অথচ ওই হত্যাকাণ্ডের পর বাবাই মামলা করেছিলেন এক প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে, যার সঙ্গে তার বিরোধ ছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, একটি ভিডিও দেখে সন্তানের খুনি হিসেবে জাহিদ ওরফে জাহাঙ্গীর নামে ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর বাড্ডার সাতারকূল এলাকার বাসিন্দা। সেখানে তার একটি চায়ের দোকান রয়েছে। তার ছেলে আইসার (১৩) গত ১৭ এপ্রিল রাতে খুন হন। সাতারকুলের বালুর মাঠের পাশে ধানক্ষেতে তার লাশ পাওয়া গিয়েছিল।
আইসারের লাশ উদ্ধারের পর জাহাঙ্গীর একটি হত্যামামলা করেন ওই এলাকার হিলুকে আসামি করে।
হত্যামামলার তদন্তে গিয়ে পুলিশ স্থানীয়দের কাছে জানতে পারে, হিলুর স্ত্রীর সঙ্গে জাহাঙ্গীরের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এ নিয়ে দুজনের দ্বন্দ্ব চলছিল। হিলু মাঝে-মধ্যে জাহাঙ্গীর ও তার ছেলেকে হত্যার হুমকিও দিত।
আইসার সম্পর্কে স্থানীয়রা পুলিশকে জানায়, এই কিশোর মাদকাসক্ত, মাঝে মাঝে অটোরিকশা চালাত।
হিলুকে ঘিরে তদন্ত চালাতে গিয়ে পুলিশ একটি ভিডিও পায় বলে জানান ডিএমপির বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার আশরাফুল ইসলাম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ওই রাতে আইসারের সাথে এক ব্যক্তি যাচ্ছে এবং তার কিছু দূরে পিছে পিছে লুঙ্গি পরা আরও একজনও যাচ্ছে।”
ভিডিওর ব্যক্তির পরনের লুঙ্গি ও জামা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় ২০ এপ্রিল তাকে থানায় ডেকে নেওয়া হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা আশরাফুল বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদ করলে মজিদের সহযোগিতায় সন্তানকে হত্যার ঘটনা অকপটে স্বীকার করে জাহাঙ্গীর। পরে মজিদকেও গ্রেপ্তার করা হয়।”
এই মজিদ নিহত আইসারের বাবা জাহাঙ্গীরের দূর সম্পর্কের আত্মীয়।
সন্তানকে খুনের জন্য জাহাঙ্গীর তাকে ভাড়া করেছিল, বলেন পুলিশ কর্মকর্তা আশরাফুল।
হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “আইসার ইয়াবা সেবন করত, এই সুযোগটা কাজে লাগাতে মজিদকে পরামর্শ দেয় জাহাঙ্গীর।
“সে অনুযায়ী একটি ওষুধের দোকান থেকে ইয়াবার মতো দেখতে কিছু ট্যাবলেট কেনে মজিদ। ঘটনার দিন (১৭ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে মজিদ এই ট্যাবলেটকে ইয়াবা বলে কৌশলে আইসারকে তার সাথে যেতে বলে। আইসার ইয়াবা সেবনের আশায় মজিদের পেছনে পেছনে বালুর মাঠ ধানক্ষেতে যায়। তাদের পেছনে একটু দূরত্বে ছিল জাহাঙ্গীর।
“আইসারকে সেখানে নেওয়ার পর গলা টিপে এবং ধানক্ষেতের পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে চলে আসে মজিদ এবং অনতিদূরে দাঁড়ানো জাহাঙ্গীরকে বলে, ‘কাজ শেষ’।”
ঘটনার চার-পাঁচ দিন আগেও একবার আইসারকে হত্যার পরিকল্পনা করে জাহাঙ্গীর ব্যর্থ হয়েছিলেন বলে মজিদ পুলিশকে জানিয়েছেন।
পরদিন ধানক্ষেতে লাশ উদ্ধারের পর আশেপাশের এলাকায় হৈ চৈ পড়ে যায়। পরে জাহাঙ্গীর গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন এবং হিলুসহ কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল- জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা আশরাফুল বলেন, “হিলুকে আসামি করে মামলা করলে নির্বিঘ্নে তার স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারবে এবং বেশ শায়েস্তা হবে। এই পরিকল্পনা করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল জাহাঙ্গীর।”
জাহাঙ্গীর ও মজিদের দেওয়া তথ্যে এখন তাদেরই আসামি করে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।