বৃহস্পতিবার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে উৎসব উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর বিকালে বিভিন্ন স্থান থেকে বর্ণিল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে সব গিয়ে মেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে।
স্টেডিয়ামে আলোক উৎবসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি হয় উদযাপনের প্রথম দিনের কর্মসূচির।
ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায়ও শোভাযাত্রা করে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার এই স্বীকৃতি উদযাপন হয়েছে।
সরকারের আয়োজনে দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে শোভাযাত্রার কারণে শাহবাগ থেকে পল্টন, গুলিস্তান এলাকায় যানজটের দুর্ভোগে পড়তে হয় রাজধানীবাসীকে।
এই আয়োজনের অন্য উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, ভোটের বছর জনগণকে বিভ্রান্ত করাই এর উদ্দেশ্য।
অন্যদিকে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার এই অর্জন ধরে রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে তোলার পর জাতিসংঘের মাপকাঠিতেও উত্তরণ ঘটায় এই উদযাপন।
জাতিসংঘ সদস্য দেশগুলোকে স্বল্পোন্নত (এলডিসি), উন্নয়নশীল ও উন্নত এ তিন পর্যায়ে বিবেচনা করে।
১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ সূচক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচক (ইভিআই) এই তিন শর্ত পূরণ করে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠতে যাচ্ছে।
গত শনিবার জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির হাতে যোগ্যতা অর্জনের এই স্বীকৃতির চিঠি তুলে দেওয়া হয়।
এরপর সরকারের পক্ষ থেকে এই স্বীকৃতি অর্জন উদযাপনে ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ স্লোগান নিয়ে সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে ধানমণ্ডিতে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে যান উৎসব উদ্বোধন করতে।
এই অর্জনের কৃতিত্ব জনগণকে দিয়ে তিনি বলেন, এই পথ ধরে বাংলাদেশ যেন আরও এগিয়ে যেতে পারে- সেটাই তার চাওয়া।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর ঢোলের বাদ্যে সূচনা হয় উৎসবের।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মানুষকে অভিনন্দন জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রেসিডেন্ট তাকেহিকো নাকাও, ইউএসএআইডির প্রশাসক মার্ক গ্রিন এবং জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকার ভিডিও বার্তা দেখানো হয়।
এছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ভিডিও বার্তায় শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মুক্তিযোদ্ধা, কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, জেলে, খামারী, ছাত্র-ছাত্রী, দিনমজুর, তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। ফুল দেওয়া হয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার পক্ষ থেকেও।
ক্রীড়াবিদদের পক্ষে ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার হাতে জাতিসংঘের দেওয়া উন্নয়নশীল দেশের সুপারিশপত্র তুলে দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী স্মারক ডাক টিকিট ও উদ্বোধনী খাম এবং ৭০ টাকা মূল্যের স্মারকনোট উন্মোচন করেন।
বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর ব্যস্ততা শুরু হয় সরকারের ৫৭টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধীনস্থ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। দুপুরের আগেই টুপি-টিশার্ট পরে শোভাযাত্রার প্রস্ততি শুরু করেন তারা।
শোভাযাত্রা নিয়ে রওনা হতে নির্দিষ্ট নয়টি স্থানে বিকাল ৩টায় সমবেত হন তারা। এরপর সবাই রওনা হন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের দিকে।
‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ লেখা সবুজ-লাল টিশার্ট এবং একেক মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ একেক রংয়ের টুপি পরে শোভাযাত্রায় যোগ দেন সরকারি কর্মীরা। প্রায় সব দলের সামনে ছিল বাদক দল। কোনো কোনো দল এগিয়েছে বর্ণিল সাজে নেচে, গেয়ে। কোনো কোনো দলে ছিল হাতি, ঘোড়া, বিশাল আকৃতির নৌকা।
সব শোভাযাত্রা স্টেডিয়ামে ঢোকার পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর আতশবাজি প্রদর্শনীতে আলোকিত হয়ে ওঠে স্টেডিয়াম; ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে শিল্পকলা একডেমির সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই আয়োজন চাক্ষুস করেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা; তার সঙ্গে বোন শেখ রেহানা ও ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকও ছিলেন।
জাতীয় সঙ্গীতের পর বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র ঢাক, ঢোল, দোতারা আর বাঁশির ধুনে শুরু হয় সাংস্কৃতিক আয়োজন। শিল্পকলা একাডেমির নিজস্ব শিল্পীরা ছাড়াও এতে যোগ দেন দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আসা শিল্পীরা।
লোকজ বাদ্যযন্ত্রের দলটির সঙ্গে নেচে গেয়ে বেড়ালেন নৃত্যশিল্পীরা, তাদের সঙ্গে নিজস্ব বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বাহারি সাজপোশাকে সেজে যোগ দিলেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাঝপথে লেজার শোয়ের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের নানা সময়কার ইতিহাস ও উন্নয়নের কর্মকাণ্ড। স্টেডিয়ামে স্থাপিত বড় পর্দায় প্রদর্শিত হয় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের তথ্যচিত্র৷
এরপর সকালের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ভাষণের ধারণকৃত অংশ দেখানো হয়। তা শেষ হতেই রাতের আকাশ আলোকিত হয়ে উঠে আতশবাজির ঝলকানিতে৷ হর্ষধ্বনিতে মুখর হয় উঠে পুরো প্রাঙ্গণ৷
অনুষ্ঠানের প্রধান আর্কষণ হিসেবে তার পরই গান নিয়ে আসেন রুনা লায়লা, মমতাজ ও জেমস। ছিল ব্যান্ড দল নেমেসিসেরও পরিবেশনা।
শিল্পকলা একাডেমির অ্যাক্রোবেটিক দলের সদস্যদের পরিবেশনায় শেষ হয় অনুষ্ঠান।