প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আসিফ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “সকলের প্রতি আস্থা রেখে বলছি, রিপোর্টে যেসব বিষয় কভার করার কথা ছিল- তা হয়নি। রিপোর্ট মানছি না- তা বলব না। তবে রিপোর্টে অসঙ্গতিপূর্ণ কিছু বিষয় রয়েছে।”
ওই দুর্ঘটনার দুই মিনিটের মধ্যে অগ্নি নির্বাপণের কাজ শুরুর দাবি নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি দুর্ঘটনার আগে নেপালের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে পাইলটকে ‘বিভ্রান্তিকর নির্দেশ’ দেওয়া হয়েছিল বলে তিনি অভিযোগ করেন।
ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস ২১১ গত ১২ মার্চ ঢাকা থেকে ৬৭ জন যাত্রী ও চারজন ক্রু নিয়ে রওনা হয়ে কাঠমান্ডুতে নামার সময় দুর্ঘটনায় পড়ে। আরোহীদের মধ্যে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়, পরে হাসপাতালে মারা যান আরও দুজন। নিহত ওই ৫১ জনের মধ্যে ২৭ জন ছিলেন বাংলাদেশি।
ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো দুর্ঘটনার পর এক মাসের মধ্যে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দিতে হয়। সে অনুযায়ী গত ৯ এপ্রিল ৫ পৃষ্ঠার একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে নেপাল সরকারের গঠিত তদন্ত কমিশন।
সেখানে বলা হয়, ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ মডেলের উড়োজাহাজটি রানওয়ের একপাশে বিধ্বস্ত হওয়ার আগে পাইলটের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল) যোগাযোগ ‘স্বাভাবিক ছিল’ না।
ওই কমিশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট অপারেশন কনসালটেন্ট সালাউদ্দিন এম রহমতউল্লাহ গত ১২ এপ্রিল ঢাকায় এক ব্রিফিংয়ে বলেন, দুর্ঘটনার কারণ জানতে কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ত্রিভুবনের রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে ও অবতরণক্ষেত্র ওই মডেলের উড়োজাহাজ নামার জন্য উপযুক্ত ছিল। অগ্নিনির্বাপনকর্মী ও উদ্ধারকর্মীরা নিয়ম অনুযায়ী দুর্ঘটনার দুই মিনিটের মধ্যেই জ্বলন্ত বিমানটির কাছে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করেছিলেন।
প্রতিবেদনের এ অংশটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে ইউএস-বাংলার সিইও ইমরান আসিফ বলেন, “স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত বিমান যাত্রীদের কাছ থেকে আমরা যা জেনেছি তাতে আমাদের ধারণা যে প্রকৃতভাবেই দুই মিনিটের মধ্যে উদ্ধারকর্মীরা নিয়োজিত হয়ে থাকলে হতাহতের সংখ্যা হয়ত অনেক কম হত।”
ইউএস-বাংলা অভিযোগ করে আসছে, দুর্ঘটনার আগে নেপালের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে পাইলটকে ‘বিভ্রান্তিকর নির্দেশ’ দেওয়া হচ্ছিল। সে বিষয়টি এ সংবাদ সম্মেলনে আবারও বলেন ইমরান আসিফ।
ইউএস-বাংলার সিইও বলেন, উড়োজাহাজটি অবতরণের সময় অ্যালাইনমেন্ট ঠিক ছিল না বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এলেও নেপালের তদন্ত প্রতিবেদনে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
“এছাড়া দুর্ঘটনার পর নেপাল কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরের ছয় জনকে তড়িঘড়ি করে অন্যত্র বদলির আদেশ দেয়। গাফিলতি ছাড়া এমন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা না বলে আমরা মনে করি।”
তিনি বলেন, “আমরা আশা রাখি, তদন্ত প্রতিবেদন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাব্য সব ধরনের বিষয়ই সেখানে উঠে আসবে।”
বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ককপিট ভয়েস রেকর্ডার, ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার কানাডায় পাঠানো হয়েছে। সেখানেও বিশ্লেষণ করে দুর্ঘটনার কারণ খোঁজার কাজ চলছে।