‘অপতথ্য’ ছড়ানোয় ৩ ছাত্রীকে হলছাড়া: ঢাবি উপাচার্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, ফেইসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে ‘সরকারবিরোধী বক্তব্য ও অপতথ্য ছড়ানোর কারণে’ কবি সুফিয়া কামাল হলের তিন ছাত্রীকে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 April 2018, 08:13 AM
Updated : 20 April 2018, 08:22 AM

‘দোষী’ তিন ছাত্রীকে অভিভাবকদের হাতে তুলে দিয়ে হল প্রশাসন ‘সঠিক’ কাজ করেছে দাবি করে তিনি বলছেন, এটা না করলেই বরং তিনি হল কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করতেন।

বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে ১ টার মধ্যে ওই হলের তিন ছাত্রীকে তাদের স্থানীয় অভিভাবকের কাছে তুলে দেওয়া। আরেক ছাত্রীর অভিভাবক এলেও গভীর রাত হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীকে হলে রাখা হয়। 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যারা সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন, তাদের ডেকে ডেকে ‘তদন্তের নামে হয়রানি’ করছে হল কর্তৃপক্ষ।  

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে হল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং ফোন কেড়ে নিয়ে ফেইসবুকে কে কোন পোস্ট দিয়েছে তা পরীক্ষা করে দেখে বলে হলের ছাত্রীদের ভাষ্য। এরই এক পর্যায়ে মধ্যরাতে তিন ছাত্রীর অভিভাবকের ডাক পড়ে হলে।   

কোটা অধিকার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ হল থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকাল ৪টায় সারা দেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে।

শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, “তারা ফেইক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ফেইসবুকে অপতথ্য দিচ্ছে… হল সংক্রান্ত, সরকারবিরোধী, আরো নানাসব তথ্য, সব সংরক্ষিত আছে।

“তখন তাদেরকে বলা হল যে, বাবা এগুলো যদি তোমরা কর তাহলে তো হল ঝুঁকির মধ্যে পড়বে, এটা সুফিয়া কামাল হল, হাজার হাজার মেয়ে এখানে আছে, গোটা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্নভাবে অপশক্তির উত্থান ঘটছে, বিভিন্ন অপতথ্য, অপব্যাখ্যা যাচ্ছে; সুতরাং এই মুহূর্তে তোমরা এগুলা করতে পারবে না তোমাদের অভিভাবকদেরকে ডাকতেছি।”

মধ্যরাতে হলে এসে এক শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাচ্ছেন তার অভিভাবক

ওই অভিযোগে তিনজনকে বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বাবা ও ভাইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে উপাচার্য বলেন, রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় একজন ছাত্রীকে তার অভিভাবকের সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়নি।

“অধিক রাত্র হয়ে গেল; সাড়ে ১২টা, ১২টা হয়ে গেল… তখন তাকে (অভিভাবক) বলা হল আপনি ধামরাইতে যাবেন এত দূরে মেয়েটিকে রাখতে, তখন তাকে আর দেওয়া হল না। ওই মেয়েটিকে আর দেওয়াই হল না, ওই মেয়েটিকে রেখেই দেওয়া হল। বলা হল আপনি একাই যান, আপনাকে জানানোর জন্য, আপনি মাঝেমাঝে যখন আসবেন আপনাকে তখন বলব।”

উপাচার্য বলেন, “এরা যে কাজগুলো করে, এগুলো কিন্তু আমাদের অন্য মেয়েদের সম্মান হারাবে, ঝুঁকি বাড়াবে, নিরাপত্তাহীন হবে, বিশ্ববিদ্যালয় অস্থির হবে, রাষ্ট্রে অস্থিরতা তৈরি হবে।… আপনারা ওকে এখন নিয়ে আপনাদের কাছে রাখেন। হলের মধ্যে থেকে গেলে হল অ্যাকাউন্ট হিসেবে যায়। সুফিয়া কামাল থেকে ফেইক নিউজ আসতেছে, এ ধরনের তথ্য যাবে অতএব এটা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।”

তিন ছাত্রীকে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়াকে শৃঙ্খলা রক্ষার ‘একটি ব্যবস্থা’ হিসেবে বর্ণনা করেন উপাচার্য।

তিনি বলেন, “অভিভাবকসুলভ আচরণে হল প্রশাসন যখন দেখবে কোনো কিছু ঝুঁকির মধ্যে পড়ে, তখন তো এটা তাদের রুটিন দায়িত্ব, এটা তো হলের দায়িত্ব। নিরাপত্তা এবং সম্মানের জন্য, মর্যাদার জন্য হল প্রশাসন অভিভাবকসুলভ আচরণ করবে, তাদেরকে (ছাত্রীদের) ডেকে এনে সংশোধনী দেবে- এটা হল একেবারে মৌলিক দায়িত্ব।”

রাতে তিন ছাত্রীকে যেভাবে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে সমালোচনা হলেও হল প্রশাসনের ভূমিকাকে সমর্থন করছেন উপাচার্য।

১০ এপ্রিল রাতে সুফিয়া কামাল হল প্রাঙ্গণে বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা (ফেইসবুকে আসা ছবি)

“এটা না করলে আমি তাদেরকে দোষারোপ করতাম যে- তুমি এই মেয়েদেরকে সংশোধনী দিলা না, তাদেরকে কেন অপকর্ম করার সুযোগটা দিলা? তাদেরকে অপতথ্য প্রচারের সুযোগ দিলা কেন? কেন তাদেরকে ডেকে এনে তুমি শাসাইলা না এবং হুঁশিয়ারি করল না যে, এই কাজটি অন্যায় কাজ, এটি করো না এবং অন্য মেয়েদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফালাবে না।”

হল কর্তৃপক্ষ  বলছে, কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে গত ১০ এপ্রিল রাতে ছাত্রলীগ নেত্রী ইফফাত জাহান এশাকে হেনস্তার ঘটনার তদন্তেই বৃহস্পতিবার হলের শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং কয়েকজনকে অভিভাবকদের সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। 

তবে সেই রাতের ঘটনা নিয়ে শুক্রবার বিস্তারিত আলাপে যেতে চাননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

ওই ঘটনাকে ‘ভিন্ন কথা’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “সেটা অন্য ব্যাখ্যা করে বের করতে হবে।

“কিন্তু মূল কথাটা হল যখন সমস্যা হবে সে সমস্যাটাকে অ্যাড্রেস করা এবং সেখানে সাধারণ মেয়েদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ মাত্র চারজন মেয়ের মধ্যে তিনজনকে গার্ডিয়ানের কাছে দেওয়া হল।”

তিনি বলেন, “কত অপব্যাখ্যা, কত অপতথ্য দিয়ে কীভাবে উসকানি দিয়ে একটি অস্থির পরিবেশ তৈরি করার অপপ্রয়াস নেওয়া হয়েছিল বোঝাই যাচ্ছে।”