ডিজিটাল নিরাপত্তায় ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি: জব্বার

সাইবার আক্রমণ মোকাবেলায় প্রযুক্তি সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি আইসিটি বিভাগ এবার একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি গঠন করতে যাচ্ছে।

জয়ন্ত সাহা নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2018, 06:02 PM
Updated : 18 April 2018, 06:03 PM

সম্প্রতি কয়েকটি সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাকড হওয়ার প্রেক্ষাপটে আইসিটি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বুধবার তথ্য প্রযুক্তি বিভাগে এক সংবাদ সম্মেলনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের জবাবে একথা জানান।

তিনি বলেন, “ইন্টারনেটের জায়গা যেমন প্রসারিত হচ্ছে, তেমনিভাবে বিপদ আর আক্রমণের ভয়ও বাড়ছে।  সরকার তাই ডিজিটাল নিরাপত্তার ইস্যুটিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে এখন।”

সিআইডি আর আইসিটি বিভাগের ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর সার্টিফিকেট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রক (সিসিএ) কার্যালয়ে সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে দুটি ফরেনসিক ল্যাব রয়েছে।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, “নিরাপত্তার  ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করার পাশাপাশি আমরা এই দুটির ল্যাবের পর  আমরা একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি গঠন করতে যাচ্ছি।”

বাংলাদেশে এখন মোট জনসংখ্যার অর্ধেক ইন্টারনেট ব্যবহার করে জানিয়ে তিনি বলেন, সাইবার আক্রমণ মোকাবেলায় সরকার এখন আরও অনেক প্রযুক্তি ‘সংগ্রহ করছে’।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় হ্যাক হওয়া সরকারি ওয়েবসাইটগুলো এক ঘণ্টার মধ্যে পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে সরকারের আইসিটি বিভাগ সক্ষমতার প্রকাশ ঘটেছে বলে মনে করেন মন্ত্রী।

গত ১১ এপ্রিল সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক করে এই বার্তা তুলে দিয়েছিল হ্যাকাররা

ঢাকায় ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের সর্বশেষ আসরে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা ‘ইথিকাল হ্যাকিং’কে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার নিরাপত্তার ইস্যুতে তরুণদের সম্পৃক্তির বাড়ানোর কথা বলেছিলেন।

এই বিষয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, “ইথিকাল হ্যাকিংয়ের অনেক আপদ-বিপদ আছে।  যাদের হ্যাকিং শেখাচ্ছেন, দেখা গেল, তারা সেই শিক্ষা আপনার বিরুদ্ধেই প্রয়োগ করল। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা আগে। আমরা  এই ইথিকাল হ্যাকিংয়ের দিকটিও মাথায় রেখে কাজ করব।”

ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি করলে বা সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদের উসকানি দিলে সরকার তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে হুঁশিয়ার করেন মন্ত্রী।

এই প্রসঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা নিয়ে সমালোচনার জবাবও দেন মোস্তাফা জব্বার।

তিনি বলেন, “এই ধারাটি নিয়ে ভুল ব্যাখা বা ধারণা রয়েছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা মানে কিন্তু গুপ্তচরবৃত্তি নয়। আমরা ১৯ এপ্রিল সম্পাদকদের সঙ্গে বসব।  তাদের পরামর্শে কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন করতে হলে করব।”

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ব্রডব্যান্ড প্রসারে উচ্চহারে ট্রান্সমিশন খরচ ও অবৈধ আইএসপি বন্ধে নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ( এনটিটিএন) সেবা বিস্তৃতিতে দাবি জানিয়ে আসছে।

জব্বার অনুষ্ঠানে এই বিষয়ে বলেন, এনটিটিএন আরও নতুন  অবকাঠামো নির্মাণের পর তার সুফল ভোগ করতে গিয়ে ব্যবহারকারীদের যেন বাড়তি মূল্য গুণতে না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রেলওয়ে, বিটিসিএল ও পিজিসিবির পাশাপাশি ফাইবার অ্যাট হোম এবং সামিট কমিউনিকেশন  বেসরকারি পর্যায়ে এনটিটিএন সেবা দিচ্ছে এখন।

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসার প্রথম দিনেই মোস্তাফা জব্বার টাওয়ার শেয়ারিং নীতিমালা চূড়ান্ত অনুমোদন দেন।

নীতিমালাটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা ৪টা কোম্পানিকে লাইসেন্স দেব। কেউ বিরোধিতা করলে সেদিকে তাকানোর মতো অবস্থা নেই।  নীতিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কোম্পানি টাওয়ার তৈরি করবে, অপারেটরদের টাওয়ার শেয়ার করতে হবে। পরবর্তীতে অপারেটরদের নিজেদের এই টাওয়ার তৈরি করতে হবে।”

নীতিমালা অনুযায়ী, ৫০ কোটি টাকা দিয়ে টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স নিতে হবে, বার্ষিক নবায়ন ফি থাকবে ৫ কোটি টাকা এবং সরকারের সাথে রাজস্ব ভাগাভাগি হবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হারে।

মোবাইল ফোন অপারেটরা তাদের ফোরজি সেবায় স্পেকট্রামের দাম কমানোর দাবি বিবেচনার আশ্বাসও দিয়েছেন মন্ত্রী।

জব্বার বলেন, “ওরা (টেলিকম অপারেটর) যে অভিযোগ করছে,  স্পেকট্রামের দাম বেশি ইত্যাদি ইত্যাদি..... আমরা এটিকে চিন্তাভাবনার মধ্যে রেখেছি।  আমরা এমন  একটি ব্যবস্থা করব যেন তারাও সহজে স্পেকট্রাম পেতে পারে। সেই সাথে আমাদেরও রেভিনিউও যেন না কমে। দুটো মিলিয়ে একটি প্যাকেজ তৈরি করার চেষ্টা করছি।”

ইন্টারনেটের দাম কমানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ইন্টারনেটের উপর ভ্যাট, সার চার্জ রয়েছে, সেগুলো যেন তুলে দেওয়া হয়, তার জন্য আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের আবেদন করেছি। পাশাপাশি আমরা চাইছি গ্রামাঞ্চলে আইএসপি সার্ভিস প্রোভাইডাররা যেন সহজে ইন্টারনেট সেবা দিতে পারেন।

“আমরা এখন জানি, ইন্টারনেট সেবা দিতে গিয়ে কত খরচ হয়। এখন আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবার প্রশ্ন,  এ খরচের উপর ভিত্তি করে আমরা কিভাবে ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারণ করব।”