আওয়ামী লীগ স্থানীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রচারে নামার সুযোগ দাবি করার এক সপ্তাহের মাথায় বৃহস্পতিবার বিষয়টি কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে, যদিও এ বিষয়ে আপত্তি রয়েছে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটি রাজনৈতিক দল কমিশনের কাছে বিধি সংশোধনের দাবি নিয়ে এসেছে। সেজন্য বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেই কমিশন সভা দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে এমপিদের সুযোগ দেওয়া যায় কি যায় না তা নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন।”
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এ বি এম রিয়াজুল কবির কাওছার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতে সিটি ভোটে সাংসদদের প্রচারের জন্য বিধি সংশোধনে কমিশনের কাছে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে আমাদের একটি প্রতিনিধি দল প্রস্তাব দিয়েছে। এখন কমিশন কী করে তা-ই দেখার বিষয়।”
২০১৫ সালে দলভিত্তিক স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তের পর মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারের সুযোগ দেওয়া না দেওয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে তৎকালীন কাজী রকিবউদ্দীন কমিশন।
প্রাথমিকভাবে মন্ত্রী-এমপিদের নাম উল্লেখ না করে সরকারি সুবিধাভোগীদের প্রচারের (সরকারি যানবাহন, প্রচারযন্ত্র বাদ দিয়ে) সুযোগ করে দিয়ে বিধির খসড়া তৈরি হয়। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনার মধ্যে সরকারি সুবিধাভোগীদের সফর ও প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হয়।
এর ধারাবাহিকতায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও মন্ত্রী-সাংসদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আচরণবিধি করা হয়।
এ নিয়ে শুরু থেকেই ক্ষোভ করে আসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর কুমিল্লা সিটি ভোট সামনে রেখে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম বলেছিলেন, “নির্বাচন কমিশন বেশি নিরপেক্ষতা দেখাতে গিয়ে সরকারি দলের প্রতি বেশি নিষ্ঠুর আচরণ করছে।”
এখন গাজীপুর ও খুলনায় সাংসদদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ না করার দাবি করছেন তারা।
তবে সাংসদসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সিটি ভোটে প্রচারের সুযোগ দেওয়ার বিপক্ষে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর জোট ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটের মাঠে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরিতে কমিশনকেই উদ্যোগী হতে হবে। নতুন করে সংশোধনী এনে সাংসদদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার সুযোগ দেওয়া হলে তাতে বৈষম্য বাড়বে। স্থানীয় প্রশাসন কখনই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপক্ষো করতে পারবে না। বিশেষ দল যেন সুবিধা না পায় সেটা দেখতে হবে।”
ক্ষমতাসীন দল সুবিধা পেলে অন্য প্রার্থীরা সুযোগ বঞ্চিত হবে বলে মনে করেন তিনি।
গাজীপুর ও খুলনা সিটি ভোটের তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।
ওই বৈঠকের পর এইচ টি ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, “সামনে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন রয়েছে। মন্ত্রি-এমপিদের চলাফেরার ওপরে যাতে নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, যাতে স্বাভাবিক কাজে বাধা না দেয় তা দেখতে বলেছি।”
আচরণ বিধি সংশোধনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আচরণবিধি নিয়ে বাস্তবে অনেকগুলো সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আচরণবিধি যাতে আবার এমন হয়ে না দাঁড়ায় যে নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করে। নির্বিঘ্নে নির্বাচন করার জন্যে যে টুকু দরকার সেটুকুই যেন তারা রাখেন। বাকিটি নয়।”
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ইমাম বলেন, “সমস্যাগুলো আমরা আলোচনা করেছি। বলেছি, মন্ত্রীদের গতিবিধি, সিটি করপোরেশনে এমপিরা যেন এলাকায় যেতে পারেন। গাজীপুর-খুলনায় অনেক এমপি রয়েছেন, তাদের ওপর যেন নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করা হয়। তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ করা হলে তো সব জিনিসই অচল হয়ে যাবে।”
আওয়ামী লীগের এই দাবির পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব দাবি জানানো হয়েছে সেগুলোও বৃহস্পতিবারের কমিশন সভায় আলোচনা হবে বলে ইসি সচিব জানিয়েছেন।