সুফিয়া কামাল হল থেকে মধ্যরাতে ছাত্রীদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ

কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে ছাত্রলীগ নেত্রী ইফফাত জাহান এশাকে হেনস্তার ঘটনা তদন্তে কবি সুফিয়া কামাল হল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2018, 06:24 PM
Updated : 20 April 2018, 06:21 AM

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে হল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ, ফোন কেড়ে নিয়ে ফেইসবুকে কে কোন পোস্ট দিয়েছে তা পরীক্ষা করার পাশাপাশি কয়েকজনকে হল থেকে বের করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এর প্রতিবাদে শুক্রবার বিকাল ৪টায় সারা দেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে কোটা অধিকার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।

কয়েকজন শিক্ষার্থীকে তাদের স্থানীয় অভিভাবকের কাছে তুলে দেওয়ার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় স্বীকার করেছেন ছাত্রী হলটির আবাসিক শিক্ষক আফরোজা বুলবুল। তবে কেন দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে সে বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সবিতা রেজওয়ানা রহমানকে অনেকবার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান হয়রানির অভিযোগটিকে ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “তদন্ত কমিটি হয়েছে, তদন্তের প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ তো করতেই পারে।”

গত ১০ এপ্রিলের ঘটনার জের ধরে এই তদন্ত চলছে। সেদিন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা হল ছাত্রলীগের সভাপতি এশার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।

আন্দোলনকারীদের হাত থেকে এশাকে উদ্ধারের পাশাপাশি তাকে তখন সাময়িক বহিষ্কারের কথা জানিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী।

পরে তদন্তের ভিত্তিতে এশার কোনো দোষ না পাওয়ার কথা জানিয়ে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

পাশাপাশি বুধবার অনুষ্ঠিত ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের বৈঠকে এশাকে হেনস্তার জন্য ২৬ শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়। এরপরই হল কর্তৃপক্ষ হলের শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, তাদের ধমক দিয়ে স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এর মধ্যেই বিভিন্ন শিক্ষার্থীর স্থানীয় অভিভাবকদের ডাকা হয় হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

সন্ধ্যার পর থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ব্যাগ নিয়ে হল থেকে বের হতে দেখার কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন একজন নিরাপত্তারক্ষী।

আবদুল আউয়াল নামে এক অভিভাবক রাত ১০টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি আমার বোনকে ফোন দিয়েছিলাম। সে না ধরে তার এক শিক্ষক ধরেন। তিনি আমাকে আসতে বলেন।”

রাত ১২টার দিকে গণিত তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী শারমিনকে নিয়ে তার স্থানীয় অভিভাবক হল থেকে বেরিয়ে আসেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে তারা কোনো কথা বলতে চাননি। শারমিনের অভিভাবক বলেন, তাদের কোনো কথা বলতে মানা করা হয়েছে। 

রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে আরেক ছাত্রীকে নিয়ে তার অভিভাবক বেরিয়ে আসেন। সাংবাদিকরা এগিয়ে গেলে তারা কোনো কথা না বলে দ্রুত মোটর সাইকেলে চলে যান।

মো. ফারুক নামে একজন অভিভাবককে রাত সাড়ে ১২টার দিকে হলের সামনে দেখা যায়। ঢাকার ধামরাই উপজেলা থেকে মেয়েকে নিতে আসেন তিনি। তার সঙ্গে ছিল ভাই কামরুল আহসান।

ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, “রাত ৮টার দিকে আমাকে ফোন করে মেয়েকে নিয়ে যেতে বলা হয়। সেজন্য ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে আমাকে আসতে হয়েছে।”

তবে রাত সোয়া ১টার দিকে ফারুক বের হলেও তার মেয়ে হলেই ছিলেন। ফারুক সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে চাননি। অনেক বলার পর কামরুল বলেন, তার ভাতিজি আন্দোলনে যেন আর না যায়, সেকথা তাদেরকে বলা হয়েছে। তিনিও তার ভাতিজিকে বুঝিয়েছেন।

হলের একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একজন ছাত্রীকে বের করে দেওয়ার খবর পেয়ে শতাধিক ছাত্রী নিচে নেমে এসে প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। যেই তখন কথা বলতে যাচ্ছিল, তার নাম লিখে রাখা হচ্ছিল।  

“আমাদের ফোন চেক করে দেখছিল আমরা ফেইসবুকে উল্টোপাল্টা কোনো স্ট্যাটাস দিয়েছি কি না। কোটা সংস্কার আন্দোলনে কারা কারা ছিল সেটা জিজ্ঞাসা করছিল। আমরা বলেছি সবাই তো ছিল, এক হাজার মেয়ে ছিল। তখন বলল, ‘লিখিত দাও, সবাইকে বের করে দেব’।”

১০ এপ্রিল রাতে সুফিয়া কামাল হল প্রাঙ্গণে বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা (ফেইসবুকে আসা ছবি)

এদিকে হয়রানির প্রতিবাদ এবং সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবিতে রাত দেড়টার দিকে হলটির ফটকে অবস্থান নেন ইয়াসিন আরাফাত নামে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের একজন ছাত্র।

কোটা অধিকার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর কয়েকজন নেতাও সেখানে আসেন। পরে তাদের পরামর্শে হলের ফটক থেকে চলে যান ইয়াসিন আরাফাত।

রাত আড়াইটার দিকে হলের গেইট থেকে চলে যাওয়ার সময়  ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নূর সাংবাদিকদের বলেন, “রাতের অন্ধকারে কেন অভিভাবক ডেকে ছাত্রীদের হল থেকে বের করা হচ্ছে? এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি বিশ্ববিদ্যালয়ে।”

এর প্রতিবাদে শুক্রবার বিকাল ৪টায় সারা দেশে  সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দিয়ে সুফিয়া কামাল হল এলাকা ত্যাগ করেন তিনি।