আবিদের পাশেই শায়িত হবেন আফসানা

নেপালে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে নিহত পাইলট আবিদ সুলতানের স্ত্রী আফসানা খানমকে বনানীতে স্বামীর কবরের পাশে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

কাজী নাফিয়া রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2018, 08:43 AM
Updated : 23 March 2018, 01:40 PM

দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যুর খবরে ‘স্ট্রোক’ হলে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছিল আফসানাকে। সেখানে ছয় দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার সকালে চিকিৎসকরা আফসানাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মাত্র ১১ দিনের ব্যবধানে আবিদ ও আফসানার মৃত্যুতে স্বজনদের মধ্যে চলছে শোকের মাতম। তাদের একমাত্র ছেলে তানজিব বিন সুলতান মাহি যেন শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে।

আফসানার চাচা ইয়াদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোরেই আমরা জানতে পারি ওর অবস্থা খারাপের দিকে। আমরা আসতে আসতে ওর অর্গানগুলো অকার্যকর হতে থাকে। পরে সাড়ে ৯টায় মারা যায়।”

হাসপাতালে স্বজনদের আহাজারি

হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আফসানার মরদেহ নেওয়া হয় উত্তরার বাসায়

হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক বদরুল আলম বলেন, “আমরা সম্ভব সব চেষ্টাই করেছি। কিন্তু আজ সকালে উনার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। এরপর আর কিছু করার ছিল না।”

আফসানার মৃত্যুর খবরে স্বজনরা হাসপাতালে ছুটে এলে সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দুপুরে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় আবিদ-আফসানার উত্তরার বাসায়।

আফসানার ফুপাতো ভাই মো. শাহিনুর ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আসরের পর আবিদদের বাসার কাছের মসজিদে আফসানার জানাজা হবে। পরে বনানীর সেনা কবরস্থানে স্বামীর পাশেই তার দাফন হবে।

ইউএস-বাংলার একটি উড়োজাহাজ গত ১২ মার্চ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হলে ২৬ বাংলাদেশিসহ ৪৯ জনের মৃত্যু হয়। ওই ফ্লাইটের প্রধান বৈমানিক ছিলেন বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা আবিদ সুলতান।

ওই দুর্ঘটনায় নিহত ২৩ জনের মরদেহ রোববার দেশে ফিরিয়ে এনে আর্মি স্টেডিয়ামে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মাকে হাসপাতালে রেখে সেদিন বাবার লাশ নিতে বনানীতে যায় উত্তরার মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের ছাত্র মাহি।

আবিদ সুলতান ও আফসানা খানম এখন কেবলই ছবি

একমাত্র ছেলে মাহিকে একা রেখেই চলে গেলেন আবিদ সুলতান ও আফসানা খানম

ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র আবিদ সুলতান একসময় বাংলাদেশ এয়ারফোর্সের বৈমানিক ছিলেন। তাদের গ্রামের বাড়ি নওগাঁর রানীনগরে। বাবা এম এ কাশেমও ছিলেন বৈমানিক।

পাঁচ হাজার ঘণ্টা ফ্লাইট চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল আবিদের। নেপালের বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত ড্যাশ ৮-কিউ ৪০০ এয়ারক্রাফটটি ক্যাপ্টেন তিনিই কানাডা থেকে বাংলাদেশে উড়িয়ে এনেছিলেন।

আর আফসানাদের গ্রামের বাড়ি নাটোরে। তার বাবা এ কাশেম শেখ একজন চিকিৎসক। ছেলেকে নিয়ে তারা থাকতেন উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর সড়কের ৩৮ নম্বর বাসায়।

কাঠামন্ডুর ত্রিভুবনে দুর্ঘটনার দিন ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, ক্যাপ্টেন আবিদ আহত অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। কিন্তু পরদিন সকালে তারা আবিদের মৃত্যুর খবর দিলে ভেঙে পড়েন আফসানা।

আবিদের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুর্ঘটনার খবর শুনে বার বার ভাবি সংজ্ঞা হারাচ্ছিলেন। মারা যাওয়ার খবর পেয়ে একেবারেই ভেঙে পড়েন। আসলে এত বড় শোক সহ্য করতে পারেননি।”