরিচালনা পর্যদ) প্রভাব খাটিয়ে কিছু কাজ করে। যেখানে একেবারেই প্রয়োজন নেই সেখানকার কেন্দ্র বাতিল করতে হবে।”

র‌্যাবের প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে জানান, তাদের বাহিনী প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতির ঘটনায় মোট ১০৬ জনকে গ্রেপ্তার করে ৮৬টি মামলা দিয়েছে।

পুরনো খবর