কালবৈশাখীতে ভাসল পহেলা বৈশাখের শেষ আমেজ

সকাল থেকে ঝলমলে আবহাওয়ায় প্রাণোচ্ছ্বল বৈশাখী উৎসবের রাশ টানল বিকেলে কালবৈশাখীর ঝড়ো বৃষ্টি।

কাজী নাফিয়া রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 April 2018, 02:48 PM
Updated : 14 April 2018, 02:55 PM

নতুন বাংলা বর্ষবরণে শনিবার ভোর থেকেই রমনা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হন বিপুল সংখ্যক মানুষ। রঙিন পোশাকে সব বয়সী মানুষ মেতে ওঠেন উৎসবে। ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবরসহ আরও বেশ কিছু জায়গায় পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বৈশাখী উৎসবের নগরীতে বিকালে হঠাৎ বিড়ম্বনা নিয়ে হাজির হয় ঝড়ো বৃষ্টি। সারা দিনের আনন্দ তাই শেষ বিকেলে এসে পণ্ড। বিকেল ৪টা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়, আধা ঘণ্টাখানেক পর শুরু হয় ঝড়ো বৃষ্টি, পড়ছিল শিলাও।

বৃষ্টি শুরু হলে শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় বৈশাখের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া দর্শনার্থীরা ছোটের আশ্রয়ের খোঁজে। আবার অনেকে বৃষ্টিতে কাক-ভিজেই রওনা হন গন্তব্যের দিকে।

বোন ও দুই সন্তান নিয়ে ফার্মগেইট থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন সাথী আক্তার। আকাশে মেঘ দেখে ঘরে ফিরতে গিয়ে বিপাকে পড়েন তারা।  

সাথী বলেন, “প্রতিবছরই বৈশাখে আসি। এবার জেমসের গান শুনতে চেয়েছিলাম। উনি দুটা গান করতেই আকাশের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এরপর চলে আসি।

“রোড বন্ধ, গাড়ি নাই। যাব কীভাবে? আনন্দও করতে পারলাম না, আবার ভিজতে হচ্ছে।”

দিনের কর্মব্যস্ততা শেষে বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসেছিলেন সংবাদকর্মী ইমরান হোসাইন। বৃষ্টিতে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “শেষ সময়ে একটু ঘুরতে এসেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তা হয়ে উঠল না।”

বৃষ্টিতে হেঁটেই বাসার পথ ধরেন ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন।

তিনি বলেন, “সারা দিন অনেক আনন্দ করছি। এখন বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণ দেখছি না। ভেজাটাও খারাপ লাগছে না।"

কাজের জন্য সকালে সময় না হওয়ায় বিকেলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বৈশাখী উৎসবে এসেছিলেন ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাচ্চারা অপেক্ষা করে ছিল ঘুরবে, গান শুনবে বলে। কিন্তু বৃষ্টিতে তো সব পণ্ড হয়ে গেল।”

দিনভর বিক্রিতে খুশি হলেও শেষ সময়ের বৃষ্টি বাধায় হতাশ প্রকাশ করেছেন বৈশাখী মেলায় বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসা দোকানিরা।

বৃষ্টিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগ এলাকার বিভিন্ন খেলনা ও খাবারের দোকান বন্ধ হয়ে যায়।

মুড়ি-মুড়কি বিক্রেতা ফরিদ হোসেন বলেন, “একদিন বিক্রির জন্য তো আমরা ওয়েট করে থাকি। সকাল থেকে ভালোই বেঁচছি। কিন্তু ফিরার সময় অনেকে তো বাসায় কিনে নিয়ে যায়। সেই বিক্রি আর হল না।”

খেলনা বিক্রেতা আক্তার বলেন, “ঘুরে ঘুরে বেঁচছি অনেক। শেষটা ভালো হলে লাভ হত আরও বেশি।”

আনন্দ-উৎসবে মাতোয়ারা

বৃষ্টির বাগড়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছিল উৎসবমুখর। সব বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখর ছিল পুরো এলাকা। নানা রংয়ের পোশাক ও সাজে সেজে এসেছিলেন তরুণ-তরুণীরা, বাদ যায়নি শিশুরাও। বৈশাখের নানা আয়োজন প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে তাদের উপস্থিতিতে।

‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ প্রতিপাদ্যে বঙ্গাব্দ ১৪২৫ কে বরণ করে নিতে পহেলা বৈশাখের সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। ছবি:মোস্তাফিজুর রহমান

সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিল ব্যাপক জন সমাগম। নাগরদোলায় চড়েন অনেকে, কেউ কেউ মেতে ওঠেন খেলায়; বাদ থাকেনি কেনাকাটা আর গ্রামীণ স্বাদের খাবার উপভোগ। তুলির আঁচড়ে নিজেকে রাঙিয়েছেন অনেকে।

মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের শিক্ষার্থী অনিক হাসান বলেন, “বাবার সাথে চড়কিতে উঠতে আসছি। খুব ভালো লাগছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা, ডাকসু চত্বর, মল চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে ছিল নানা আয়োজন।

বর্ষবরণ উৎসবে শিশুরা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

বাংলা একাডেমি চত্বরে ছিল পুতুল নাচসহ নানা আয়োজন। সকাল থেকে শিশুদের ভিড় জমে শিশু পার্কে। শিশুপার্কের সামনেই ছিল লোকজ সঙ্গীতানুষ্ঠান।

আজিমপুর থেকে আসা তরুণ তরিকুল ইসলাম বলেন, “এত এত আয়োজন, খুব আনন্দ করেছি। সবচেয়ে ভালো লাগে যে, এসব উৎসবে স্বাধীনভাবে ঘোরা যায়।”

বৈশাখের নিরাপত্তায়ও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদিবা জাহান বলেন, “এবার কোনো ঝামেলা হয়নি, এটাই আনন্দের। এসব পাবলিক উৎসবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটাই সবচেয়ে জরুরি।”