শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে নির্যাতনের ওই অভিযোগকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার গভীর রাতে সুফিয়া কামাল হলে উত্তেজনা ছড়ায়।
কয়েকশ ছাত্রী হল ছাত্রলীগের সভাপতি এশাকে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে স্লোগান দিতে থাকেন। খবর পেয়ে অন্যান্য হল থেকেও শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সুফিয়া কামাল হলের সামনে জড়ো হন।
এই পরিস্থিতিতে রাত পৌনে ১টার দিকে প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী হলে ঢোকেন। রাত আড়াইটার দিকে প্রক্টর বেরিয়ে এসে নির্যাতনের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেত্রী এশাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান। ‘নির্যাতিত’ শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যবস্থাও তিনি করেন।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান রাতে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি অবহিত হলাম, ফিলসফি বিভাগের একজন শিক্ষার্থী, ওর নাম হল ইফফাত জাহান এশা, ও নাকি আরেকটি মেয়েকে মেরেছে। এবং বেশ ভালোভাবেই… সোশাল মিডিয়াতে দেখলাম যে তার একটা ছবি এসেছে।
“একজন ছাত্রীর ওপর আরেকজন ছাত্রী নির্মমভাবে যে আচরণটা করেছে, তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই।… হল প্রশাসনকে বলেছি, তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হল। আগামীকাল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করব, তদন্ত কমিটিও ঠিক করে দেব। প্রকৃত কী ঘটনা ঘটেছিল সেটি যেন আসে, কারণ সকরের জন্য একটি শিক্ষা রাখতে চাই।”
হলের শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত তিন শিক্ষার্থীকে সোমবার রাতে ডেকে নিয়ে নির্যাতন চালান এশা। তবে ভয়ে তারা ঘটনাটি চেপে গিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে মোর্শেদা আক্তার নামে উদ্ভিদ বিজ্ঞানের এক শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে আবারও নির্যাতন চালানোর পর ঘটনাটি প্রকাশ পেলে অন্য শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
ছাত্রীরা তখন এশাকে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে ফেলেন। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। মোর্শেদার ব্যান্ডেজ বাঁধা রক্তাক্ত পায়ের ছবিও ফেইসবুকে তুলে দেন ওই হলের কয়েকজন ছাত্রী।
সেই হলে নির্যাতনের খবর শুনে বিভিন্ন ছাত্র হল থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সুফিয়া কামাল হলের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান শুরু করে। ছাত্রী হলগুলোর ভেতরেও শুরু হয় বিক্ষোভ।
সুফিয়া কামাল হল থেকে বেরিয়ে আসার সময় প্রক্টরও বিক্ষোভরত ছাত্রদের রোষের মুখে পড়েন।
তিনি তখন বলেন, “শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগে ইফফাত জাহান এশাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। হলে চিকিৎসক এনে আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না।”
এই বিষয়ে এশার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ছাত্রলীগও রাতে এশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেয়। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন এক বিবৃতিতে এশাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানান।
রোববার রাতে পুলিশ আন্দোলনকারীদের শাহবাগ থেকে হটিয়ে দেওয়ার পর ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী তাদের উপর চড়াও হয়েছিলেন। রাতভর সংঘর্ষের মধ্যে গুলি ছোড়ারও অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার ছাত্রলীগের এক সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, যতদিন আন্দোলনকারীরা ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি’ ছিল, ততদিন ছাত্রলীগ তাদের বাধা দেয়নি।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এই আন্দোলনে ষড়যন্ত্র দেখলেও নিচের সারির নেতাদের অনেকে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে যুক্ত। নেতৃত্বের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়ে কয়েকজন পদত্যাগও করেছেন।