বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “যে কোনো ধরনের বৈষম্যকে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। যিনি বা যারা বৈষম্য করবেন তাদের যেন জবাবদিহি করতে হয়।
“যত দিন কারও কৃত অপরাধের জন্যে জবাবদিহির সম্মুখীন করতে না পারব, এটা দুর্নীতির কথাই বলি আর নির্যাতনের কথা বলি বা যে কোনো ধরনের অপরাধের কথা বলি না কেন, কোনো অবস্থাতেই আমরা সমাজ থেকে বৈষম্য বিলোপ করতে পারব না। অপরাধ কমবে না।”
অপরাধ প্রবণতা কমাতে রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতিটি জায়গায় জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন সুলতানা কামাল।
তিনি বলেন, “অপরাধ করে কোনো জবাবদিহি করতে হচ্ছে না বলেই কারো মধ্যে অপরাধবোধ তৈরি হচ্ছে না। একটা সমাজে যদি অপরাধের পর অপরাধবোধ তৈরি না করা যায় তাহলে সে অপরাধ তো মানুষ করেই যাবে।”
অটিজম থেকে উত্তরণে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে এই আলোচনা সভায় অটিজম ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের কাজ-উদ্যোগের প্রশংসা করেন সুলতানা কামাল। তবে অনেক বিষয়ে সরকারের ‘উদাসীনতা’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই অধিকারকর্মী।
তিনি বলেন, “অটিজম নিয়ে আমরা নতুন করে চিন্তা করার সুযোগ পেয়েছি, সেটাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু মানুষের জীবনের অন্য সমস্যাগুলোর বিষয়ে আমরা উদাসীন আছি কি না, রাষ্ট্রীয় মনোযোগের ক্ষেত্রে হেরফের হচ্ছে কি না এটা অবশ্যই আমাদের চিন্তা করতে হবে।
“কারণ আমরা এখন সুশাসনের কথা বলি, মানবাধিকারের কথা বলি, সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা বলি। মানুষের বেঁচে থাকার, মান-মর্যাদার অধিকারের নিশ্চয়তা রাষ্ট্রের কাছ থেকে পাচ্ছি কি না তা দেখতে হবে।”
উন্নয়নের ধারনা কেবল রাস্তাঘাট, ব্রিজ নির্মাণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না মন্তব্য করে সুলতানা কামাল বলেন, “যে মানুষগুলো আমাদের সমাজে একটি প্রতিবন্ধিতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করছেন বা বেড়ে উঠছেন, তাদের প্রতি যদি কেউ বৈষম্য প্রদর্শন করে সে বৈষম্য প্রদর্শন করাটা একটা অপরাধ বলে চিহ্নিত করতে রাষ্ট্রের এত দ্বিধা কেন?
“আমরা বলছি, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে যাওয়ার পথে আছি। আমরা যে উন্নয়নের কথা বলছি, সে উন্নয়ন কার জন্য হচ্ছে, কীসের ভিত্তিতে হচ্ছে সে প্রশ্ন থেকে যায়।”
অটিজম নিয়ে দেশে এক ধরনর বাড়তি উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, “১৩ রকমের যে প্রতিবন্ধিতা রয়েছে অটিজম হলো তার একটি ধাপ। আমরা যদি নিজেদের রাষ্ট্র ব্যবস্থাটিকে একটি কল্যাণমূখী রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করি, তাহলে আমাদের মনে রাখতে হবে নাগরিকের যা কিছু প্রয়োজন তা নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র সচেষ্ট কি না।
“যারা প্রতিবন্ধিতায় ভুগছে তাদের দায়-দায়িত্ব কিন্তু রাষ্ট্রের কাঁধে বর্তায়। সেই জায়গাটিতে রাষ্ট্র কতটুকু দায়িত্ব পালন করছে সেটি কিন্তু আমাদের চিন্তা করে দেখতে হবে।”
অটিজম নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠনের সমালোচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, “আমার কেন জানি মনে হয়, হঠাৎ করেই অটিজম নিয়ে কেন যেন বাড়তি উদ্দীপনা, উপচেপড়া আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে আমাদের দেশে।
“এই উপচেপড়া আগ্রহ কিন্তু খারাপ না। কিন্তু আমি লক্ষ করছি, মানবাধিকার নামধারী কিছু সংগঠন রাষ্ট্রীয় এবং বেসরকারি তারা এর উপরে দিনব্যাপী আলোচনা করেন, অনুষ্ঠান করেন পাঁচ তারকা হোটেলে। সেখানে মন্ত্রীদের দাওয়াত দেওয়া হয়। ভালো ভালো খানাপিনা তারা সেখানে করেন। এতে আমাদের অটিস্টিক বাচ্চাদের কোন কল্যাণ নিশ্চিত হয়েছে, কোন কল্যাণের পথে তারা এগুচ্ছে সে প্রশ্নটা করার বোধ হয় সময় এসেছে।”
প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে সরকার যে অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে তার যথার্থ ব্যবহার হচ্ছে কি না সে বিষয়ে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক নাসির ইকবাল জাদু, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠিত পথকলি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ, বসুন্ধরা স্পেশাল চিলড্রেন ফাউন্ডেশনের শিক্ষক শায়লা শারমিনসহ অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের অভিভাবকরা বক্তব্য দেন।