আশা নিরাশার দোলায় রাজীবের পরিবার

লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার পর ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি দুই বাসের চাপায় হাত হারানো কলেজছাত্র রাজীব হোসেনের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 April 2018, 10:00 AM
Updated : 13 April 2018, 10:03 AM

তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক মো. শামসুজ্জামান শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ অবস্থায় কিছুই বলা যাচ্ছে না।”

রাজীবকে রাখা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে, ৩০ নম্বর বেডে। নাকে-মুখে নল লাগানো, কোনো নড়াচড়া নেই, শরীরটা পড়ে আছে অচেতন।

বেডের পাশে দাঁড়ানো রাজীবের ছোট ভাই মোহাম্মদ আবদুল্লাহর অসহায় চোখে বোবা কান্না।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আবদুল্লাহ বললেন, “কাল রাত থেকে অনেক জ্বর। ডাক্তার বলেছে এই স্টেজ থেকে সব রোগী ফিরে আসে না।”

রাজীবের মেজো ভাই মেহেদী হাসান বলেন, আগের দিনের চেয়ে রাজীবের অবস্থা শুক্রবার আরও খারাপ হয়েছে।

ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতকের ছাত্র রাজীব গত ৩ এপ্রিল রাজধানীতে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের রেষারেষিতে হাত হারান। দুই বাসের চাপায় তার ডান কনুইয়ের উপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

দুর্ঘটনায় রাজীবের মাথার সামনে-পেছনের হাড় ভেঙে যাওয়া ছাড়াও মস্তিষ্কের সামনের দিকে আঘাত লাগে। প্রথমে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নেওয়া হলেও সেখান থেকে পরে তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তার চিকিৎসার জন্য গঠন করা হয় মেডিকেল বোর্ড।

ওই বোর্ডের প্রধান অর্থপেডিক্স বিভাগের অধ্যাপক ডা. শামসুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাজীবের অবস্থার উন্নতি হয়নি। শরীরের সবকিছু ঠিক আছে, কিন্তু ব্রেইন রেসপন্স করছে না। এ অবস্থায় কিছুই বলা যাচ্ছে না। যদি ব্রেইন কাম ব্যাক করে তাহলে হয়ত রাজীব সুস্থ হবে।”

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামের রাজীব তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় মা এবং অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবাকে হারান। ঢাকার মতিঝিলে খালার বাসায় থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন স্নাতকে।

পড়ালেখার ফাঁকে একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করে নিজের আর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই ভাইয়ের খরচ চালানোর সংগ্রাম করে আসছিলেন এই তরুণ।

রাজীবের খালা খাদিজা বেগম লিপি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বড় হয়ে যেন নিজের পায়ে দাঁড়াইতে পারে, যাতে মানুষের উপর ভরসা করতে না হয়, সেইজন্য সরকারি চাকরির চিন্তা করত।”

সেই রাজীবকে এখন বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে যন্ত্রের সহায়তায়, কৃত্রিমভাবে।

“ওর স্বপ্ন ছিল বড়, কিন্তু এখন মানুষটার জীবনেরই কোনো ভরসা নাই। ডাক্তার বলছে… কোনো মিরাকল যদি হয়, তাহলেই বাঁচবে।”

রাজীবের চিকিৎসার খরচ কীভাবে যোগানো হচ্ছে জানতে চাইলে খাদিজা বেগম জানান, ওষুধপত্রের খরচ তারা নিজেরাই দিচ্ছেন।

আগামী সোমবার বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের দুই চালকের জামিন শুনানির তারিখ থাকার কথা জানিয়ে রাজীবের খালা বলেন, “আমাদের ছেলে যদি সুস্থ থাকত, তাহলে ড্রাইভার ছাড়া পেলেও কিছু বলতাম না আমরা। কিন্তু আমাদের ছেলেই তো ভালো নাই, আমরা চাই ড্রাইভারের যেন কঠিন শাস্তি হয়। যাতে আর কোনো পরিবার ধ্বংস না হয়।”