নারীকেই সবসময় কর্মক্ষমতার প্রমাণ দিতে হয়: তারানা

নারী যে কাজ পারে সেজন্য তাকে বারবার প্রমাণ দিতে হয় এবং পুরুষের তুলনায় বেশি কাজ করতে হয় বলে খেদ ঝরেছে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের কণ্ঠে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2018, 03:47 PM
Updated : 23 April 2018, 04:46 PM

নারী বিষয়ক ত্রৈমাসিক ‘পারি’র সপ্তম বর্ষে পদার্পণ ও ‘পারি’ সম্মাননা প্রদান উপলক্ষে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমি অনেকদিন নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেছি। একটি জায়গায় যদি আমার দুঃখের কথা বলি- নারীকে সবসময় নিজেকে প্রমাণ করতে হয়, এটা আমার কষ্ট হয়।

“নারীকে সবসময় প্রমাণ করতে হয় যে- আমি পারি, এবং সেই পারি এটা প্রমাণ করবার জন্য নারীকে সবসময় একজন পুরুষের চেয়ে বেশি খাটতে হয়, বেশি মেধার চর্চা করতে হয়, বেশি পরিশ্রম করতে হয়, বেশি প্রমাণ করতে হয় যে আমি তোমার সমকক্ষ, দেখ। অথচ একজন পুরুষ যখন যেকোনো পেশায় যান তখন ধরেই নেওয়া হয় তিনি যোগ্যতাসম্পন্ন এবং তিনি পারেন।”

এটা পরিবর্তনে সবার মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি উল্লেখ করেন তারানা হালিম। সেই সঙ্গে অন্যকে নিয়ে সমালোচনা না করে নিজেদের জিহ্বাকে সংবরণের পরামর্শ দেন তিনি।

“আমি বিশ্বাস করি আমরা যদি আমাদের জিহ্বাটা সংবরণ করি, অনেক নারীকে অত্যাচারের হাত থেকে আমরা মুক্তি দিতে পারব, অনেক নারীকে আত্মহননের পথ থেকে আমরা মুক্তি দিতে পারব।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠক ও সাংবাদিক নাসিমুন আরা হক বলেন, “আমরা যে পারি সেটা প্রমাণ হয়েছে। সকল ক্ষেত্রে নারীরা পেরেছে।”

এক্ষেত্রে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, পাহাড়-পর্বত জয়, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে নারীদের প্রত্যক্ষ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

“মুক্তিযুদ্ধে আমরা সরাসরি অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু দীর্ঘদিন নারীর কথা ভুল ছিল সবাই, কেউ বলেনি মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানের কথা। কী বলেছে? মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ, দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত। নারীদের শুধু নির্যাতিতা বললে হবে না, তারা মুক্তিযোদ্ধা, তারা স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন বলি দিয়েছে।”

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ‘পারি’ সম্পাদক লাইলা খালেদ, শিল্পী ফরিদা পারভীন, সাহিত্যিক কনা রেজা, সংসদ সদস্য কাজী রোজী, পূর্বাপর পত্রিকার সম্পাদক হাসান মাহমুদ, ছড়াকার আশরাফ সানি, কলকাতার কবি শান্তিময় মুখোপাধ্যায়, কবি কাজী সুফিয়া আক্তার, রাখি দাস পুরকায়স্থ, ঝর্ণা দাস পুরকায়স্থ, হাসনিম মুক্তাদিরসহ অনেকে।

সৃজনশীল কাজে অবদানের জন্য অনুষ্ঠানে সাত নারীকে সম্মাননা দেওয়া হয়।

এরা হলেন- কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন, কবি ও রাজনীতিবিদ কাজী রোজী, শিশু সাহিত্যিক ঝর্ণা দাস পুরকায়স্থ, প্রথম নারী আলোকচিত্রী সায়িদা খানম, মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠক ও সাংবাদিক নাসিমুন আরা হক, লালন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন এবং নারী উদ্যোক্তা হাসনিম মুক্তাদির।

অনুষ্ঠানে আত্মপ্রকাশ করেছে লেখকদের সংগঠন ‘লেখ ঐক্য ফোরাম’ যার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন রাবেয়া খাতুন। সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কণা রেজা ও দিল মনোয়ারা মনু এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন লাইলা খালেদ।