ঢাকায় স্কুলের মাঠ দখল করে ‘মাদক ব্যবসা’

ঢাকার রমনার সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের জায়গা দখল  করে মাদক ব্যবসা চালানোর অভিযোগ এসেছে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2018, 10:23 AM
Updated : 25 April 2018, 10:51 AM

ওই তিন জন নিজেদের যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয়  দিয়ে দখল করা জায়গায় ঘর তুলে ‘টর্চার সেল’ গড়ে তুলেছেন বলেও অভিযোগ করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ এনে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান স্থানীয় কাউন্সিলর মুন্সী কামরুজ্জামান কাজল বলেছেন, দখলের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাকে হত্যার হুমকিও পেতে হয়েছে।

যে যুবকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, তারা হলেন গোলাম মোস্তফা শিমুল (৪২), দেওয়ান আলীমউদ্দিন শিশির (৩৮) ও মাসুদ রানা (৩৮)।

বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ শেখ ফরিদুজ্জামান, বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক, কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘অবৈধ কর্মকাণ্ড’ ও শিক্ষকদের মারধরের অভিযোগে ওই তিন যুবকের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৭/৮ জনকে আসামি করে গত সোমবার রমনা থানায় মামলা করেছেন অধ্যক্ষ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, হুমকি পাওয়ার পর সোমবার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তিনি।

অভিযোগের মুখে থাকা তিনজন মাসুদ, শিশিরি ও শিমুল

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ ফরিদুজ্জামান বলেন, “শিমুল, শিশির ও মাসুদ চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী। তারা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদকের ব্যবসা করে আসছে।

“বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষ দখল করে রাতে মাদক ব্যবসা পরিচালনা, বিদ্যালয়ের মাঠে অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করে চাঁদা উত্তোলন, মাঠে টর্চারসেল স্থাপন, বিদ্যালয়ের জায়গায় দোকান করে তারা ভাড়া তুলছে।”

এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় গত রোববার দুপুরে আগ্নেয়াস্ত্রসহ ওই  বিদ্যালয়ে ঢুকে তিন শিক্ষক আমিনুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন ও রুহুল আলমকে মারধর করেন বলে অধ্যক্ষ জানান।

তিনি বলেন, “এ সময় তারা পিস্তল উঁচু করে বলতে থাকে- ‘আমরা যা করব, তা মুখ বুঝে সহ্য করবি, না হলে জীবনের মত শেষ করে দিব’।”

মামলা করার পর তা তুলে নিতে ওই তিনজন বিভিন্নভাবে শিক্ষকদের হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন ফরিদুজ্জামান।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নিরাপত্তাকর্মীরা বলেন, শিমুল, শিশির ও মাসুদরা বিদ্যালয়ের পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করে থাকে। রাতে বিদ্যালয়ের ফটক খুলে রাখতে বাধ্য করে। বিভিন্ন জায়গা থেকে গাড়ি এনে বিদ্যালয়ের মাঠে কাপড় দিয়ে ঢেকে লুকিয়ে রাখে। চাঁদার দাবিতে বিভিন্ন লোকজনকে রাতে ধরে এনে তাদের ‘টর্চার সেলে’ নির্যাতন চালায়।

মাঠের এই কোনা দখল করে তৈরি কররা হয়েছে স্থাপনা

কাউন্সিলর কামরুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “শিমুল, শিশির ও মাসুদ মূলত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ এবং মাদক ব্যবসায়ী। শিমুলের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলাসহ তাদের সবার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।”

তিনি বলেন, “মৌচাকের আনারকলি মার্কেট, বিদ্যালয়ের মাঠ ও স্থানীয় মসজিদের আশপাশে কয়েকশ ছোট-বড় দোকান বসিয়ে এসব থেকে প্রতিদিন ৬০ হাজার টাকার চাঁদা তোলে তারা।

“এছাড়া স্কুল মাঠে গাড়ি পার্কিং করে সেখান থেকে টাকা তোলা হয়। এসবের প্রতিবাদ করলে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা।”

শিমুল এই বিদ্যালয়ের একজন দাতা সদস্য স্বীকার করে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বলেন, তাও তিনি হয়েছেন ‘জোর করে’।

“তারা সুবিধামতো রাজনৈতিক পরিচয় দেয়। যখন সেই সরকার ক্ষমতায় থাকে, তখন তারা সেই দলের হয়ে ক্ষমতার প্রভাব দেখায়। তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা মুখ খুলতে সাহস পায় না।”

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিশির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে এমন কোনো মামলা হয়েছে কি না, আমারা জানা নেই। এছাড়া বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মারধরের মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি।”

কাউন্সিলরকে হত্যার হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কউন্সিলর হচ্ছেন আমাদের জনপ্রতিনিধি, তাকে কে মারবে? আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করে থাকলে এটা মিথ্যা-বানোয়াট অভিযোগ করেছেন তিনি।”

অন্য দুই আসামি গোলাম মোস্তফা শিমুল ও মাসুদ রানার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ওই ঘটনায় বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের ও কাউন্সিলরের জিডি করা কথা স্বীকার করে রমনা থানার ওসি মঈনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসামিদের কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি, তবে তাদের গ্রেপ্তারে আমরা চেষ্টা করছি। আমরা বিদ্যালয়ের এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।”