আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার ‘সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) বিল-২০১৮’ সংসদে উত্থাপন করেন। পরে তা পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
বিলটি উত্থাপনের সময় তাতে আপত্তি জানিয়ে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, পিছিয়ে পড়া এলাকার জন্য বিশেষ বিধান করতে সংবিধানে বাধা নেই। পার্বত্য বা উপকূলীয় বা হাওর অঞ্চলের জন্য এটি করা যায়।
“নারী সমাজের বিশেষ অংশের জন্য, অরাজনৈতিক মহিলাদের বঞ্চিত করে শুধু রাজনৈতিক মহিলাদের জন্য আলাদা বিধান করা যায় না। প্রস্তাবিত বিলটি আইন হলে আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে।”
পরে আইনমন্ত্রী তার আপত্তি খারিজ করে বলেন, সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
তখন এ আইনের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয় পরবর্তী সংসদের অর্থাৎ, নবম সংসদের প্রথম বৈঠক থেকে দশ বছর।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি। সেই হিসেবে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যের মেয়াদ আছে ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত রয়েছে।
২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা বাড়িয়ে ৫০ করা হয়। সে অনুযায়ী ৩৫০ জন সংসদ সদস্য নিয়ে গঠিত বর্তমান জাতীয় সংসদে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে ৩০০ জন এবং সংসদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে ৫০ জন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য রয়েছেন।
তবে পঞ্চদশ সংশোধনীতে ওই বিধির মেয়াদ না বাড়ানোয় ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারির পর তার আর কার্যকারিতা থাকবে না। এ কারণেই ওই বিধির মেয়াদ আরও ২৫ বছর বাড়ানোর প্রস্তাব তোলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
সপ্তদশ সংশোধনী বিলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আইনমন্ত্রী বলেন, “সংরক্ষিত মহিলা আসনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকার কারণে সমাজের সকল ক্ষেত্রে মহিলাদের অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে।... সংরক্ষিত আসনের প্রয়োজনীয়তা এখনও বিদ্যমান রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্যদেরকে নিয়ে গঠন করতে হলে দশম সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় সংবিধানের এ সংক্রান্ত বিধান সংশোধন আবশ্যক।”
অবশ্য নারী নেত্রীরা বলে আসছেন, সংরক্ষিত আসনের মেয়াদ বাড়ানো হলে তা নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখবে না। এর বদলে স্থানীয় সরকারের মত সংসদেও নারী আসনে সরাসরি ভোট চান তারা।
সংবিধান সংশোধন করতে হলে সংসদ সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশ ভোট লাগে। সংসদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাতে আছে ২৩২টি আসন।
সংবিধানের সর্বশেষ সংশোধন হয়েছিল ২০১৬ সালে। ওই সংশোধনে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। পরে সর্বোচ্চ আদালত ওই সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দেয়। ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আপিল বিভাগে ইতোমধ্যে আবেদন করেছে সরকার।