নেপালে দুর্ঘটনায় আহত সর্বশেষ বাংলাদেশি ঢাকায়

নেপালে চিকিৎসাধীন ইউএস-বাংলা উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় আহত বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বশেষ জনকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে।

সাজিয়া আফরিন ও তারেক হাসান নির্ঝরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2018, 02:52 PM
Updated : 26 March 2018, 12:37 PM

আহত কবির হোসেনকে সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

বিকালে বার্ন ইউনিটের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তার শারিরীক অবস্থা সম্পর্কে জানান চিকিৎসকরা।

বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, কবির হোসেনে দুই পায়েই হাঁটুর নিচ থেকে অনেক জায়গায় ভেঙে গেছে। ডান পায়ের অবস্থা বেশী শোচনীয়। 

“তার পায়ে প্লাস্টিক সার্জারির প্রয়োজন হবে। কারণ পায়ের মাংস হাড় থেকে খোলা; মাংস একেবারে বেরিয়ে গেছে। অর্থোপেডিকস সার্জন একটু পর এসে দেখবেন।"

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের মৃত মোসলেম আলী মাতব্বরের ছেলে কবির হোসেন তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ঢাকার উত্তরখানের কুনিপাড়া এলাকায় নিজের বাড়িতে থাকেন। 

প্রসাধনী সামগ্রীর আমদানিকারক কবির হোসেন ব্যবসার কাজে প্রতি মাসে একাধিকবার দেশের বাইরে যেতেন বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

একই উদ্দেশ্যে ১২ মার্চ ঢাকা থেকে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস২১১ তে করে কাঠমান্ডু যাচ্ছিলেন তিনি। ওই উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ৭১ যাত্রীর মধ্যে ৪৯ জন মারা গেছে; পায়ে ও বুকে গুরুতর আঘাত নিয়ে বেঁচে যান তিনি। 

দুর্ঘটনার পরদিন তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বড় ছেলে আল-হেলাল নেপালে যান। সোমবার বাবার সাথে ঢাকায় ফিরেছেন তিনি।

কবির হোসেনের উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত মেয়ে ফারহানা কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নেপাল থেকে জানানো হয়েছে, আব্বুর পা সারতে আরো একবছর লাগবে। সারবে কি না তারও গ্যারান্টি নেই।"

সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকরা জানান, অর্থোপেডিকস সার্জন ও বার্ন ইউনিটের বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ করে কবির হোসেনের পরবর্তী চিকিৎসা কি হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। 

ইউএস-বাংলার সহায়তার অপেক্ষায় কবিরের পরিবার

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মারাত্মক আহত হওয়ায় মুষড়ে পড়েছে ব্যবসায়ী কবির হোসেনের পরিবার। 

বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুল পড়ুয়া তিন সন্তানকে নিয়ে অকূল পাথারে দিশাহীন স্ত্রী হেনা কবির।

তিনি বলছেন, কবির হোসেনকে প্রায় একবছর ঘরেই হয়তো বসে থাকতে হবে। আত্মীয়-স্বজনদের আর্থিক অবস্থাও ততটা স্বচ্ছল না হওয়ায় ভবিষ্যতে পরিবার নিয়ে তার শঙ্কা বেড়েই চলছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “তিনটি সন্তানই পড়ালেখা করছে। বাড়ির একটা লোন ও আমার মাথার ওপরে আছে। উনিই ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি। কি করব জানি না।”

ইউএস-বাংলা থেকে যদি সহায়তা পান সেক্ষেত্রে পরিবারের ভারণ-পোষণ হয়তো তাৎক্ষনিকভাবে সামাল দিতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।

দুর্ঘটনার পর কবির হোসেন কি ধরনের অভিজ্ঞতার কথা স্ত্রীকে বলেছেন জানতে চাইলে হেনা কবির বলেন, "দুই দিন পর উনার সাথে কথা হয়েছিল। উনি বলেছিলেন, “আমি বেঁচে আছি। আর কাজ করতে পারব কি না জানি না।”

গত ১২ মার্চ কাঠমান্ডুতে ত্রিভুবন বিমানবন্দরে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর এতে আগুন ধরে যায়। যাত্রীদের মধ্যে ১০ বাংলাদেশি বেঁচে গেলেও তাদের প্রায় সবার দেহেই আগুনের ক্ষত রয়েছে।

আহত দশ বাংলাদেশির মধ্যে সোমবার পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন মোট সাতজন। বাকি তিনজনকে নেপাল থেকেই বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।  

যারা দেশে ফিরেছেন তারা সবাই ঢাকা মেডিকেলের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে আলমুন্নাহার অ্যানি ও মেহেদী হাসান অমিয় সোমবার সকালে সাময়িকভাবে বাসায় গিয়েছেন।

সোমবার বিকেলে নিহতদের মধ্যে ২৩ জনের মরদেহ ঢাকায় আনা হয়। এর মধ্যে রয়েছেন আহত আলমুন্নাহার অ্যানির স্বামী ফারুক হোসেন প্রিয়ক ও আড়াই বছরের কন্যা প্রিয়ন্ময়ী তামারার লাশ। স্বামী ও সন্তানের মৃত্যু সংবাদ জানানো হয়নি অ্যানিকে। অ্যানি ও তার পরিবারের সহযাত্রী হয়েছিলেন প্রিয়কের বন্ধু ও মামাত ভাই মেহেদী হাসান অমিয় ও তার স্ত্রী সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা।

বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, অ্যানির পরিবারের সদস্যারা বাসায় নিয়ে স্বামী-সন্তানের মৃত্যু সংবাদ দিতে চেয়েছেন তাকে।

“হয়ত তাদের মনে হয়েছে, এত বড় দুঃসংবাদ বাসায় নিয়ে দিলে তাকে কিছুটা সামলানো যাবে। আমরা বলে দিয়েছি, আবার ফিরে এসে চিকিৎসা নিতে, সিচুয়েশনের উপর নির্ভর করে কি করবে। তবে সে শঙ্কামুক্ত।"

সামন্ত লাল জানান, মেহেদী মৃতদের জানাজায় অংশ নিতে হাসপাতাল থেকে গেছেন আপাতত। তিনি আবার আসবেন।