চুরি করে ধনী নয়, ভালো মানুষ হতে হবে: নাহিদ

নতুন প্রজন্মকে চুরি-দুর্নীতির বিষয়ে সতর্ক করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, চুরি করে ধনী না হয়ে সবাইকে হতে হবে ভালো মানুষ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2018, 04:29 PM
Updated : 23 April 2018, 04:29 PM

বিশ্ব বই দিবস উপলক্ষে সোমবার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে তিনি জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

মন্ত্রী বলেন, “উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি আমরা লাভ করেছি। মনে রাখতে হবে, আমরা অর্থশালী, বিত্তশালী, ধনী খুঁজে পাই। শুধু ধনী হলেই হবে না। ধনী হয়ে যদি চোর হয়ে যাই, তাহলে কী হবে?

“চুরি করে টাকা রোজগার করে, ব্যাংকের টাকা চুরি করে বিদেশে নিয়ে চলে যাই। … আমাদের ভালো মানুষ হতে হবে।”

পাঠ্যপুস্তক ও সৃজনশীল বই সমানতালে পড়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “বই পড়া না জানলে ভালো বই, মন্দ বই, সৃজনশীল বই- এগুলো কে বলবে?

“আমি বলব, যে বই পড়লে উৎসাহিত হওয়া যায়, আরো শিখবে, আরো জানবে এবং আমাকে একজন ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে; আমার স্বভাব, আমার চরিত্র, আমাদের মূল্যবোধ, আমার ইতিহাস-ঐতিহ্য, আমার জাতি, আমার দেশ, এই মানুষ, মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কে আমাকে জাগ্রত করবে- সেগুলো ভালো বই।”

নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও পাঠ্যপুস্তকের মান বাড়ানোর পাশাপাশি সরকার বিদ্যালয়গুলোর গ্রন্থাগার সচল করতে উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান নাহিদ।

তিনি বলেন, আড়াই হাজার উপজেলায় ১৪ হাজার সহকারী গ্রন্থাগারিক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। ওই সব উপজেলায় আগে যেখানে সচল গ্রন্থাগারের সংখ্যা ছিল ২৫ শতাংশ, সেটা বেড়ে ৫৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সঙ্গে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের যৌথ আয়োজনে এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।

তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেকায়েপ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তারা ২০১৭ সালে ২২ লাখ শিক্ষার্থীকে বই পড়া কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন। ২০১৮ সালের শুরু থেকে কেবল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এই উদ্যোগে যুক্ত আছে ২১ লাখের বেশি শিক্ষার্থী।

বই পড়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, “প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি থাকবে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা, পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা। যে শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ নিজেকে নিজে ছাড়িয়ে যায়। যে শিক্ষার মাধ্যমে সে পৃথিবীকে অনেক উপরে থেকে দেখতে পায়।”

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বিভিন্ন কর্মসূচিতে মেয়েদের এগিয়ে আসার প্রসঙ্গ টেনে এখন ছেলেরা বিভিন্নভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।

“আমাদের দেশের ছেলেদের অধঃপাতে যাওয়ার এত কিছু... আমাদের বই পড়া কর্মসূচির মধ্যে দেখা যাচ্ছে ৬০ শতাংশ মেয়ে, ৪০ শতাংশ ছেলে। পুরস্কার নিতে যখন আসে, তখন সমস্ত মাঠ মেয়েতে ভরা থাকে। মাঝেমধ্যে কিছু ছেলেকে করুণ অবস্থায়, লজ্জিতভাবে দেখতে পাওয়া যায়।”

তিনি বলেন, “মেয়েরা হাজার হাজার বছর ধরে নির্যাতিত হয়েছে, শোষিত হয়েছে, অত্যাচারিত হয়েছে। আজ তাদের মুক্তি অনিবার্য, এটা হবেই। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি যন্ত্র সভ্যতার যে উন্নতি হয়েছে, তারা এগিয়ে যাবেই।”

সবে ছেলেরা পিছিয়ে পড়া ‘সুখকর বিষয় নয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ছেলেদেরও সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের সচিব মনজুর হোসেন জানান, উইলিয়াম শেক্সপিয়রসহ কয়েকজন মনীষীর মৃত্যুবার্ষিকীর দিন ২৩ এপ্রিলকে ১৯৯৫ সাল থেকে বই দিবস হিসাবে পালন শুরু করে ইউনেস্কো। এরপর তার সঙ্গে মেধাস্বত্ব যুক্ত হয়ে দিনটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ‘ওয়ার্ল্ড বুক অ্যান্ড কপিরাইট ডে’ হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।

অন্যদের মধ্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, লেখক আনিসুল হক, জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে ‘আলোকিত প্রজন্মের জন্য সৃজনশীল বই পড়ার গুরুত্ব’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাউশির পরিচালক সরকার আবদুল মান্নান।