রোহিঙ্গা: বাংলাদেশের প্রতি সংহতি, নিপীড়কদের বিচার দাবি কমনওয়েলথ নেতাদের

মিয়ানমারের রাখাইনে সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ করে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে রোহিঙ্গা নিপীড়নে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন কমনওয়েলথ সরকারপ্রধানরা।

রিয়াজুল বাশার লন্ডন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 April 2018, 07:30 PM
Updated : 29 April 2018, 11:16 AM

লন্ডনে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সরকার প্রধানদের শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণায় এ আহ্বান জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, নির্যাতনের মুখে পালিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়া ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি কমনওয়েলথ নেতারা সম্পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছে।

“সরকার প্রধানরা জাতিগত নিধন বন্ধ ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে মানবাধিকার লংঘনে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানাচ্ছে।”

গত বছরের অগাস্টের শেষ দিকে রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সহিংসতার মুখে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে। এরপর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

এর আগে বিভিন্ন সময় রাখাইনে নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা চার লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আসছে বাংলাদেশ।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে ও সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা: ছবি-রয়টার্স

এই রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ ভূমিতে ফেরা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা প্রত্যাশা করে মঙ্গলবার লন্ডনে এক সেমনারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমার যাতে দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করে সেজন্য দেশটির ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও চাপ সৃষ্টি করা উচিত।

রোহিঙ্গা সংকটের অবসানে গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সম্মেলনে তার দেওয়া পাঁচ দফা প্রস্তাবও কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সম্মেলনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের যৌথ বিবৃতিতে রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণ খুঁজে বের করার আহ্বান জানানো হয়েছে। কফি আনান নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নেও তাগাদা দেওয়া হয়েছে।

এবারের কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সম্মেলনে ৫৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ৪৬ জন সরকার প্রধান অংশ নিয়েছেন। দীর্ঘদিন পর কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এছাড়া নিউজিল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীও এবারের সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।

রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতার মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার লন্ডনের উইন্ডসর ক্যাসল ও ল্যানকাস্টার হাউজে কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সম্মেলনের বিভিন্ন সেশনে অংশ নেন এবং সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তোলার ওপর জোর দেন।

এছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলের সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে কমনওয়েলথের উচ্চ পর্যায়ের গ্রুপকে আরও প্রতিনিধিত্বমূলক করার আহ্বান জানান তিনি। কমনওয়েলথের উচ্চ পর্যায়ের গ্রুপ ‘অর্থায়ন’ ও ‘কর্মকৌশল’ নির্ধারণের দিকে নজর দিতে পারে বলেও মত দেন তিনি।

যোগাযোগ বৃদ্ধি ও সাইবার নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

শুক্রবার সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারত, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ কয়েকটি দেশের নেতাদের মতবিনিময় হয় বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক।

তিনি বলেন, “একটা নতুন কমনওয়েলথ গড়ার অঙ্গীকার নিয়েছেন নেতারা। সবাই খুব আশাবাদী ছিলেন।”  

‘অভিন্ন ভবিষ্যতের দিকে’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বৃহস্পতিবার বাকিংহাম প্যালেসে কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের ২৫তম শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

সাইবার নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে শুক্রবার সরকার প্রধানরা ‘লিডার্স সামিটের’ বিবৃতি প্রকাশ করেছেন।

উদ্বোধনী দিনের অধিবেশনগুলোতে দেওয়া বক্ততায় সদস্য দেশগুলোর পরিবর্তনশীল চাহিদা ও প্রত্যাশা পূরণে কমনওয়েলথের বিভিন্ন সংস্থার ভূমিকা ও কার্যক্রম পুনর্নির্ধারণ ও পুনর্গঠনের প্রস্তাব করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সম্মেলনে নির্ধারিত লক্ষ্যসমূহ অর্জনে সংস্থাটির সচিবালয়ের আমূল সংস্কারের উপরও জোর দেন তিনি।

এছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে শেখ হাসিনা জাতিসংঘে যে পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন সেটারও পুনরুল্লেখ করেন। এ বিষয়ে কমনওয়েলথের সমর্থন প্রত্যাশার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানান তিনি।

সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে জঙ্গি মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাগুলোকে প্রতিরোধে কাজ করতে হবে।

তার সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যপূরণে এগিয়ে চলার বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি।