এশিয়ায় শান্তি-সমৃদ্ধির জন্য যোগাযোগ বৃদ্ধিতে জোর হাসিনার

এশিয়ার দেশগুলোকে আরও শান্তিপূর্ণ, উন্নত ও স্থিতিশীল করতে পারস্পরিক সেতুবন্ধন তৈরি ও যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রিয়াজুল বাশার লন্ডন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2018, 01:37 PM
Updated : 18 April 2018, 04:44 PM

দেশগুলোর জনগণের মধ্যে মতবিনিময় ও বোঝাপড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে এ অঞ্চলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার দুপুরে লন্ডনের গিল্ড হলে কমনওয়েলথ বিজনেস ফোরাম আয়োজিত ‘এশিয়ান লিডারস রাউন্ড টেবিল: ক্যান এশিয়া কিপ গ্রোয়িং?’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ভারতের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জারিন দারুয়ালার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, মালয়েশিয়াসহ এশিয়ার কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নেন। 

প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এশিয়ার দেশগুলোর আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া প্রয়োজন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “শুধু একটা দেশের মধ্যে নয়, এটা প্রয়োজন গোটা এশিয়া অঞ্চলে।”

তিনি বলেন, “দেশগুলোতে সমৃদ্ধি ও সমতা প্রবৃদ্ধি আনবে এবং একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা আরও শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল অঞ্চল তৈরি করতে পারব।”

এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি শ্রমশক্তি ও সর্ববৃহৎ বাজার, প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদের মজুদ থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অতীতে বিশ্ব ছিল এশিয়ার নেতৃত্বে, ভবিষ্যতেও নেতৃত্ব দেবে এশিয়া। কারণ এশিয়ার আশাবাদী মানুষগুলো কঠোর পরশ্রমী, সহিষ্ণু ও মেধাবী।”

গত ৭০ বছরে এশিয়ার অনেক অর্জন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক অর্থনীতিবিদ ও পণ্ডিতের কাছে এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক সফলতা ‘মিরাকল’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

এরপরেও এশিয়ার দেশগুলোর সতরক আশাবাদী হওয়া উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিশ্ব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। ডিজিটাল ও সোস্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক মানুষকে কাছে আনার পাশাপাশি আলাদাও করে দিচ্ছে।

অর্থনৈতিক উন্নতি সমৃদ্ধি আনার পাশাপাশি বৈষম্যও সৃষ্টি করছে বলে সতর্ক করেন শেখ হাসিনা।

সন্ত্রাস, সংঘাত ও আর্থিক অভিঘাতসহ স্থিতিশীলতার জন্য চ্যালেঞ্জগুলোর কথাও তুলে ধরেন তিনি।

এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে তরুণ ও নারীসহ নাগরিকদের জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের চেতনা ও সমন্বিত মেধা দিয়ে এশিয়ার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হবে।”

গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যতের এশিয়াকে চালনা করতে দক্ষ জনবল বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং উদ্ভাবনী সহযোগিতা বিষয়ে কমনওয়েলথের ভুমিকা’ শীর্ষক অন্য একটি সেশনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে এবং যুবশক্তির সৃজনশীল শক্তিকে কাজে লাগাতে সংস্থার ভূমিকা প্রত্যাশা করেন তিনি।

কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে ৩০ বছরের কম ৬০ শতাংশ জনশক্তিকে বিশাল সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করে নেতাদের প্রতি এ বিশাল সম্পদকে কাজে লাগানো, শ্রম বাজার সৃষ্টি করা, বাণিজ্য বাজার উন্মুক্ত রাখা এবং স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

কমনওয়েলথ দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনী সহযোগিতা বাড়াতে কয়েকটি প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী।

খাতভিত্তিক শিল্পায়নের সম্ভাবনা ও উৎপাদনশীলতা, বিনিয়োগ নীতি, কৌশল ও সুবিধার ওপর সমীক্ষা ও পুর্নমূল্যায়নের প্রস্তাব দেন তিনি।

বাণিজ্য উপকরণ ও সুবিধা উন্নত করা, অশুল্ক বাধা হ্রাস, অবকাঠামো সৃবিধা বৃদ্ধি, মুক্তবাজার সেবা এবং যোগাযোগ বৃদ্ধিরও প্রস্তাব দেন শেখ হাসিনা।

পাশাপাশি প্রযুক্তির ব্যবহার, সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা, ক্ষুদ্র ঋণ এবং ব্লু ইকোনোমির উন্নয়নে তহবিল গঠনেরও প্রস্তাব দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার থেকে থেকে শুরু হয়েছে কমনওয়েলথের সরকার প্রধানদের ২৫তম সভা। ‘টুয়ার্ডস এ কমন ফিউচার’ প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হওয়া সম্মেলনে যোদ দিতে সোমবার লন্ডন এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার সভার শুরুতেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসদের মত ব্যক্তিত্বরা বক্তব্য দেন। ওই দিন সকালে লন্ডনের ওয়েস্ট মিনস্টারে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সম্মেলন কক্ষে ‘এডুকেট টু এম্পাওয়ার: মেইকিং ইকুইটেবল অ্যান্ড কোয়ালিটি প্রাইমারি এডুকেশন অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন এ রিয়েলিটি ফর গার্লস অ্যাক্রস দ্য কমনওয়েলথ’ শীর্ষক অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

এরপর বিকেলে লন্ডনে ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটে (ওডিআই) সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শেখ হাসিনা।

বুধবার বিকেলে লন্ডনের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ‘জ্যেষ্ঠ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সরকার প্রধানদের’ এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেবেন শেখ হাসিনা। গোলটেবিলটি পরিচালনা করবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে। রাতে মের দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।