জগন্নাথে ‘যৌন নিপীড়নে’ শিক্ষককে তিরস্কারের সাজায় ক্ষোভ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে নাট্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল হালিম প্রামাণিককে (সম্রাট) কেবল তিরস্কার ও পদোন্নতি দুই বছর বিলম্বিত করার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রীরা।

ফখরুল শাহীনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2018, 04:36 PM
Updated : 30 April 2018, 10:34 AM

বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় অধ্যাপক প্রামাণিকের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রকাশনা জালিয়াতির জন্য ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আহমদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়।

প্রামাণিকের শাস্তিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিযোগকারী এক শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রকাশনা জালিয়াতির জন্য একজন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হলে যৌন নিপীড়নের জন্য তিরস্কারের এই শাস্তি হবে কেন?”

নতুন করে ঘটনার তদন্ত করে ওই শিক্ষকের ‘সর্বোচ্চ শাস্তির’ দাবি জানিয়েছেন তিনি। এর আগে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির জন্য আরেক শিক্ষক রাজীব মীরকে চাকরিচ্যুত করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।  

আব্দুল হালিম প্রামানিক (সম্রাট)

শাস্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ‌্যাপক মীজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া ছিল। ঘটনাটি নিয়ে দুই দফা তদন্ত করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

গত বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের কাছে নাট্যকলা বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুল হালিম প্রামাণিকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন তার বিভাগের এক ছাত্রী।

লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, আবদুল হালিম প্রামাণিক আগের দিন বিকাল সাড়ে ৫টায় মোবাইলে ফোন করে ক্লাসের জন্য তাকে বিভাগে আসতে বলেন। সন্ধ্যার দিকে তিনি বিভাগে এলে চেয়ারম্যান তাকে একাডেমিক বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে ক্লাসরুমে বসতে বলেন।

“ক্লাসরুমে সম্রাট কু-প্রস্তাব দেন এবং লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন এবং ঘটনার কথা কেউ জানবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিতে থাকেন। এ সময় তাকে ধাক্কা দিয়ে আমি ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে আসি।”

অভিযোগের পরদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের কথা জানানো হয়। তাতে বলা হয়, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ বিষয়ে ‘জরুরি ব্যবস্থা’ নিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যপক মীজানুর রহমানকে বলেছিলেন।

“বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ওই শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে।”

বরখাস্তের ওই ঘোষণা আসার পর প্রশাসনের কাছে আব্দুল হালিম প্রামাণিকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন তার বিভাগের আরেক ছাত্রী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল’ প্রথমে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে।

ওই তদন্ত কমিটির প্রধান গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়্যারম্যান হেলেনা ফেরদৌসি শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর উডকমকে বলেন, “আমরা যে তদন্ত করেছি তাতে আমরা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি এবং আমরা উপাচার্যের কাছে জমা দিয়েছি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় আরেকটি উচ্চতর তদন্ত কমিটি করে, তাদের সুপারিশে সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”

উচ্চতর তদন্ত কমিটির প্রধান ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেছেন, তারা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছেন, শাস্তির সুপারিশ করেননি।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তদন্তে প্রামাণিকের সাংঘাতিক সম্পৃক্ততা পাইনি, তবে প্রামাণিকের যে আচার-আচরণ করে তাতে এক ধরনের এসেসমেন্ট আছে, যেটা আমরা তদন্ত প্রতিবেদনে বলেছি। শাস্তির সুপারিশ আমরা করিনি, এটা সিন্ডিকেটের ব্যাপার, এটা তারাই করেছে।”

এই তদন্ত কমিটির কার্যক্রম নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন অভিযোকারী শিক্ষার্থীরা। 

প্রামাণিকের বিরুদ্ধে প্রথম যৌন হয়রানির অভিযোগকারী ওই শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উচ্চতর তদন্ত কমিটি আমাদের বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার চেষ্ট করেছে। অপ্রাসঙ্গিক কিছু প্রশ্ন করে আমাদের বিব্রত করেছে এবং মানসিকভাবে যথেষ্ট র্নিযাতন করেছে। আমরা বিষয়টি সাথে সাথে ভিসি স্যারকে জানিয়েছি।”

তাদের এই অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপাচার্য মীজানুর রহমান বলেন, “তাদের অভিযোগের পর আমি তদন্ত কমিটির সদস্যদের বলে দিয়েছিলাম যেন চাপাচাপি করে কারও কাছ থেকে কোনো বক্তব্য না নেওয়া হয়।” 

অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী অপর শিক্ষার্থী এখন নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের থাকার কথা জানিয়েছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন , “এটা কেমন রায় দিলেন প্রশাসন, আমি বুঝতেছি না। যৌন হয়রানির অভিযোগে এমন শাস্তি আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা জায়গায় কীভাবে এমনটা হয়? 

“এ তদন্ত কমিটি মানি না। নতুন করে তদন্ত করে তার শাস্তি চাই।”

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য অধ্যাপক আব্দুল হালিম প্রামানিককে ফোন করলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।”