কাকরাইল মসজিদে তাবলিগের দুই পক্ষে ফের গণ্ডগোল

পুরনো দ্বন্দ্ব ধরে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে ফের মারামারি হয়েছে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2018, 09:19 AM
Updated : 28 April 2018, 11:39 AM

তাবলিগ জামাত পরিচালনার কেন্দ্রস্থলে শনিবার সকালে মারামারির পর পুলিশ গিয়ে দুই পক্ষের শীর্ষনেতাদের মসজিদ থেকে চলে যেতে বলে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। তাদের নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল হয়েছে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।”

শীর্ষ নেতাদের চলে যেতে বলার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পরিস্থিতি শান্ত রাখতে তাদের চলে যেতে বলা হয়।” 

গত বিশ্ব ইজতেমার আগে থেকে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। এই বিরোধের কেন্দ্রে রয়েছে তাবলিগের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভিকে নিয়ে।

বাংলাদেশে তাবলিগের এক পক্ষ মাওলানা সাদের পক্ষে, অন্য পক্ষ তার বিরুদ্ধে। তাদের রেষারেষিতে গত ইজতেমায় অংশ না নিয়েই ফিরতে হয়েছিল তাবলিগের এই নেতাকে।

বিষয়টি সরকার পর্যন্তও গড়িয়েছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যস্থতায় বৈঠকের পর উভয় পক্ষকে শান্ত থাকতে বলা হয়।

গত জানুয়ারিতে বিশ্ব ইজতেমার আগে তাবলিগ জামাতের বিরোধ মহাসড়কেও গড়িয়েছিল (ফাইল ছবি)

এই প্রেক্ষাপটে শনিবার সকালে কাকরাইল মসজিদে তাবলিগের ঢাকার আমিরদের একটি বৈঠককে কেন্দ্র করে তাদের বিরোধ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাওলানা সাদের অনুসারীরা বৈঠকে যোগ দিতে এলে তাদের বাধা দেন দিল্লির আরেক মাওলানা জুহাইরুল হাসানের অনুসারীরা। তখন বাধে মারামারি।

মাওলানা সাদের অনুসারী আকরাম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৈঠকে আমরা যেতে চাইলে গেটে আমাদের বাধা দেওয়া হয়। বৈঠকের রুমে ঢুকতে গেলে ওই পক্ষের লোকজনের সাথে হাতাহাতি হয়।  এরপর পুলিশ এসে দুইপক্ষকে সরিয়ে দেয়।”

বাধাদানকারীরা কওমি মাদ্রাসার ছাত্র বলে জানান তিনি।

আকরাম বলেন, “পুলিশ দুই পক্ষেরই শীর্ষ নেতাদের স্থান ত্যাগ করে চলে যেতে বলার পর তারা চলে আসেন।”

তাবলিগের দুই পক্ষের বিরোধ অবসানে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

ওই কমিটির সদস্য আবদুল কুদ্দুস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ঢাকার বাইরে আছি, নিজেদের মধ্যে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করছি।”

বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রস্থল কাকরাইল মসজিদ

উপমহাদেশে সুন্নি মুসলিমদের সবচেয়ে বড় সংঘ তাবলিগ জামাতের মূলকেন্দ্র ভারতের দিল্লিতে। মাওলানা সাদের দাদা ভারতের ইসলামি পণ্ডিত ইলিয়াছ কান্ধলভি ১৯২০ এর দশকে তাবলিগ জামাত নামের এই সংস্কারবাদী আন্দোলনের সূচনা করেন।

মাওলানা ইলিয়াছের মৃত্যুর পর তার ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ এবং তারপর মাওলানা ইনামুল হাসান তাবলিগের আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। মাওলানা ইনামুলের মৃত্যুর পর একক আমিরের বদলে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দেওয়া হয় একটি শুরা কমিটির ওপর। এরপর আমির হন মাওলানা জুবায়ের।

তার মৃত্যুর পর মাওলানা সাদ আমিরের দায়িত্ব নেন এবং একক নেতৃত্বের নিয়ম ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু মাওলানা জুবায়েরের ছেলে মাওলানা জুহাইরুল হাসান তখন নেতৃত্বের দাবি নিয়ে সামনে আসেন এবং তার সমর্থকরা নতুন করে শুরা কমিটি গঠনের দাবি জানান। কিন্তু সাদ তা প্রত্যাখ্যান করলে বিরোধ বড় আকার ধারণ করে।

ভারতে দ্বন্দ্ব মিটে গেলেও মাওলানা সাদের বিভিন্ন বক্তব্যে স্বার্থে আঘাত আসতে পারে বলে বাংলাদেশে তার বিরোধিতা করেছে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।