আলোকচিত্রে স্বাধীনতা সংগ্রাম, দেখা যাচ্ছে যুদ্ধাস্ত্রও

রেসকোর্স ময়দানের শেখ মুজিবুর রহমান, পঁচিশে মার্চের ভয়াল কালো রাত, নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাংলার দামাল ছেলেদের বীরত্বগাথা- যুদ্ধ দিনের এমন সব স্মৃতির দেখা মিলল নানা আলোকচিত্র ও স্মারকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2018, 07:59 PM
Updated : 20 March 2018, 08:04 PM

যুদ্ধ দিনের এমন সব স্মারক ও আলোকচিত্র নিয়ে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে শুরু হয়েছে এক প্রদর্শনী। মঙ্গলবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।

জাতীয় জাদুঘরের সংগ্রহে থাকা নানা নিদর্শন ও স্মারক ঠাঁই পেয়েছে প্রদর্শনীতে, পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে ভারত সরকারের দেওয়া নিদর্শন থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক স্মারকও রয়েছে এতে। আলোকচিত্রগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণের দৃশ্যটি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে।

১৯৭১ সালের ৮ মার্চ আজাদ পত্রিকায় প্রধান শিরোনামে বঙ্গবন্ধুকে ‘শার্দুল সিংহ’ হিসেবে উল্লেখ করে ছাপা হয় সেই ঐতিহাসিক ভাষণের খবর।

বাংলাদেশ, ভারতের নানা পত্রিকায় ছাপা হওয়া প্রতিবেদনের পাশাপাশি প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এই ভাষণের বিশ্লেষণ। পুরো নয় মাস জুড়ে বাংলাদেশের গণহত্যা ও বীরত্বের গল্প প্রকাশিত হয়েছে জাপান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের নানা পত্রিকায়। প্রদর্শনীতে দেখা গেল সেসব পেপার কাটিং।

পঁচিশে মার্চের ভয়াল গণহত্যার নানা দৃশ্য ঠাঁই পেয়েছে প্রদর্শনীতে। গ্যালারি নানা কোণে দেখা মিলবে, অপারেশন সার্চলাইটের নামে পাকবাহিনীর নৃশংতম গণহত্যার নানা আলোকচিত্র।

মেহেরপুরে অস্থায়ী সরকার গঠনের পরে ভারতের বিভিন্ন শিবিরে গেরিলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ, দেশের বিভিন্ন সেক্টরে দামাল ছেলেদের গেরিলা যুদ্ধ, পরে মিত্রবাহিনীর যৌথ অপারেশন পরিচালনার কথাও উঠে আসে নানা আলোকচিত্রে।

এলোট্রি হেলিকপ্টারের মাধ্যমে কুলাউড়া, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দাউদকান্দি, নরসিংদী এলাকায় নানা অপারেশনের বিবরণ উঠে এসেছে কয়েকটি আলোকচিত্রে। ১৪ ডিসেম্বর ঢাকার গভর্নর হাউসে সভা চলাকালে মিত্রবাহিনীর রকেট হামলার ছবিও রয়েছে এই প্রদর্শনীতে।

ভারতের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া হতভাগ্য বাঙালির অবর্ণনীয় দুর্ভোগের চিত্র এসেছে।

একাত্তরের ডিসেম্বর, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মিত্রবাহিনীর কাছে পাকবাহিনীর পরাজয়ের গৌরবাণ্বিত মুহূর্তগুলোর পাশাপাশি তাদের দোসর রাজাকার-আলবদরদের দৌরাত্ম্যও দেখা যায় বিভিন্ন আলোকচিত্রে। বেশ কয়েকজন আলবদরের সচিত্র পরিচয়ও রয়েছে গ্যালারির এক কোণে।

একটি আলোকচিত্রে দেখা যায়, ১৯ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের গলফ কোর্সে পাকবাহিনীর একাংশের আত্মসমপর্ণের দৃশ্য। ১৭ ডিসেম্বর মেজর অশোক তারার তৎপরতায় বন্দিদশা থেকে মুক্তি পায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবার।

১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পথে বঙ্গবন্ধু যাত্রাবিরতি করেন আসামের পালাম বিমানবন্দরে। এক আলোকচিত্রে সেই বিমানবন্দরে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল আলাপচারিতায় একটি মুহূর্তও ফ্রেমবন্দি হয়েছে।

১৯৭২ সালের ১২ মার্চ বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় বাহিনীর বিদায়ী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর নানা মুহূর্তের দেখা মিলে বেশ কয়েকটি ছবিতে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে জাপান সরকারের অবদানের কথা উঠে আসে জাপানের বিভিন্ন সংবাদপত্রে। সেসব পেপার কাটিং ঠাঁই পেয়েছে গ্যালারির দক্ষিণ কোণে।

গ্যালারির এক প্রান্তে রাখা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন দুটি পোস্টার। হলুদরঙা পোস্টারে লাল কালিতে লেখা রয়েছে ‘মৃত্যুর শপথ জল্লাদের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুকে ছিনিয়ে আনবোই’। অন্যটি লন্ডনে গড়ে উঠা বাংলাদেশ গণসংস্কৃতি সংসদের এক আয়োজনের। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর ম্যানচেস্টারে তারা আয়োজন করে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপ্লবী আলেখ্য: অস্ত্র হাতে তুলে নাও’ শিরোনামের এক গীতি আলেখ্য ও নৃত্যনাট্য।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ভারতীয় সেনাদের পূরবী স্টার, সংগ্রাম মেডেল, পরম বীর চক্র, মহাবীর চক্র, অতি বিশিষ্ট সেবা মেডেলসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। পরে ২০১৭ সালে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা বাংলাদেশ সরকারকে যুদ্ধ দিনের স্মারকচিহ্ন হিসেবে উপহার দেয়। পরে ভারতীয় হাই কমিশন এ বছর তা জাতীয় জাদুঘরে হস্তান্তর করে। সে স্মারকগুলো রয়েছে এ প্রদর্শনীতে।

গ্যালারির নানা কোণে ঠাঁই পেয়েছে যুদ্ধ দিনের সমরাস্ত্র। মর্টার, ১০৬ এমএম রিকইলেস এ্যান্টি ট্যাংক, রকেট লঞ্চার,এম এম আরপিজি  এ্যান্টি ট্যাংক, ব্রেন গান মেশিন, স্নাইফার রাইফেল, সেলফ লোডিং রাইফেল,কার্বাইন মেশিন গান. রাইফেল ৭.৬২ এসএম ২এ ইসাপুর, স্টেন গানসহ নানা যুদ্ধাস্ত্রের দেখা মিলবে এই প্রদর্শনীতে।

প্রদর্শনীটি চলবে ২৭ মার্চ পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার জাতীয় জাদুঘরের সাপ্তাহিক বন্ধ।