দেশের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত: হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের জন্য বাবার মতো যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2018, 01:29 PM
Updated : 21 March 2018, 01:31 PM

বুধবার চট্টগ্রামের পটিয়ায় আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় একথা বলে আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট চান তিনি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, “যেভাবে আমার পিতা আপনাদের জন্য জীবন দিয়ে গেছে.. প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিয়েও আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে আপনাদের সুন্দর জীবন দেব। আপনাদের জন্য আমি যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত।”

পাকিস্তানি শোষণের নিগড় থেকে বাঙালিকে মুক্ত করার সংগ্রামে জীবনের এক-চতুর্থাংশ সময় কারাগারেই কাটাতে হয়েছিল জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে।

তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার তিন বছরের মধ্যে নানা ষড়যন্ত্রের মধ্যে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। তখন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া বড় মেয়ে শেখ হাসিনা পরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন।

জনসভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমার জীবনের কোনো চাওয়া পাওয়া নেই।

“আমার একটাই লক্ষ্য; আমার বাংলার মানুষ.. একেবারে শহর থেকে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত যে মানুষগুলো বসবাস করে, তারা সুন্দর জীবন পাবে, উন্নত জীবন পাবে, সুন্দরভাবে বাঁচবে; সেটাই আমার লক্ষ্য।”

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বচানকে সামনে রেখে অন্যান্য বিভাগীয় শহরের মতো চট্টগ্রামের এই জনসভা থেকেও নৌকা প্রতীকে ভোট চান তিনি।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “আমি আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। আপনারা নৌকায় ভোট দেন। আমরা আপনাদের উন্নয়ন দিতে পারব।”

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার উপর জোর দিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হাসিনা বলেন, “আমরা যদি নৌকায় ভোট পাই, আমরা যদি আগামীতে ক্ষমতায় আসি, আমাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকবে।”

‘একমাত্র নৌকা মার্কায় ভোট দিলে দেশের উন্নতি হবে’- বলার পর নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে এবং এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধু করতে জনসভায় উপস্থিত সবার ওয়াদা নেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই; আপনারা একথা পৌঁছে দেবেন যে, আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করবেন।”

প্রধানমন্ত্রী ‘হাত তুলে ওয়াদা’ করার আহ্বান জানালে জনসভায় উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ দু’হাত তুলে ধরেন।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাস নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজা নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা এখন কারাগারে।

শেখ হাসিনা বলেন, “এতিমখানার জন্য টাকা আসে… “আপনারা চিন্তা করে দেখেন.. কোরআন শরিফে লেখা আছে, এতিমের হক কেড়ে নিও না, এতিমের সম্পদ লুট করো না, এতিমকে এতিমের ন্যায্য হক দিয়ে দাও।

“কোরআন শরিফের নির্দেশ না মেনে .. এতিমের নামে টাকা এসেছে.. একটা টাকাও এতিমখানায় যায় নাই। সব নিজেরা আত্মসাৎ করেছে।”

এই মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং রায় সরকারের গায়ের জোরে হয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির।

শেখ হাসিনা বলেন, “মামলা দিয়েছে কে? আওয়ামী লীগ সরকার তো দেয়নি। দিয়েছে তো সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আজকে সেই মামলায় সে শাস্তি পেয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করেছে, কোর্ট রায় দিয়েছে।

“কোর্টের রায় তারা মানে না, কোর্টকে মানতে চায় না; এমনই তাদের চরিত্র। তারা আইন মানবে না, কানুন মানবে না, কিছুই মানবে না।

“তারা জনগণের সম্পদ কেড়ে খাবে। এতিমের টাকা মেরে খাবে। আর সেটার জন্য শান্তি দিল কেন.. তার জন্য হুমকি-ধমকি-আন্দোলন।”

তবে দেশের মানুষ আর দুর্নীতিবাজ-জঙ্গিবাদীদের প্রশ্রয় দেবে না বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি পাওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ অনেক কষ্ট ভোগ করেছে। দীর্ঘদিন এদেশে কোনো উন্নয়ন হয় নাই।

“আমরা আওয়ামী লীগ দেশে শান্তি চাই, মানুষের উন্নতি চাই। একটা দেশের উন্নতি করতে হলে শান্তির প্রয়োজন। এই দেশ শান্তিপূর্ণ হোক ; সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আওয়ামী লীগ কাজ করে।”

“আমরা দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। বিশ্বসভায় আমরা মাথা উচু করে চলতে পারি, কারো কাছে হাত পেতে নয়,” বলেন তিনি।