ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগ বিবেচনা করা হবে: সংসদীয় কমিটি

সংসদে উত্থাপিত আলোচিত-সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে সব বিষয় নিয়ে উদ্বেগ আছে, তা বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে সংসদীয় কমিটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2018, 04:31 PM
Updated : 22 April 2018, 04:31 PM

রোববার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়টি আলোচনায় ওঠে।

বৈঠকে প্রস্তাবিত এই আইনটি নিয়ে সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকদের সংগঠন ‘সম্পাদক পরিষদ’, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন-অ্যাটকোর সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “এ আইনটির বিষয়ে যেসব উদ্বেগ আছে সেগুলো বিবেচনা করা হবে। কমিটি স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করে বিলটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে।”

আগামী মে মাসের ২০ তারিখের পরে ওই তিন সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি।

গত ২৯ জানুয়ারি ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সংসদে উত্থাপনের পর খসড়া আইনটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

বিতর্কিত ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা তথ্য প্রযুক্তি আইন থেকে সরিয়ে সেগুলো আরও বিশদ আকারে যুক্ত করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে।

এ আইন পাস হলে হ্যাকিং; ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’; রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করতে বা ভয়ভীতি সৃষ্টির জন্য কম্পিউটার বা ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং ডিজিটাল উপায়ে গুপ্তচরবৃত্তির মতো অপরাধে ১৪ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে।

আর ইন্টারনেটে কোনো প্রচার বা প্রকাশের মাধ্যমে ‘ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধে আঘাত’ করার শাস্তি হবে ১০ বছরের জেল, ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।

এই আইনের ৩২ ধারা মুক্ত সাংবাদিকতার পথে বাধা হবে বলে মনে করেন সাংবাদিকরা

খসড়া আইনটির মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর থেকে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে পড়ে। সাংবাদিকরাও প্রস্তাবিত আইনটির ৩২ ধারায় সমালোচনা করছেন। তারা বলছেন, এই আইনের ফলে প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ হবে।

বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে এক বৈঠকেও ১২টি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকরা খসড়া আইনটির বিষয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানান।

তারা প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ছয়টি ধারাকে ‘বাক স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি’ হিসেবে বর্ণনা করে সেগুলো সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন।

প্রস্তাবিত আইনের ২১, ২৫, ২৮, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ।

আইন সংশোধন হয়েছে!

এদিকে সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বৈঠকে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮’ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে বিলটিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয় এবং বিলটিকে অধিকতর যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে স্টেক হোল্ডারদের সাথে আলোচনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।”

প্রস্তাবিত আইনের সংশোধনের বিষয়ে সংসদীয় কমিটি আলোচনা করেছে কি না- জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি ইমরান বলেন, “আমরা সংশোধনের বিষয়ে কোনো আলোচনাই করিনি। প্রথমে আমাদের বিলটি নিয়ে পড়তে হবে। আমাদের সদস্যরা মতামত দেবেন, স্টেকহোল্ডাররা মতামত দেবেন, তারপর না সংশোধনের বিষয়ে আলোচনা।”

সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই।”

ইমরান আহমদের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, শওকত হাচানুর রহমান (রিমন) এবং হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া অংশ নেন।

বিশেষ আমন্ত্রণে ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বৈঠকে ছিলেন।