কমনওয়েলথে সংস্কারের প্রস্তাব শেখ হাসিনার

সদস্য দেশগুলোর পরিবর্তনশীল চাহিদা ও প্রত্যাশা পূরণে কমনওয়েলথের বিভিন্ন সংস্থার ভূমিকা ও কার্যক্রম পুনর্নির্ধারণ ও পুনর্গঠনের প্রস্তাব তুলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রিয়াজুল বাশার লন্ডন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2018, 04:07 PM
Updated : 19 April 2018, 06:30 PM

একইসঙ্গে কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সম্মেলনে নির্ধারিত লক্ষ্যসমূহ অর্জনে সংস্থাটির সচিবালয়ের আমূল সংস্কারের উপরও জোর দিয়েছেন তিনি।

তিনি বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে একটি গ্রুপ গঠনের পরামর্শ দেন; যে গ্রুপটি কমনওয়েলথ সচিবালয়ের ব্যাপক সংস্কারের বিষয়টি দেখভাল করবে।

বৃহস্পতিবার লন্ডনে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সরকার প্রধানদের শীর্ষ সম্মেলন উদ্বোধনের পর একটি অধিবেশনে বক্তৃতায় কমনওয়েলথ সংস্কারের প্রস্তাব জানান শেখ হাসিনা।

বাকিংহাম প্যালেসে কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের শীর্ষ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর ল্যানক্যাস্টার হাউজে অনুষ্ঠিত এ অধিবেশনের বিষয় ছিল- ’টুয়ার্ডস এ কমন ফিউচার, ইনক্লুডিং:- এ ফেইরার ফিউচার’।

শেখ হাসিনা বলেন, কমনওয়েলথ সচিবালয়ের উচিত সংস্থাটির ঘোষিত কানেকটিভি, সাইবার নিরাপত্তা, সুশাসনের বিষয়ে একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা।

নাজুক দেশের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে কমনওয়েলথ মিনিস্ট্রিয়াল অ্যাকশন গ্রুপের ভুমিকা স্পর্শকাতর বলে মনে করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে ভালোভাবে বুঝে এবং কমনওয়েলথের ঐক্যের চেতনাকে সামনে রেখে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি।

অধিবেশনে বক্তব্য রাখছেন শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্র, সুশাসন, আইনের শাসনের পক্ষে থাকতে হবে; কারণ এগুলোই হলো টেকসই শান্তি ও স্থিতিশীলতার মূল ভিত্তি।

সদস্যদেশগুলোর বাণিজ্য, অর্থনীতি ও টেকসই উন্নয়নের দিকে কমনওয়েলথ মনোযোগ দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুমুখী বাণিজ্য ব্যবস্থা তৈরির উপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।

নিয়মভিত্তিক, স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায্য বাণিজ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের পক্ষে বাংলাদেশ কথা বলে আসছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা সার্বিক স্থিতিশীলতা, শান্তি ও গ্রগতির জন্য যোগাযোগ বাড়ানোর উপরও গুরুত্বারোপ করেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে তার প্রতিবেশী দেশগুলোর যোগাযোগ বাড়ানোর উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের শীর্ষ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ ৫৩টি সদস্য দেশের ৪৬ জন সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানরা অংশ নেন।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় বাকিংহাম প্যালেসে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

দুই বছর পর পর কমনওয়েলথের সরকার প্রধানদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এবারে ২৫তম সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘টুয়ার্ডস এ কমন ফিউচার’।

দুই দিনের এ সম্মেলনে সদস্য দেশের নেতারা সমুদ্র সংরক্ষণ, সাইবার নিরাপত্তা ও বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করবেন। 

শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে

সকাল থেকেই বাকিংহাম প্যালেসে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা আসতে শুরু করেন। বলরুমে রানি প্রবেশ করেন রাজ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। সম্মেলন ঘিরে বাকিংহাম প্যালেসের বাইরের দিকটা সেজেছে রাজকীয় সাজে।

সম্মেলনের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন প্রিন্স চার্লস। এরপর সম্মেলনের যৌথ আয়োজক দেশ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে বক্তব্য দেন।

কমনওয়েলথের বিদায়ী চেয়ারম্যান মাল্টার প্রধানমন্ত্রী জোসেফ মাসকাটের বক্তব্যের পর সম্মেলনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য দেন কমনওয়েলথের মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্টকল্যান্ড।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাখা হয় সংগীত, নৃত্যসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ও কমনওয়েলথ মহাসচিব সরকার প্রধানদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান।

সম্মেলনের ফাঁকে বিকালে শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বি-পক্ষীয় বৈঠক হয়।

সন্ধ্যায় সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্যের ওপর আরেকটি অধিবেশনে অংশ নেওয়ার পর রানির দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন শেখ হাসিনা।