সড়কে বিশৃঙ্খলা: অভিযোগের আঙুল মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দিকে

কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সরকার ও বিরোধী দলের নেতাদের কারণে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2018, 03:49 PM
Updated : 29 April 2018, 02:52 AM

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির ‘সড়ক দুর্ঘটনাবিরোধী মানববন্ধন ও সমাবেশে’ তিনি এ কথা বলেন।

গাজী টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ইশতিয়াক রেজা বলেন, “বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি একজন প্রতিমন্ত্রী,  বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি একজন মন্ত্রী। ক্ষমতার শীর্ষে বসে তারা কোনো ধরনের আইন ও বিধি করতে বাধা দিচ্ছেন।”

তিনি বলেন, “সড়ক পরিবহনের আরেকজন প্রভাবশালী নেতা এনায়েতুল্লাহ (সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতুল্লাহ), যার এনা পরিবহন রাস্তায় নামে শুধু মানুষ খুনের জন্য, মানুষ পরিবহনের জন্য নয়। বিরোধী দলে যারা আছেন তারাও ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের সাথে আছে। ভিন্ন রাজনীতি করলেও পরিবহনের বেলায় তারা এক হয়ে যায়।”

সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ও দেশের মানুষ এক হতে না পারার কারণে এই খাতে নৈরাজ্য অব্যাহত রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে তার অভিযোগের বিষয়ে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী বা খন্দকার এনায়েতুল্লাহর ভাষ্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।

রোজিনা আক্তার নামের ২১ বছর বয়সী এক তরুণী গত ২০ এপ্রিল রাতে বনানীতে রাস্তা পার হওয়ার সময় বিআরটিসির একটি বাসের চাপায় তার ডান পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

দুই দফা অস্ত্রোপচার করে তার ডান পা উরুর গোড়া থেকে ফেলে দিতে বাধ্য হন জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসকরা।

অবস্থার অবনতি হতে থাকায় গত ২৫ এপ্রিল রোজিনাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) রাখা হয়। তার অবস্থা এখনও স্থিতিশীল নয় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। 

ময়মনসিংহের মেয়ে রোজিনা গত ১০ বছর ধরে ঢাকায় সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার বাসায় কাজ করে আসছিলেন। ইশতিয়াক রেজার ভাষায়, রোজিনা তার পরিবারেরই একজন হয়ে উঠেছেন। 

সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত হওয়া সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার প্রতিবাদ জানতে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে ইশতিয়াক রেজা বলেন, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার ‘বিশ্বে সর্বোচ্চ’।

“প্রতি ১০ হাজারে ৮৫ জনের মৃত্যু হয় সড়ক দুর্ঘনায়। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় যারা মারা যাচ্ছে তারা হত্যার শিকার। সড়কে এভাবে প্রাণ গেলেও কারও কোনো বিচার হয় না। মানুষের মৃত্যু নিয়ে রাষ্ট্র ভাবে না, দরিদ্র মানুষদের মৃত্যু নিয়ে পরিবহন মালিকও ভাবে না।”

বাংলাদেশের পরিবহন খাতের শ্রমিকদেরও সমালোচনা করেন এই সাংবাদিক।

তিনি বলেন, “তাদেরকে কোনো ধরনের শৃঙ্খলার মধ্যে আনা যায় না। দেশের একমাত্র পরিবহন খাতেই মালিক-শ্রমিকদের ভয়ঙ্কর ঐক্য দেখতে পাই, যেখানে ব্যাপারটা মানুষ খুনের। মালিক-শ্রমিকরা সব কিছুর বৈধতা দেওয়া চেষ্টা করে। এর পিছনে বড় রাজনীতি ও বাণিজ্য আছে।”

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন ইশতিয়াক রেজা।

তিনি বলেন, পরিবহন বিভাগে নগদ টাকা বিনিময় বন্ধ করে বাস কার্ড চালু করতে হবে। তাতে যানবাহনে বেপরোয়া ও নৈরাজ্য কমবে।

“ঢাকা শহরের বাসগুলো এক হাজার ১০০ মালিকের হাতে। বাসের মালিকানা কর্পোরেট ব্যবস্থাপনায় আনতে হবে। এ জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।”

সাত বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হওয়া সাংবাদিক নিখিল ভদ্র সমাবেশে বলেন, “এক সড়ক দুর্ঘটনায় আমি বেঁচে গেলেও প্রতিনিয়ত সড়কে মানুষ মারা যাচ্ছে। মর্মান্তিক এসব সড়ক দুর্ঘটনায় যারা মারা যাচ্ছেন তারা তো চলে যাচ্ছেন, কিন্তু যারা আহত হয়ে পা বা হাত হারিয়ে যন্ত্রণায় আছেন, তার পুরো পরিবার যন্ত্রণায় আছে।”

সরকার, সাধারণ জনগণের উদ্যোগের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত চালক এবং সাধারণ মানুষের সচেতনতার মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো কথা বলেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদের সভাপতি গণি মিয়া বাবুল বলেন, “কোন কোন কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে সেগুলো গবেষণা করে বের করা দরকার। এরপর সেই অনুসারে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।”

তিনি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আলাদা অধিদপ্তরের দাবি জানান।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বলেন, “চালকদের হাতে আজ দেশ ও দেশের মানুষ অসহায়, যে কারণে প্রতিনিয়ত আমরা আমাদের কাছের মানুষদের হারাতে হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় আমরা নতুন করে আর কারও প্রাণহানী চাই না। এই খাতে একটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।”

জাতীয় কমিটির সভাপতি শহীদ মিয়ার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে সাংবাদিক নেতা সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাংবাদিক মশিউর রহমান, জাতীয় কমিটির সদস্য রাজস্ব ভট্টাচায্যসহ অনেকে বক্তব্য দেন।