এ অর্জন জনগণের: প্রধানমন্ত্রী

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতিকে জনগণের প্রতি উৎসর্গ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2018, 09:52 AM
Updated : 22 March 2018, 10:28 AM

জাতিসংঘের ওই স্বীকৃতি উদযাপনে বৃহস্পতিবার উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করে শেখ হাসিনা বলেছেন, “দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ হবে শ্রেষ্ঠ… শ্রেষ্ঠ দেশ হিসাবে বাংলাদেশ মর্যাদা পাবে। সেটাই আমার কামনা।”

বাংলাদেশের এই অর্জন ধরে রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “এই অর্জন আমরা যারা সকলে একযোগে কাজ করেছি, যারা উন্নয়নে অবদান রেখেছে; সকলের অর্জন, বাংলাদেশের জনগণের অর্জন। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সকল জনগণই হচ্ছে মূল শক্তি। এই জনগণই পারে সব রকম অর্জন করতে।” 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অর্জন যেন কোনোভাবেই হারিয়ে না যায়, এই অর্জনের পথ ধরে বাংলাদেশ যেন আরও এগিয়ে যেতে পারে- সেটাই তার চাওয়া।

শেখ হাসিনার ঘোষণার পর ঢোলের বাদ্যে সূচনা হয় উৎসবের। সাত দিনের এই উৎসবের উৎযাপন চলছে ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ স্লোগান নিয়ে।

১৯৭৫ সালে স্বল্পোন্নত দেশ হওয়া বাংলাদেশ মাথাপিছু আয়, মানবোন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ঝুঁকিসূচকের শর্ত পূরণ করে প্রায় ৪৩ বছর পর উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাচ্ছে। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) সম্প্রতি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি দেয়।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা স্মরণ করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা।

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবকে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয়। সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা।

অনুষ্ঠানে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি ঠিক জানি না… আমার ঠিক এটাই মনে হয়…”

“আজকে যে বাংলাদেশের মানুষের অর্জন… তিনি কি বেহেশত থেকে দেখতে পারেন? তিনি কি জানতে পারেন?”

বলতে বলতেই কেঁদে ফেলেন শেখ হাসিনা। মাঝে কিছু সময় চুপ করে তাকিয়ে থাকেন উপরের দিকে।

নিজেকে সামলে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি এখানে আসার আগে আমার ছোট বোন রেহানার সাথে কথা বলছিলাম। আব্বা যে চেয়েছিলেন, বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটবে। বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে। বাংলাদেশের মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে… আজকে তো সেই সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেছে। আমরা একটা দুয়ার পেরিয়ে এগিয়ে গেছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে বাংলাদেশ অর্জনের এই দুয়ারে পৌঁছাতে পারত দশ বছরের মধ্যে। কিন্তু বাংলাদেশের অনেক সময় লেগে গেল।

এই অর্জনে বাংলাদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রেসিডেন্ট তাকেহিকো নাকাও, ইউএস এইডের প্রশাসক মার্ক গ্রিন এবং জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকার ভিডিও বার্তা দেখানো হয় অনুষ্ঠানে।

এছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ভিডিও বার্তায় শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মুক্তিযোদ্ধা, কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, জেলে, খামারী, ছাত্র-ছাত্রী, দিনমজুর, তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।  

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

মন্ত্রিসভার পক্ষে অর্থমন্ত্রী মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল; সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ; ১৪ দলের পক্ষে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, আওয়ামী লীগের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দেন।

 

এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধা, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী, পেশাজীবী, নারী সংগঠন, এনজিও প্রতিনিধি, শিশু প্রতিনিধি, প্রতিবন্ধী প্রতিনিধি, শ্রমজীবী প্রতিনিধি এবং মেধাবী তরুণ সমাজের পক্ষ থেকেও প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দেওয়া হয়।

দেশের ক্রীড়াবিদদের পক্ষে ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেওয়া হয়।   

ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর ১৯৮১ সালে দেশের ফেরার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, “একটা বৈরী পরিবেশে আমি দেশে এসেছিলাম। সেখান থেকে জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে যে যাত্রা শুরু করেছিলাম.. আজকে আমি মনে করি সেখান থেকে বাংলাদেশটাকে একটা ধাপ এগিয়ে নিতে আমরা সক্ষম হয়েছি, যেখানে জাতির পিতা রেখে গিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে রেখে গিয়েছিলেন। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশকে উন্নীত করতে পেরেছি।”

উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করায় ‘বাবার আত্মা শান্তি পাবে’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা। কতো মানুষের আত্মত্যাগ। নিশ্চয় তাদের আত্মা শান্তি পাবে।”

তিনি বলেন, “এই অগ্রযাত্রাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। এই যাত্রাপথ যেন থেমে না যায়.. আমি শুধু এটুকুই আবেদন করব দেশবাসীর কাছে, সকলের কাছে যে, আমরা গর্বিত জাতি হিসাবে বাঁচতে চাই। আমরা মাথা উচু করে চলতে চাই।

“আমরা যে সংগ্রাম করে, যুদ্ধ করে, বিজয় অর্জন করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা কেন পিছিয়ে থাকব? কেন আমরা অন্যের কাছে হাত পেতে চলব ? কেনো আমরা পারব না নিজের পায়ে দাঁড়াতে? আমরা যে পারি সেটা তো আজকে আমরা প্রমাণ করেছি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যতটুকু অর্জন আমি মনে করি বাংলার জনগণের। এই জনগণের কাছ থেকে যদি সাড়া না পেতাম, তাদের সহযোগিতা না পেতাম, তারা যদি ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত না করত তাহলে তো আমি ক্ষমতায়ও আসতে পারতাম না।”

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর আগেই ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার বিষয়ে নিজের দৃঢ় বিশ্বাসের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে ৪১ সালের মধ্যে একটা উন্নত দেশ হিসাবে গড়ে তুলব। তখন তো আর বেঁচে থাকব না, আজকের যারা প্রজন্ম নিশ্চয় তারা এগিয়ে নিয়ে যাবে।”

সভাপতির বক্তব্য দেওয়ার পর শেখ হাসিনার হাতে জাতিসংঘের দেওয়া উন্নয়নশীল দেশের সুপারিশপত্র তুলে দেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়াও অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী স্মারক ডাক টিকিট ও উদ্বোধনী খাম এবং ৭০ টাকা মূল্যের স্মারকনোট উন্মোচন করেন। প্রধানমন্ত্রীর হাতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ফটো অ্যালবাম তুলে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি ফেকিতামোয়েলোয়া কাতোয়া। এছাড়া ইউএনডিপির প্রশাসক আখিম স্টেইনারের বার্তা পড়ে শোনানো হয়।

অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক সম্পদ বিভাগের সচিব কাজী শহিদুল আলমের স্বাগত বক্তব্যের পর বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ওপর একটি প্রামাণ্য ভিডিও দেখানো হয়।

এর আগে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে শেখ হাসিনা জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।