স্বপ্নের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের বনানী শাখার ওই কর্মী গত ৯ মার্চ থেকে লাপাত্তা ছিলেন। তার বিষয়ে গ্রাহকদের কাছ থেক অভিযোগও পেয়েছিলেন তারা।
গত ১০ মার্চ ক্লোন কার্ড দিয়ে ঢাকার পাঁচটি ব্যাংকের অর্ধশত গ্রাহকের প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। পরে গ্রাহকদের অভিযোগ পেয়ে ব্যাংকগুলো নিশ্চিত হয় এবং পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে মিঠুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি।
মিরপুর থানায় মিঠুর বিরুদ্ধে মামলা করে বুধবার বিকালে তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হলে বিচারক ফাহাদ বিন আমিন চৌধুরী তাকে চার দিনের রিমান্ডে পাঠান।
এর আগে দুপুরে ঢাকার সিআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মিঠুর জালিয়াতির কৌশল নিয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন সিআইডির পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “সম্প্রতি ব্র্যাক, সিটি, ইবিএল, ইউসিবিএল ও ব্যাংক এশিয়ার কার্ড জালিয়াতির ঘটনার হোতা ওই ব্যক্তি। তার কাছে প্রায় দেড় হাজার ক্লোন করা কার্ড এবং কার্ড তৈরির সরঞ্জাম পাওয়া গেছে।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মেহেরপুর জেলার গাংনীর হেমায়েতপুরের ইয়াজ উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে মিঠু (৩৩) গাংনী ডিগ্রী কলেজ থেকে ২০০৩ সালে এইচএসসি পাস করে রাশিয়ায় যান পড়তে। সেখানে ইভানোভিচ নামের আরেক তরুণের কাছে তিনি ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির কৌশল শেখেন।
মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ২০১৩ সালে দেশে এসে কার্ড জালিয়াতি শুরু করেন মিঠু। ওই বছর জালিয়াতির দুটো মামলায় তিনি ১৮ মাস জেলাহাজতেও ছিলেন।
তারপর গ্রাহক যখন পস মেশিনে পিন নম্বর দিত, মিঠু তখন ‘কৌশলে’ পিন নম্বর দেখে নিতেন এবং গ্রাহক বিল শোধ করে চলে যাওয়ার পর বিলের কপি রি-প্রিন্ট করে তার পিছনে পিন নম্বর লিখে রাখতেন।
মোল্যা নজরুল বলেন, “বাসায় গিয়ে মিঠু তার ডিভাইসের মাধ্যমে কাস্টমারের ব্যক্তিগত তথ্য ভার্জিন কার্ড বা খালি কার্ডে বসিয়ে ক্লোন এটিএম কার্ড তৈরি করতেন। পরে এটিএম বুথ থেকে সেই কার্ড দিয়ে টাকা তুলে নিতেন।”
বুথ থেকে টাকা তোলার সময় সিসি ক্যামেরায় যাতে চেহারা বোঝা না যায়, সেজন্য মিঠু পরচুলা ও চশমা ব্যবহার করতেন বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “স্বপ্নে চাকরি করলেও তার আসল কাজ ছিল ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করা। এভাবে প্রায় শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।”
মোল্যা নজরুল জানান, মিঠুর একটি ব্যাংক একাউন্টে প্রায় ১৫ লাখ টাকার সন্ধান পেয়ে তা জব্দ করা হয়েছে। বাকি টাকা কোথায় আছে, সে বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
“মিঠু বিলাসী জীবনযাপন করতেন। তার একটি গাড়িও জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা যে তথ্য পেয়েছি, তাতে তিনি একাই জালিয়াতির ওই কাজ করতেন।”
তানিম সাংবাদিকদের বলেন, বানানী শাখার একজন গ্রাহক অভিযোগ করেছিলেন, পস অপারেটর শরিফুল ইসলাম মিঠু গ্রাহকদের বিল পরিশোধের পর স্লিপে ‘কিছু একটা’ লিখে রাখেন। ওই অভিযোগ পাওয়ার পর খোঁজ নিতে গেলে মিঠু নিরুদ্দেশ হন। পরে স্বপ্নের পক্ষ থেকে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।
স্বপ্নে যোগ দেওয়ার আগে মিঠু বিভিন্ন সুপারশপে কাজ করেছেন। তবে স্বপ্নে কতদিন ছিলেন তা তাৎক্ষণিকভাবে তিনি জানাতে পারেননি।
দুই বছর আগে কার্ড ক্লোন করে এটিএম থেকে টাকা তুলে নেওয়ার সময় ঢাকায় এক চীনা নাগরিককে আটক করা হয়েছিল। তার সঙ্গে আরও অন্তত দুজন চীনা নাগরিক জড়িত বলে তখন পুলিশ জানিয়েছিল।
তারও আগে আরেক জালিয়াতির পর এক ইউরোপীয়কে আটক করা হয়। তখন কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তাও ধরা পড়েছিলেন।
বর্তমানে দেশে প্রায় ১০ লাখ ক্রেডিট কার্ড গ্রাহক রয়েছে। আর ডেবিট কার্ড রয়েছে প্রায় ৬০ লাখ। দেশের ৫৭ ব্যাংকের মধ্যে ৩৯টি ব্যাংক কার্ড সেবা দিচ্ছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে সব কার্ড চিপযুক্ত করতে হবে। সব ব্যাংক এ প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করলে কার্ড জালিয়াতি কমে আসবে।