তিন আইনজীবীরা করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও মো. ইকবাল কবিরের বেঞ্চ সোমবার এ রুল দেয়।
শিশু আইন-২০১৩ এর ৯৭ ধারার অধীনে আইনটির ৮১ ধারার অস্পষ্টতা দূর করতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না এবং তা দূর করতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজীম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান।
রিট আবেদনটি করেন কামাল হোসেন মিয়াজী, আশফাকুর রহমান ও মোহাম্মদ মিফতাউল আলম।
শিশু আইনের ৮১ ধারা উদ্ধৃত করে আজীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ ধারায় বলা আছে, এ আইনের অধীনে কোনো কোনো মামলার ক্ষেত্রে শিশুর পরিচয় বা অন্যান্য তথ্যাদি কোনোভাবেই প্রকাশ করা যাবে না।
“কিন্তু সেখানে একটা অস্পষ্টতাও আছে। সেটা হল, মামলা শুরুর প্রাক্কালে কী হবে? যেমন, কিছু দিন আগে চট্টগ্রামে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার সঙ্গে জড়িত অনেক শিশুর ছবি সংবাদ মাধ্যমে এসেছে, যারা এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। যখন তাদের ছবি সংবাদ মাধ্যমে এসেছে তখনও কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।
“আইনে অস্পষ্টতা থাকাতেই বা আইনে কোনো বাধা না থাকায় অনেক সংবাদ মাধ্যমে তাদের ছবি প্রকাশ করেছে। যার ফলে শিশুগুলো মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়েছে। সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছে। এর ফলে তাদের স্বাভাবিক বিকাশ বিঘ্নিত হয়েছে।”
শিশু আইনের ধারা ৮১
এই আইনের অধীন বিচারাধীন কোনো মামলা বা বিচার কার্যক্রম সম্পর্কে প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম অথবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন শিশুর স্বার্থের পরিপন্থি এমন কোনো প্রতিবেদন, ছবি বা তথ্য প্রকাশ করা যাবে না, যার দ্বারা শিশুটিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শনাক্ত করা যায়।
এই বিধান লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনধিক ১ (এক) বৎসর কারাদণ্ড অথবা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। কোনো কোম্পানি, সমিতি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান বিধান লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন অনধিক ২ (দুই) মাসের জন্য স্থগিত রাখাসহ অনধিক ২ (দুই) লক্ষ টাকা জরিমানা আরোপ করা যাবে।
“এই ধারার অস্পষ্টতা দূর করতে আইনটির ৯৭ ধারায় সরকারকে ক্ষমতা দেওয়া আছে, সে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই আদালত রুল জারি করেছে,” বলেন ব্যারিস্টার আজীম।
শিশু আইনের ধারা ৯৭
এই আইনের কোন বিধান কার্যকর করার ক্ষেত্রে কোনো অস্পষ্টতা দেখা দিলে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের বিধানাবলীর সহিত সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, উক্তরূপ অস্পষ্টতা দূর করিতে পারবে।
রিট আবেদনে মামলার আগে বা পরে বা যে কোনো পর্যায়ে শিশু অপরাধী কিংবা ভিকটিমের কোনো ছবি, নাম-পরিচয়সহ অন্য কোনো তথ্য কোনো সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না বলে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল।
ব্যারিস্টার আজীম বলেন, “আদালত শুধু রুল দিয়েছে। আশা করি, পরবর্তী শুনানিতে নির্দেশনাও আসবে।”
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, তথ্য সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক সচিব, প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।