কোটা সংস্কারের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে ‘বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে’ ছাত্রদের ওপর হামলা এবং এই আন্দোলন নিয়ে সংসদে কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যেরও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা।
এদিকে তাদের এই আন্দোলনের পাল্টায় মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলন স্থগিত করা অংশটি বলেছে, এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরা ‘অনুপ্রবেশকারী’।
এরপর সোমবার বিকালে সচিবালয়ে সরকারের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি দলের বৈঠকে ৭ মের মধ্যে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সিদ্ধাস্ত জানানোর প্রতিশ্রুতি এলে আন্দোলনরতদের মধ্যে তৈরি হয় বিভক্তি।
বৈঠকে অংশ নেওয়া অংশটি ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থানে থাকা আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
এর ধারাবাহিকতায় আন্দোলনরতদের ওই অংশটির শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হয়। পরে সেখান থেকে তারা মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
অন্যদিকে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া অংশের শিক্ষার্থীরা সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন।
ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর সেখানে বলেন, “আমরা আগামী ৭ মে পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করেছি। সরকার আমাদের বলছে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কোটা নিয়ে কী করা যায় জানাবেন। এ সময়ের মধ্যে সব ধরনের আন্দোলন বন্ধ থাকবে এবং ক্লাস-পরীক্ষা চলবে।”
অন্যদিকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া অংশটিতে থাকা শিক্ষার্থীরা বলছেন, মে মাসে রোজা শুরু হয়ে যাবে এবং শিক্ষার্থীরা ছুটিতে চলে যাবে। এখন আন্দোলন থামিয়ে দিলে তখন আর নতুন করে শুরু করা যাবে না। তখন দাবিও আর আদায় করা যাবে না।
রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী নীল রুদ্র রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোববার রাতে আমাদের উপর যে গুলি হল, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হল, হামলা হল- এর বিচার আগে করতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আন্দোলন থামিয়ে দিলে এই গণজাগরণ আর তৈরি হবে না, সরকারও আমাদের দাবি মেনে নেবে না। রোজার সময় আন্দোলন করলে আমাদের ধর্মবিরোধী ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা সুযোগ পাবে না, রাজাকারের বাচ্চারা সুযোগ পাবে? তাদের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংকুচিত হবে?”
রাজু ভাস্কর্যের সামনে আন্দোলনকারীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে কৃষিমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানো হয়।
আন্দোলন চালিয়ে গেলেও মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের এই অংশটির মধ্যে সমন্বয়হীনতা ছিল বেশ স্পষ্ট। সোমবার রাতে যারা আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণার সময় সামনে ছিলেন, তাদের অনেকেই মঙ্গলবার আন্দোলনে অনুপস্থিত বলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
রাজু ভাস্কর্যের নিচে আলাদাভাবে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আল ফজলে রাব্বি বলেন, “সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। আমরা চাই আমাদের দাবির পাশাপাশি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক এবং ছাত্রদের ওপর চালানো হামলার বিচার হোক। তার আগ পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলবে।”