আবিদের পাশেই চিরঘুমে আফসানা

নেপালে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে নিহত পাইলট আবিদ সুলতানের স্ত্রী আফসানা খানমকে বনানীতে স্বামীর কবরের পাশেই দাফন করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2018, 01:37 PM
Updated : 23 March 2018, 03:43 PM

শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বনানীর সামরিক কবরস্থানে আফসানাকে দাফন করা হয়। এ সময় স্বজনদের সঙ্গে এই দম্পতির একমাত্র সন্তান তানজিব বিন সুলতান মাহিও সেখানে ছিলেন।

দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যুর খবরে ‘স্ট্রোক’ হলে ১৮ মার্চ ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছিল আফসানাকে। সেখানে ছয় দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার সকালে চিকিৎসকরা আফসানাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মাত্র ১১ দিনের ব্যবধানে আবিদ ও আফসানার মৃত্যুতে স্বজনদের মধ্যে চলছে শোকের মাতম। তাদের একমাত্র ছেলে স্কুলছাত্র মাহি যেন শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছেন।

মা-বাবার মৃত্যু শোক সইতে পরবে না ভেবে প্রথমে মাহিকে মায়ের মরদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি। জানাজার জন্য মরদেহ নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে শেষবার মায়ের মুখ দেখেন তিনি।

একমাত্র ছেলে মাহিকে একা রেখেই চলে গেলেন আবিদ সুলতান ও আফসানা খানম

বিকালে আসরের নামাজের পর উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের গাউসুল আজম জামে মসজিদে আফসানার জানাজা হয়।

ইউএস-বাংলার একটি উড়োজাহাজ গত ১২ মার্চ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হলে ২৬ বাংলাদেশিসহ ৪৯ জনের মৃত্যু হয়। ওই ফ্লাইটের প্রধান বৈমানিক ছিলেন বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা আবিদ সুলতান।

ওই দুর্ঘটনায় নিহত ২৩ জনের মরদেহ রোববার দেশে ফিরিয়ে এনে আর্মি স্টেডিয়ামে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মাকে হাসপাতালে রেখে সেদিন বাবার লাশ নিতে বনানীতে যায় উত্তরার মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের ছাত্র তানজিব বিন সুলতান মাহি।

আফসানা খানম শেষবার উত্তরার বাসায় ফেরেন কফিনবন্দি হয়ে

আফসানা খানমের মৃত্যুর খবর শুনে বিকালে তাদের উত্তরার বাসায় আসেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুন।

এ সময় তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী তানজিবের খবর নিয়েছেন। তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।”

ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র আবিদ সুলতান একসময় বাংলাদেশ এয়ারফোর্সের বৈমানিক ছিলেন। তাদের গ্রামের বাড়ি নওগাঁর রানীনগরে। বাবা এম এ কাশেমও ছিলেন বৈমানিক।

আর আফসানাদের গ্রামের বাড়ি নাটোরে। তার বাবা এ কাশেম শেখ একজন চিকিৎসক। ছেলেকে নিয়ে তারা থাকতেন উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর সড়কের ৩৮ নম্বর বাসায়।

স্বজনদের কান্না

কাঠামন্ডুর ত্রিভুবনে দুর্ঘটনার দিন ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, ক্যাপ্টেন আবিদ আহত অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। কিন্তু পরদিন সকালে তারা আবিদের মৃত্যুর খবর দিলে ভেঙে পড়েন আফসানা।

আবিদের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুর্ঘটনার খবর শুনে বার বার ভাবি সংজ্ঞা হারাচ্ছিলেন। মারা যাওয়ার খবর পেয়ে একেবারেই ভেঙে পড়েন। আসলে এত বড় শোক সহ্য করতে পারেননি।”