বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া হাসি হারালেন হাতের চার আঙুল

বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া ইমরানা কবির হাসির বাঁ হাতের চারটি আঙুল কেটে ফেলা হয়েছে বলে তার চিকিৎসক জানিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকসাজিয়া আফরিনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2018, 03:02 PM
Updated : 21 March 2018, 03:06 PM

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) এই শিক্ষক এখন সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

গত ১২ মার্চ কাঠমান্ডুতে ওই দুর্ঘটনার পর আহত যে দুই বাংলাদেশিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছিল, তাদের একজন হাসি। স্বামী সফটওয়্যার প্রকৌশলী রকিবুল হাসানের সঙ্গে নেপাল ঘুরতে যাচ্ছিলেন তিনি।

ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হলে যে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়, তাদের মধ্যে রকিবুল একজন।

গুরুতর আহত হাসিকে নেপাল থেকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই হাসপাতালে বার্ন ইউনিটের কনসালটেন্ট ডা. সি জ্যাকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।

বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন হাসির স্বামী সফটওয়্যার প্রকৌশলী রকিবুল হাসান

ডা. জ্যাকের বরাত দিয়ে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. হোসেইন ইমাম বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইমরানা কবির হাসির বাম হাতের চারটি আঙুল কেটে ফেলতে হয়েছে।

“দুর্ঘটনার সময় বাঁ হাত দিয়ে তিনি হয়ত কিছু হোল্ড করে ছিলেন। বার্ন আউট হয়ে তার আঙুলে আর কিছু ছিল না, আমরা নেপালেই দেখেছি।”

“ইমরানা রিকভার করছে, এখন তার ব্লাডে কিছু ইনফেকশন আছে, তার আরও কিছু চিকিৎসা লাগবে,” বলেন নেপাল ঘুরে আসা এই চিকিৎসক।

বিমান দুর্ঘটনায় আহত বাংলাদেশিদের মধ্যে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন রিজওয়ানুল কবিরও ডা. সি জ্যাকের তত্ত্বাবধানে আছেন।

তিনি এখন তুলনামূলক ভালো আছেন বলে ডা. জ্যাকের বরাত দিয়ে ডা. ইমাম জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “রিজওয়ান ভালো আছেন, তিনি হাঁটাচলা করতে পারছেন। তার ড্রেসিং চেঞ্জ করা হয়েছে। এখন সাইকিয়াট্রিক থেরাপি চলছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহে পিঠের চামড়াটা লাগিয়ে ২৮ বা ২৯ তারিখের দিকে তারা তাকে রিলিজ করে দেবে।”

রিজওয়ানুল কবিরের অবস্থা উন্নতির দিকে বলে তার চিকিৎসক জানিয়েছেন

দুর্ঘটনার পর নেপাল থেকে ভারতের দিল্লিতে অ্যাপোলো হাসপাতালে নেওয়া হয় ইয়াকুব আলীকে।

মঙ্গলবার ইয়াকুবের পায়ে একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে জানিয়ে ডা. ইমাম বলেন, “তার জ্ঞান আছে। তিনি গ্র্যাজুয়ালি ইমপ্রুভিং।”   

বিমান দুর্ঘটনায় আহত ১০ বাংলাদেশির মধ্যে তিনজন বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকি সাতজনকে বাংলাদেশে এনে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

এদের মধ্যে এক দফা চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরার পরদিন বুধবার দুপুরে আবার বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন আলমুন নাহার অ্যানি। এই দুর্ঘটনায় স্বামী ফারুক হোসেন প্রিয়ক ও মেয়ে তামাররা প্রিয়ন্ময়ীকে হারিয়েছেন তিনি।

নিহতদের লাশ সোমবার দেশে আসার আগ পর্যন্ত স্বামী-মেয়ের মৃত্যুর খবর জানতেন না অ্যানি। মরদেহ আসার পর অ্যানিকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যান তার আত্মীয়-স্বজনরা। চিকিৎসকরা তখন বলে দিয়েছিলেন, প্রয়োজন হলে তাকে যেন আবার বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। 

অ্যানির শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ডা. ইমাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেসিকালি ওই খবরটা (মৃত্যু সংবাদ) পাওয়ার পরে মেন্টাল ট্রমা থেকে তার কিছু ফিজিক্যাল সমস্যা দেখা দিচ্ছে। চেস্ট পেইন আছে, খাওয়া দাওয়া করতে পারছে না, উইকনেস...সব কিছু মিলে যখন সামন্ত লাল স্যারের সাথে কথা হয়েছে, তখন স্যার তাকে নিয়ে আসতে বলেছেন এবং তারা এসেছে।”

বাকি ছয়জনের মধ্যে শাহরিন আহমেদ ও শাহীন ব্যাপারীর প্রথম অস্ত্রোপচার বুধবার সম্পন্ন হয়েছে।

গুরুতর আহত আরেকজন হলেন কবির হোসেন। তার দুই পা হাঁটুর নিচ থেকে অনেক জায়গায় ভেঙে গেছে। এছাড়া তার ক্ষত স্থানে ইনফেকশন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা আছে।

ডা. ইমাম বলেন, “অনেক সময় হাড় ভেঙে গেলে সেখান থেকে হাড়ের ভেতর যে ফ্যাক্ট বা মেটেরিয়ালস থাকে সেগুলো সরাসরি ফুসফুসে চলে যায়। তখন শ্বাসকষ্ট হয়। ওই রকম কিছু কি না সেটা আমরা ফাইন্ড আউট করব।”

ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে বুধবার শাহরিন আহমেদ ও শাহীন ব্যাপারীর অস্ত্রোপচার হয়েছে

কবিরের অস্ত্রোপচারের বিষয়ে আগামী সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ওই ঘটনায় আহত মেহেদী হাসান অমিয় ও সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা দম্পতি বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মেহেদী নিহত প্রিয়কের মামাত ভাই।

ডা. ইমাম বলেন, মেহেদী-স্বর্ণা দুইজনই বেশ ভালো আছেন এবং তারা হাঁটাচলা করতে পারছেন।

এদের বাইরে আহত রাশেদ রুবায়েত দ্রুত সেরে উঠছেন বলে জানান তিনি।