জামানত ৫০ হাজার করাসহ আরপিও সংশোধনে ৩৫ প্রস্তাব

সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইলে জামানত রাখতে হবে ৫০ হাজার টাকা- এমন প্রস্তাব জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 April 2018, 02:52 PM
Updated : 12 April 2018, 02:52 PM

সেই সঙ্গে প্রার্থী হতে টিআইএন থাকা বাধ্যতামূলক করা, ভোটের আগে-পরে ব্যয় কঠোরভাবে তদারকসহ ৩৫টি প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে ইসি আইন সংস্কার সংক্রান্ত উপকমিটি।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনে (আরপিও) নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম নেতৃত্বাধীন কমিটির এই প্রস্তাবগুলো বৃহস্পতিবার কমিশন সভায় পর্যালোচনার জন্য উপস্থাপিত হয়।

সভা শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “কমিশন বলছে, প্রস্তাবনাগুলোর আরও কিছুটা রিভিউ করা দরকার। খসড়া বিল হিসাবে পাঠানোর আগে রিভিউ কমিটি বাস্তবতা বিবেচনা করে আবার কমিশনের তা পেশ করবে।”

জামানত ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাবে কমিশন সায় দিয়েছে বলে আইন-বিধি সংস্কার কমিটির একজন সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

এখন সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হতে চাইলে ২০ হাজার টাকা ইসিতে জমা রাখতে হয়। নির্দিষ্ট আসনের মোট গৃহীত ভোটের এক-অষ্টমাংশের কম ভোট পেলে ওই অর্থ আর ফেরত পাওয়া যায় না।

অর্থাৎ কোনো আসনে যদি ১ লাখ ভোটগ্রহণ হয়, তবে কোনো প্রার্থী ১২ হাজারের চেয়ে কম ভোট পেলে জামানতের অর্থ আর ফেরত পাবেন না।

বাম দলগুলো আগে থেকেই ইসির এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে আসছেন। বাম নেতারা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে  নির্বাচন ধনী ব্যক্তিদের জন্য কুক্ষিগত করা হচ্ছে। জামানত বাড়ালে নির্বাচনে বর্জনের কথা ভাববেন বলেও হুমকি দিয়েছে রেখেছেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

আইন-বিধি সংস্কার কমিটির ওই সদস্য জানান, প্রার্থীদের ১২ ডিজিটের টিআইএন নম্বর বাধ্যতামূলক, অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রস্তাবেও ইসির সায় মিলেছে।

তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোট পর্যন্ত নির্বাচনী ব্যয় তদারকির জন্যে একটি কমিটি গঠন এবং ভোটের পরে দাখিল করা বিবরণী নিরীক্ষার ব্যবস্থা রাখার বিধান যুক্ত করার উদ্যোগও রয়েছে কমিশনের।

নির্বাচন কমিশন ভবন

স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিধান সহজ না করার বিষয়েও ইসি একমত বলে আইন-বিধি সংস্কার কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সদস্য জানান।

তিনি বলেন, “এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে সংশ্লিষ্ট এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন তালিকার বিধান রয়েছে। সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও পৌরসভার সঙ্গে সমন্বয় রেখে সংসদে ১০০০ ভোটারের সমর্থন রাখার বিধান রাখতে প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু তা সহজ না করে বিদ্যমান বিধি বহাল রাখার পক্ষে ইসি।”

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, আরপিও সংশোধনে প্রস্তাবগুলো নিয়ে কমিশনের নীতিগত সিদ্ধান্তের পর তা পর্যালোচনায় আইনি পরামর্শক নিয়োগ করা হবে। এরপর প্রস্তাবিত সংশোধনী নিয়ে ‘খসড়া বিল’ প্রস্তুত করে কমিশনের চূড়ান্ত অনুমোদন নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

মন্ত্রিসভাতা অনুমোদন করলে বিল আকারে সংসদে উপস্থাপন করা হবে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সংসদে পাস হলেই চূড়ান্ত হবে আরপিও সংশোধন।  

১৯৭২ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ প্রণয়নের পর এ পর্যন্ত ১১ বার সংশোধন এসেছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন অনুচ্ছেদে অন্তত ২০৯টি বিষয়ে সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে।

 

সর্বশেষ ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (অধ্যাদেশ) (সংশোধন) আইন ২০১৩ বিল পাস হয়। এতে নির্বাচনী ব্যয়সীমা ২৫ লাখ করা ও মানবতাবিরোধী দণ্ডিতদের ভোটে অযোগ্য ঘোষণা করাসহ কিছু সংশোধন এসেছিল।

এবার দুই দফা বৈঠক করেও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারায় বছর শেষে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের আগে আরপিও সংশোধন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন অনেকে।