সরকারের বক্তব্য না নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন শিষ্টাচার বহির্ভূত: তথ্যমন্ত্রী

বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য না নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করাকে ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2018, 03:20 PM
Updated : 22 April 2018, 03:20 PM

এই প্রতিবেদনকে ‘একতরফা, মনগড়া, ভিত্তিহীন’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যানের কথা জানিয়েছেন তিনি।

রোববার সচিবালয়ে নিজের দপ্তরে সদ্য প্রকাশিত এ প্রতিবেদন নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার ‘একতরফাভাবে’ বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর বার্ষিক প্রতিবেদন দিয়ে আসছে মন্তব্য করে ইনু বলেন, “কোনো দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিক বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরির সময় সে দেশের সরকারের ভাষ্য না নেওয়া কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত।”

বাংলাদেশের ওপর এ প্রতিবেদন তৈরির আগে তথ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নেওয়া উচিৎ ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

৪২ বছরের প্রথা অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন সুলিভান।

বাংলাদেশের আইনে শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশের অধিকার দেওয়া হলেও সরকার তা সীমিত করেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।  

এছাড়া বাংলাদেশে গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু এবং ক্ষেত্রবিশেষে সংবাদমাধ্যমের প্রতি সরকারের ‘নেতিবাচক আচরণের’ অভিযোগ করা হয়েছে এতে।

প্রতিবেদনে বেসরকারি সংস্থা ‘অধিকার’ এর নাম আসায় তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে পুলিশি অভিযানে ‘হাজার হাজার মানুষ’ নিহত হয়েছিল বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল অধিকার। পরে এ প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাইয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় তথ্য চাইলে ওই সংগঠন তা দিতে ব্যর্থ হয় বলে জানান তথ্যমন্ত্রী।

“এমন এনজিও’র বরাতে তৈরি প্রতিবেদন সঠিক হবার কথা নয়,” বলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের  প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, প্রিন্ট ও অনলাইন গণমাধ্যম খুবই সরব এবং তাদের মতামত নিঃসংকোচে প্রকাশ করতে পারলেও যেসব গণমাধ্যম সরকারের সমালোচনা করে তারা নেতিবাচক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়।

সরকার ও গণমাধ্যমের নেতিবাচক সম্পর্কের এই  অভিযোগ সম্পূর্ণ ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেন ইনু।

তিনি বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি সরকার ‘শ্রদ্ধাশীল’ রয়েছে।

“সমালোচনার জন্য কোনো গণমাধ্যমের সাথে সরকারে নেতিবাচক আচরণের ঘটনা নেই। গণমাধ্যমের কথা বলার অধিকারের উপর কোনো সরকারি নিয়ন্ত্রণ নেই। সাংবাদিকদের কেউ দমন পীড়নের আতঙ্কে আছেন, এমন অভিযোগও নেই।

টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্রের প্রচার ও প্রকাশনার লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক তদবির ‘ব্যাপক প্রভাব ফেলে’ উল্লেখ করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীনদের সমর্থকরাই সাধারণত লাইসেন্স পায়।

এই অভিযোগ অস্বীকার করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্রের লাইসেন্স আইন অনুযায়ী প্রকৃত উদ্যোক্তাদের দেওয়া হয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়।”

‘এনজিও’ হিসেবে জামায়াতে ইসলামী সভা করার অনুমতি চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে- এমন অভিযোগ খণ্ডন করে তিনি বলেন, “যে কোনো রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক সংগঠনকে সভা-সমাবেশ করতে হলে বিশ্বের সকল দেশের মতো এখানেও অনুমতি নিতে হয়। আর জামাতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক দল। কোনো এনজিও না।”

প্রতিবেদনে বিচার বিভাগ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, আইনে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকলেও ‘দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে’ তা কার্যকর হচ্ছে না।

এই বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “বিচার বিভাগ স্বাধীন, সেখানে সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজেই নিজেকে বিতর্কিত করে অবসর নিয়েছেন। তার বিষয়ে মার্কিন ওকালতি দুঃখজনক।”

প্রতিবেদনে বিচারকদের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগকে ‘ঢালাও মন্তব্য’ আখ্যায়িত করেন তিনি।

বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, “বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দায়মুক্তির বিধান বাংলাদেশে নেই। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে তদন্ত হয়, শাস্তি হয়, কারো দায়মুক্তি নেই।”