জোড়া খুন: এমপিপুত্র রনির ভাগ্য নির্ধারণ ৮ মে

রাজধানীর ইস্কাটনে জোড়া খুনের মামলায় ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনির সাজা হবে কি না, সে বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত জানা যাবে আগামী ৮ মে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 April 2018, 02:47 PM
Updated : 10 April 2018, 02:47 PM

ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আল মামুন ওই দিন আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে মঙ্গলবার তিনি এই দিন ঠিক করে দেন।

যুক্তিতর্কের শুনানিতে আসামির পক্ষে শুনানি করেন ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি কাজী নজিবুল্লাহ হিরু। তিনি রনির বেকসুর খালাস দাবি করেন।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুস সত্তার দুলাল আসামির সাজার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।

এর আগে ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ মামলার শুনানি চললেও ফেব্রুয়ারি শেয সপ্তাহে মামলাটি প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসে।

২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে নিউ ইস্কাটনে গাড়ি থেকে ছোঁড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে আবদুল হাকিম নামের এক রিকশাচালক এবং ইয়াকুব আলী নামের এক অটোরিকশাচালক আহত হন।

পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ এপ্রিল হাকিম এবং ২৩ এপ্রিল ইয়াকুব মারা যান।

এ ঘটনায় নিহত হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম ১৫ এপ্রিল রমনা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।

তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ওইবছর ৩১ মে ঢাকার এলিফেন্ট রোডে মহিলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি পিনু খানের বাসা থেকে তার ছেলে বখতিয়ার আলম রনিকে আটক করে। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই রয়েছেন।

তদন্ত শেষে ২১ জুলাই রনিকে একমাত্র আসামি করে ৩০২ ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এসআই দীপক কুমার দাস।

‘খুনের উদ্দেশ্য না থাকলেও’ আসামি জানতেন যে তার গুলিতে কেউ হতাহত হতে পারে- এই যুক্তিতে হত্যার অভিযোগ এনে এ মামলায় ৩০২ ধারায় অভিযোগপত্র দেন তিনি।

নিহতের শরীরে পাওয়া গুলির ব্যালাস্টিক রিপোর্ট, রনির অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের প্রতিবেদনসহ মোট ১৫টি আলামত অভিযোগপত্রের সঙ্গে যুক্ত করেন তদন্ত কর্মকর্তা। সেখানে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৩৭ জনকে সাক্ষী করা হয়।

গতবছর ৬ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে জোড়া খুনের এ মামলায় আসামি রনির বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার দ্বিতীয় মহানগর দায়রা জজ সামছুন নাহার

রনির গাড়িচালক ইমরান ফকির এবং ঘটনার সময় গাড়িতে থাকা তার দুই বন্ধু ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিলেও রনি দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেননি। কালো রঙের ওই প্রাডো গাড়ির মালিক সংসদ সদস্য পিনু খান বলে গণমাধ্যমে খবর আসে সে সময়।

রনির বন্ধু কামাল মাহমুদ ঢাকার হাকিম আদালতে জবানবন্দিতে বলেছিলেন, লাইসেন্স করা পিস্তল থেকে সাংসদপুত্রই সেদিন গুলি ছুড়েছিলেন। রনির পিস্তলের গুলিতেই ইয়াকুব ও হাকিমের মৃত্যু হয় বলে পরে ব্যালাস্টিক পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়ার কথা জানায় পুলিশ।

এই সাংসদপুত্রের গাড়ি চালক ইমরান ফকিরকেও গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তবে সাক্ষী হওয়ায় অভিযোগপত্র থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়।

গতবছর ৮ অক্টোবর আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে ইমরান বলেন, ওই রাতে সোনারগাঁও হোটেল থেকে রনিকে নিয়ে তিনি যখন মগবাজার মোড় হয়ে ইস্কাটনের বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। সে সময় ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের জন্য রাস্তার একপাশ বন্ধ ছিল।

“আমাদের গাড়ির বাঁ দিকে ও পেছনে দুটি ট্রাক ছিল। রাস্তায় ছিল জ্যাম। জ্যামে আটকা থাকা অবস্থায় রনি সাহেব এক পর্যায়ে হাত বের করেন। এর কিছুক্ষণ পর গুলির শব্দ শোনা যায়।”

তবে সাংসদপুত্র রনি ৩০ অক্টোবর আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।

২৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে এল।