কোটা আন্দোলন: মামলা তোলার দাবির পর তিন নেতা ডিবিতে

সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে দুই দিনের মধ্যে মামলা প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম দেওয়ার পর তাদের ধরে নিয়ে ‘জিজ্ঞাসাবাদ করে’ ছেড়ে দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2018, 09:13 AM
Updated : 16 April 2018, 12:43 PM

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলনকারীরা সোমবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ ও উপাচর্যের বাসভবনে হামলার ঘটনায় দায়ের করা সব মামলা দুই দিনের মধ্যে প্রত্যাহার না করলে আবার রাজপথে নামবেন তারা।

ওই সংবাদ সম্মেলনের পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে পরিষদের তিন যুগ্ম আহবায়ক নূরুল হক নূর, ফারুক হাসান, মুহম্মদ রাশেদ খানকে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন আহ্বায়ক হাসান আল মামুন।

পরে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাদের তদন্তের প্রয়োজনে নিয়ে আসা হলেও জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বিভিন্ন ‘সহিংসতার’ ঘটনায় যেসব তথ্য উপাত্ত পুলিশ পেয়েছে, সেগুলো যাচাই বাছাই করার জন্যই ওই তিনজনকে তারা ‘নিয়ে’ গিয়েছিলেন।

“ভিসির বাসায় যে হামলা হয়েছিল, এই ঘটনায় যেসব ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি সেগুলো যাচাই বাছাই করার জন্য তদন্তের প্রয়োজনে তাদের ডেকে এনেছিলাম। তারা চলে গেছে।”

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নুরুল হক নূর বলেন, “আন্দোলনরত হাজারও শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে যে ভিত্তিহীন মামলা দেওয়া হয়েছে, আগামী দুই দিনের মধ্যে তা প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে এ দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজপথে আবারও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।”

সাধারণ শিক্ষার্থীরই এ আন্দোলনের নেতৃত্বে দিচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “এই আন্দোলন যারা করেছে, তাদের হয়রানি করবেন না। যদি তাদের হয়রানি করা হয়, তাহলে আমরা আবারও আন্দোলন করব।”

সরকারি চাকরিতে কোটার পরিমাণ ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে গত ৮ এপ্রিল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় পুলিশ ও ছাত্রলীগের।

রাতভর ওই সংঘর্ষের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়ে প্রায় সব কিছু ভাঙচুর করা হয়।  এসব ঘটনায় পাঁচটি মামলা করা হয়।

টানা আন্দোলনের মধ্যে ১১ এপ্রিল সারা দেশে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে রাস্তায় নামে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের অবরোধে কার্যত অচল হয়ে যায় রাজধানীর রাজপথ।

সেদিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে এই আন্দোলন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোটা নিয়ে যেহেতু এত কিছু, সেহেতু কোনো কোটাই আর রাখা হবে না।

পরদিন দ্রুত কোটা সংস্কারের গেজেট প্রকাশসহ কয়েকটি দাবি রেখে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।