ক্যাপ্টেন আবিদের স্ত্রী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে

নেপালের কাঠমান্ডুতে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটির প্রধান বৈমানিক আবিদ সুলতানের শোকার্ত স্ত্রী আফসানা খানমের জীবন সঙ্কটে রয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2018, 03:57 PM
Updated : 19 March 2018, 03:58 PM

দুর্ঘটনায় আবিদ সুলতানের মৃত্যুর পর ‘স্ট্রোক’ হলে রোববার থেকে ঢাকার শেরে বাংলা নগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে ভর্তি করা হয় আফসানা খানমকে। পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে লাইফসাপোর্টে নেওয়া হয় তাকে।

তার অবস্থা জানতে চাইলে ইন্সটিটিউটের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক বদরুল আলম সোমবার রাত সোয়া ৯টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনি লাইফ সাপোর্টে প্রি-কোমায় আছেন। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, দেখি আল্লাহ কী করেন।”

তার চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মঙ্গলবার একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।

অধ্যাপক বদরুলের অধীনেই চিকিৎসাধীন আফসানা।

এর আগে বিকালে ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক সিরাজী শফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “উনার অবস্থা খুবই নাজুক ছিল। রোববার সকালে অপারেশনের পরও উনার অবস্থা খারাপের দিকে ছিল। আমরা উন্নতির আশা করেছিলাম, কিন্তু অবনতি হয়েছে।”

লাইফসাপোর্টে রাখার পরও আফসানার উন্নতির তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি বলে জানান তিনি।

আবিদের বন্ধু মাহিম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার স্ত্রী হাসপাতালে গিয়ে আজ ভাবিকে দেখে এসেছে। তার অবস্থা আরও ক্রিটিক্যাল হয়েছে। তবে ফাইনাল কমেন্ট এখনও করেননি চিকিৎসক।”

আবিদের ভাই মাহমুদ খুরশিদও একজন চিকিৎসক। গত ১২ মার্চ দুর্ঘটনার পর তিনি নেপাল গিয়েছিলেন। আবিদসহ ২৩ জনের লাশের পাশাপাশি সোমবার তিনি ফিরে আসেন দেশে।

দেশে আনার পর আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজা ও লাশ হস্তান্তর হন। মাকে হাসপাতালে রেখে বাবার লাশ আনতে গিয়েছিলেন আবিদ-আফসানার একমাত্র ছেলে তানজিদ সুলতান। 

মাকে হাসপাতালে রেখে বাবার লাশের অপেক্ষায় ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানের একমাত্র ছেলে তানজিদ সুলতান

৭১ জন আরোহী নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ১২ মার্চ দুপুরে বিধ্বস্ত হয় ইউএস-বাংলার ড্যাশ উড়োজাহাজটি। এতে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে চার ক্রুসহ ২৬ জন ছিলেন বাংলাদেশি।

দুর্ঘটনার পর ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, ক্যাপ্টেন আবিদ আহত অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। কিন্তু পরদিন সকালে ইউএস-বাংলার কর্মকর্তা কামরুল নেপালের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ক্যাপ্টেন আবিদের মৃত্যুর খবর দেন।

আবিদের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দুর্ঘটনার খবর শুনে আফসানা অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। পরে বেঁচে আছেন জেনে একটু স্বাভাবিক হন।

“কিন্তু পরদিন যখন জানতে পারলেন উনি মারা গেছেন, তারপর থেকে তিনি একেবারেই ভেঙে পড়েন। আসলে এত বড় শোক সহ্য করতে পারেননি।”

স্বামী-ছেলের সঙ্গে আফসানা খানম

রোববার সকালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে ভর্তি করা হলে একটি মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সহযোগী অধ্যাপক সিরাজী শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে আফসানার অস্ত্রোপচার হয় রোববার। তাকে রাখা হয় আইসিইউতে। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র আবিদ একসময় বাংলাদেশ এয়ারফোর্সের বৈমানিক ছিলেন। নেপালের বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত ড্যাশ ৮-কিউ ৪০০ এয়ারক্রাফটটি ক্যাপ্টেন আবিদই কানাডা থেকে বাংলাদেশে উড়িয়ে এনেছিলেন।

পাঁচ হাজার ঘণ্টা ফ্লাইট চালানোর অভিজ্ঞতা থাকা আবিদের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রশ্ন ওঠে, টানা কাজের কারণে তিনি অবসাদগ্রস্ত ছিলেন কি না বা উড়োজাহাজে ত্রুটি ছিল কি না। ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ দুটো বিষয়ই অস্বীকার করেছে।

বিধ্বস্ত বিমানটি আবিদ সুলতানই চালাচ্ছিলেন

আবিদ সুলতানের ঘনিষ্ঠ এক সহকর্মীর বরাতে একটি পত্রিকার খবরে বলা হয়, দুর্ঘটনার আগের দিনই ইউএস-বাংলায় পদত্যাগপত্র দিয়েছিলেন এই বৈমানিক। তবে তা গৃহীত হয়নি।

এ বিষয়টিও অস্বীকার করেন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। তার দাবি, আবিদের ইস্তফা দেওয়ার ওই খবর সঠিক নয়।

নেপালে ওই দুর্ঘটনায় আবিদের ফার্স্ট অফিসার পৃথুলা রশিদ এবং কেবিন ক্রু খাজা হোসেন ও শারমিন আক্তার নাবিলাও মারা গেছেন।