সুপ্রিম কোর্ট বারে ভোটের লড়াইয়ের অপেক্ষা

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সরকার ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের সাদা ও নীল প্যানেলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2018, 06:18 PM
Updated : 20 March 2018, 06:18 PM

এই নির্বাচনে বুধ ও বৃহস্পতিবার ভোট দিয়ে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেবেন সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীরা। দুদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে।

মোট ৬ হাজার ১৫২ জন ভোটারের ভোট গ্রহণে আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে বসানো হয়েছে বুথ।

ভোট ঘিরে ক’দিন ধরে চলছে উৎসবের আমেজ। মঙ্গলবারও প্রার্থীদের সমর্থনে দলগতভাবে প্রচারপত্র বিলি ও ভোট চাইতে দেখা গেছে আইনজীবীদের।

সমিতির ১৪টি পদের জন্য ৩৩ জন আইনজীবী প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের মনোনীত সাদা প্যানেলে ১৪ জন প্রার্থী। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল বা নীল প্যানেলেরও প্রার্থী ১৪ জন।

এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সভাপতি পদে আরও দুইজন, সম্পাদক পদে একজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সহ-সভাপতি ও সদস্য পদেও একজন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। 

বরাবরের মতো সাদা প্যানেল ও নীল প্যানেলের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে আইনজীবীরা মনে করছেন।

দুই সভাপতি প্রার্থী জয়নাল আবেদীন (বাঁয়ে) ও ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন

সরকার সমর্থক সাদা প্যানেলে সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক মুহাম্মদ ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য আগেও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

বিএনপি সমর্থক সাদা প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সভাপতি জয়নাল আবেদীন; বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যানও একাধিকবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

আওয়ামী লীগ সমর্থক প্যানেল থেকে সম্পাদক প্রার্থী হয়েছেন শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ। বর্তমান সম্পাদক এ এম মাহবুবউদ্দিন খোকনকে এবারও প্রার্থী করেছে নীল প্যানেল, তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব।

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিকে একটি মহল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দলীয় প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। আমরা বিজয়ী হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইনজীবী সমিতিকে প্রকৃত অর্থেই আদালতের সংযোগ সেতু হিসেবে গড়ে তুলব।”

বর্তমানে আইনজীবী সমিতির বেশির ভাগ পদে বিএনপি সমর্থকরা রয়েছেন। ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি ও সম্পাদকসহ মোট ৮টি পদে তারা রয়েছেন।

দুই সম্পাদক প্রার্থী মাহবুবউদ্দিন খোকন (বাঁয়ে) ও শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ

আইনজীবীদের জন্য স্থান সঙ্কট দূর করতে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন ইউসুফ হোসেন।

নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিচার বিভাগ তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে নজিরবিহীনভাবে প্রধান বিচারপতি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন স্বাধীনভাবে কোনো বিচারক কাজ করতে পারছেন না। বিচারাঙ্গনের সব স্তরে এখন ‘এসকে সিনহা’ ভীতি কাজ করছে। এজন্য বিচারকদের সাহস জোগানোর প্রয়োজন আছে।”

তিনি বলেন, “অতীতে বিচার বিভাগের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও কাজ করার চেষ্টা করব। সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবীদের কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করব।”

নির্বাচিত হলে তিনিও আইনজীবীদের জন্য একটি বহুতল ভবন নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্যানেলে সহ-সভাপতি পদে আলাল উদ্দীন ও ড. মোহাম্মদ শামসুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ পদে ড. মোহাম্মদ ইকবাল করিম, সহ-সম্পাদক পদে মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক রাজু ও ইয়াদিয়া জামান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

এ প্যানেল থেকে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ব্যারিস্টার আশরাফুল হাদী, হুমায়ুন কবির, চঞ্চল কুমার বিশ্বাস, শাহানা পারভীন, রুহুল আমিন তুহিন, শেখ মোহাম্মদ মাজু মিয়া, মোহাম্মদ মুজিবর রহমান সম্রাট।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি পদে ড. মো. গোলাম রহমান ভুইয়া ও এমডি গোলাম মোস্তফা, কোষাধ্যক্ষ পদে নাসরিন আক্তার, সহ-সম্পাদক পদে আনজুমান আরা বেগম মুন্নী ও কাজী মো. জয়নুল আবেদীন প্রার্থী হয়েছেন।

এই প্যানেলে সদস্য প্রার্থী হতে লড়ছেন মাহফুজ বিন ইউসুফ, মো. আহসান উল্লাহ, মো. এমদাদুল হক, জাহাঙ্গীর জমাদ্দার, ব্যারিস্টার সাইফুর আলম মাহমুদ, মোহাম্মদ মেহদী হাসান ও সৈয়দা শাহীন আরা লাইলী।

সাদা-নীল প্যানেলের বাইরে স্বতন্ত্র সভাপতি পদে নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন ইউনুছ আলী আকন্দ ও শাহ খসরুজ্জামান। সহ-সভাপতি পদে মো. আব্দুল জব্বার ভুইয়া, সম্পাদক পদে মোহাম্মদ আবুল বাসার ও সদস্য হিসেবে তাপস কুমার দাস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ ওয়াই মশিউজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগ আসেনি।”