বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণা আসার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে থাকা আন্দোলনকারীরা এই সিদ্ধান্ত জানায়।
আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আমরা শুনেছি। রাতে বসে আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি এই বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতা, আইন, ন্যায়নীতি বিশ্লেষণ করে কাল সকাল ১০টায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে সিদ্ধান্ত জানাব।”
এরপর দিনের মত কর্মসূচি শেষ করে টিএসসি এলাকা ত্যাগ করেন আন্দোলনকারীরা।
বর্তমানে সরকারি চাকরির পাঁচ শতাংশ সংরক্ষিত আছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য। আর প্রতিবন্ধীদের জন্য এক শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ও জেলা কোটা ১০ শতাংশ করে।
এই পদ্ধতি সংস্কারের পাঁচ দফা দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন চালিয়ে আসছে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা, যা গত রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘাতের পর ব্যাপক মাত্রা পায়।
তাদের দাবিগুলো হল- সরকারি নিয়োগে কোটার পরিমাণ ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, কোটার যোগ্য প্রার্থী না পেলে শূন্যপদে মেধায় নিয়োগ, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেওয়া, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অভিন্ন বয়সসীমা, নিয়োগপরীক্ষায় একাধিকবার কোটার সুবিধা ব্যবহার না করা।
রোববার রাতভর সংঘর্ষের পর সোমবার সচিবালয়ে সমঝোতা বৈঠকে ৭ মের মধ্যে কোটা ব্যবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত জানানোর প্রতিশ্রুতি দেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ওই প্রতিশ্রুতিতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিলে সাময়িক বিভক্তি তৈরি হয়। কিন্তু বাকি শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এবং সরকারের মন্ত্রীদের বিভিন্ন রকম মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আবারও একসঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে।
সে অনুযায়ী বুধবার সকাল থেকে সারা দেশে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে রাস্তায় নামে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের অবরোধে কার্যত অচল হয়ে যায় রাজধানীর রাজপথ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক তখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী পরীক্ষা-নিরীক্ষার দায়িত্ব দিয়েছেন, তারা (কর্মকর্তারা) কাজ করছেন, তারা কাজ করুক তারপর আপনারা জানতে পারবেন।”
আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “ধৈর্য ধরুন, প্রধানমন্ত্রী বিকালে সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে কথা বলবেন, তিনি কী বলবেন তার মুখ দিয়ে শুনুন।"
বিকালে সংসদের প্রশ্নোত্তরে কোটা প্রসঙ্গ এলে আন্দোলন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সরকারপ্রধান। তিন বলেন, কোটা নিয়ে যেহেতু এত কিছু, সেহেতু কোনো কোটাই আর রাখা হবে না।
স্বাধীনতার পর কোটা পদ্ধতি চালুর পর বিভিন্ন সময় তা সংস্কারের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বিরক্তিভরে বলেন, “কোটা থাকলেই সংস্কার। না থাকলে সংস্কারের দরকারই নেই। আন্দোলন হলে সময় নষ্ট হবে।”
তার যুক্তি ছিল, দেশে এখনও অনগ্রসর যারা আছে তাদের জন্য কোটা ব্যবস্থা রাখতে হবে। আর সব মিলিয়ে কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশ হলে তা যৌক্তিক হবে বলে তারা মনে করেন।
কিন্তু সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া না দিয়ে রাতে আলোচনা করে তারপর মতামত দেওয়ার কথা জানান পরিষদের নেতারা।
এদিকে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য নির্ধারিত কোটা সংস্কার করা হলে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ সংসদ সন্তান কমান্ড। তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর সেই সিদ্ধান্ত থেকে তারা সর আসে।
পুরনো খবর